উদ্ধার: আটক ট্রাক থেকে চলছে বিস্ফোরক নামানোর কাজ। নিজস্ব চিত্র
দু’ট্রাক-ভর্তি বিস্ফোরক (অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট) উদ্ধার করল মহম্মদবাজার থানার পুলিশ। জেলার বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে বোমা উদ্ধারের মাঝেই মঙ্গলবার এই সাফল্য পেল পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, মহম্মদবাজারের গণপুর থেকে ভাড়কাটা যাওয়ার রাস্তায় এ দিন ভোরে বিস্ফোরকের বস্তাবোঝাই ট্রাকটিকে ধরে পুলিশ। পরে দুপুরের পর তালবাঁধের পাথরচাল থেকে আটক করা হয় দ্বিতীয় ট্রাকটিকে। সেই সময় এক ব্যবসায়ীর গোডাউনে মাল খালাস করা হচ্ছিল। ট্রাক দু’টি মিলিয়ে ৭০০ বস্তারও বেশি বিস্ফোরক রয়েছে বলে অনুমান পুলিশের। জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার বলছেন, ‘‘বিস্ফোরক নিয়ে ট্রাক দু’টি মহম্মদবাজারে এসেছিল। একটি ট্রাকের চালক-খালাসি পালিয়ে গেলেও চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কোথা থেকে, কী ভাবে, কী উদ্দেশে বিস্ফোরক আনা হচ্ছিল তা দেখা হচ্ছে।’’
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট জমির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সার হিসেবে ব্যবহার হয়। তেমনই ডিটোনেটর ও জিলেটিন-স্টিক দিয়ে বিস্ফোরণের সময় তীব্রতা কয়েক গুণ বাড়াতে ব্যবহৃত হয় এই রাসায়নিক। পুলিশ জানাচ্ছে, মহম্মদবাজার এলাকায় প্রচুর পাথর খাদান রয়েছে। পাথরের চাঁই ভাঙতে হামেশাই বিস্ফোরণের প্রয়োজন হয়। ফলে এই এলাকায় অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট পাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।
ভোরে নাকা চেকিং করার সময়ই বিস্ফোরক বোঝাই দশ চাকার ট্রাকটি প্রথম নজরে আসে। পুলিশ দেখে ট্রাকটি দ্রুত গণপুর থেকে ভাড়কাটা যাওয়ার রাস্তা ধরলে পিছু নেয় পুলিশও। শেষ পর্যন্ত ট্রাককে জঙ্গলঘেরা রাস্তায় নামিয়ে চম্পট দেয় চালক-খালাসি। দুপুরে পুলিশ ফের খবর পায় পাথরচাল গ্রামে বিপত্তারণ মণ্ডল নামে এক ব্যবসায়ীর গোডাউনে বিস্ফোরক বোঝাই ট্রাক খালাস করা হচ্ছে। বমাল চালককে ধরা হয়। তবে ব্যবসায়ী পলাতক।
এখন পরিবেশ আদালতের ছাড়পত্র না পাওয়ায় সরকারি ভাবে অধিকাংশ খাদান বন্ধ। তা হলে এত অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট কী কাজে লাগবে? আদিবাসী গাঁওতা নেতা রবীন সরেন বলছেন, ‘‘কে বলল খাদান বন্ধ। প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদতেই চলছে অধিকাংশ খাদান। অবৈধ হলেও অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট তাই কাজের জিনিস।’’ আদিবাসী গাঁওতার আরও দাবি, রামপুরহাট ১ ব্লকের মাসড়া ও মহম্মদবাজারের ভাঁড়কাটা পঞ্চায়েত এলাকায় সীমান্ত ঘেঁষা সিয়ানবান্দা গ্রামে দীর্ঘ দিন ধরেই অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের কারবার চলে। বেশ কয়েকটি পরিবার ওই কারবারে যুক্ত। প্রশাসন জানে না এমনও নয়। বহুবার সংগঠনের পক্ষ থেকে সে কথা প্রশাসনকে বলা হয়েছে। নাম না প্রকাশের শর্তে এলাকাবাসীর একাংশ জানাচ্ছেন, শুধু পাথরখাদান নয়। এই রাসায়নিক সীমানা পেরিয়ে ঝাড়খণ্ডেও পৌঁছে যায়। হতে পারে মাওবাদীদেরও যোগ রয়েছে। এ দিনই আইন মেনে পাথর খাদানগুলি খোলার জন্য বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখতে একটি প্রশাসনিক বৈঠক হয় সিউড়িতে।