প্রলোভনে না নির্যাতিতার, ধর্ষণে জেল

মামলার সরকার পক্ষের আইনজীবী অসীমকুমার রায় জানান, মেয়েটি খুবই দুঃস্থ পরিবারের। কিন্তু আত্মসম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চেয়ে আইন ব্যবস্থার উপরে আস্থা রেখে লড়াই চালিয়ে গিয়েছ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খাতড়া শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:৪৩
Share:

সায়ন বাউরি। নিজস্ব চিত্র

সহবাস করেও প্রথমে বিয়ে করতে রাজি হয়নি যুবক। নাবালিকার পরিবার মামলা করায় জেল নিশ্চিত বুঝে ছেলের পরিবার বিয়ে দিতে রাজি হয়েছিল। এমনকি লাখ দেড়েক টাকা ক্ষতিপূরণও দিতে চেয়েছিল। কিন্তু মন বদলাননি দিনমজুর পরিবারের নির্যাতিতা। শনিবার সেই মামলায় সাত বছরের জেল হল অভিযুক্ত বছর তেইশের সায়ন বাউরির। ইঁদপুর থানার চৌকিঘাটা গ্রামে তার বাড়ি।

Advertisement

এ দিন খাতড়া আদালতে যুবকের বাবা আদিত্য বাউরি স্বীকার করেন, ‘‘বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার জন্য নাবালিকার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। ক্ষতিপূরণ বাবদ দেড় লক্ষ টাকা ও মেয়েটিকে পুত্রবধূ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে তাঁরা রাজি হননি।’’ মামলার সরকার পক্ষের আইনজীবী অসীমকুমার রায় জানান, মেয়েটি খুবই দুঃস্থ পরিবারের। কিন্তু আত্মসম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চেয়ে আইন ব্যবস্থার উপরে আস্থা রেখে লড়াই চালিয়ে গিয়েছ। কোনও প্রলোভনে নমনীয় হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘আদালত নির্যাতিতাকে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তিন লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।’’ সরকার থেকে নির্যাতিতাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ খাতড়া আদালতে নজিরবিহীন বলে জানাচ্ছেন আইনজীবীরা।

সরকার পক্ষের আইনজীবী জানান, খাতড়া আদালতের অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক উৎপল মিশ্র বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নাবালিকার সঙ্গে সহবাস করায় ধর্ষণ ও পকসো আইনের ৪ ধারায় সায়নের সাত বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাস জেলের নির্দেশ দেয় আদালত। ৪১৭ ধারায় ১ বছর জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১ মাস জেল। এই তিনটি মামলার সাজা একই সঙ্গে চলবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

Advertisement

সরকার পক্ষের আইনজীবী জানান, ইঁদপুর থানা এলাকার বাসিন্দা ওই নাবালিকার অভিযোগ, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যুবকটি তাঁর সঙ্গে প্রায় এক বছর সহবাস করে। পরে বিয়ে করতে অস্বীকার করে। নাবালিকার মায়ের অভিযোগ, গত বছরের ৪ মার্চ তাঁরা জানতে পারেন, ওই যুবক অন্যত্র বিয়ে করতে যাচ্ছে। যোগাযোগ করলে সে জানিয়ে দেয়, ওই নাবালিকাকে বিয়ে করবে না। ৭ মার্চ ইঁদপুর থানায় যুবকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নাবালিকার মা। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

সরকার পক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘‘এই মামলায় নির্যাতিতার পক্ষে নজিরবিহীন রায় দিয়েছেন বিচারক। তাঁর অবস্থা বিবেচনা করে নির্যাতিতাকে তিন লক্ষ টাকা রাজ্য সরকারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।’’

আসামিপক্ষের আইনজীবী চঞ্চল রায় দাবি করেছেন, তাঁর মক্কেল নির্দোষ। এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে কিনা তা নথিপত্র দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেওয়ায় তিনিও খুশি বলে জানিয়েছেন। খাতড়া অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক তন্ময় কর বলেন, ‘‘নির্যাতিতাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার রায় খাতড়া আদালতে এটাই প্রথম। ফলে এই ধরণের রায়ে আমরা খুশি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন