রাস্তার ধারে অসুস্থ বা ক্ষুধার্থ কুকুরদের অভিভাবক তপনবাবু। —ফাইল চিত্র।
রাস্তার কুকুরদের আপনজন তিনি। পুরসভা তাঁর সারমেয় স্নেহের জন্য পুরস্কৃতও করেছে। প্রতিবেশীদের অনেকেই গর্বিত সাঁইথিয়ার রবীন্দ্রপল্লির প্রৌঢ় তপন ঘোষকে নিয়ে। রাস্তার ধারে অসুস্থ বা ক্ষুধার্থ কুকুরদের অভিভাবক তপনবাবু। ছোটখাটো কাটা-ছেঁড়ায় ব্যান্ডেজ বাঁধা থেকে ইঞ্জেকশন দেওয়া সবটাই শিখেছেন কুকুরদের শুশ্রুষা করতে গিয়ে।
সকাল থেকে বেরিয়ে এপাড়া-ওপাড়া ঘুরে দেখেন কোন কুকুরের আঘাত লেগেছে বা কার খাওয়া জোটেনি। কোথাও আবার চা কিংবা খাবারের দোকানের সামনে ভিড় করা কুকুরকে তাড়াতে দোকানদাররা কুকুরদের গায়ে গরম জল ঢেলে দেন বা লাঠিপেটা করেন। তপনবাবু অবশ্য একদমই বরদাস্ত করতে পারেন না কুকুরদের প্রতি এই নির্দয় ব্যবহার। স্থানীয়রা জানান, বয়স্ক এবং অসুস্থ কুকুরদের জন্য বাড়ি থেকে ছাঁট মাংসের ঝোল আর ভাত রান্না করে নিয়ে যান তিনি। তাঁর কুকুরদের প্রতি স্নেহের কথা শুনে মাংস বিক্রেতারাও কম দামে ছাঁট মাংস দেন। কুকুরেরাও তার ভালোবাসায় আপ্লুত। তাঁকে দেখলেই গোল করে ঘিরে লেজ নাড়তে শুরু করে। নিজেদের ভাষায় কৃতজ্ঞতা জানায়।
বছর সাতেক আগে সাতটি কুকুরকে শুশ্রুষার জন্য বাড়িতে এনে রেখেছিলেন তপনবাবু। তারাও এখন ঘোষ পরিবারের সদস্য সহাস্যে জানান তিনি। তাঁর এই ঘরের খেয়ে পথের কুকুরের পরিচর্যা নিয়ে প্রতিবেশী টুম্পা পাল, শান্তি ভট্টাচার্যরা বলেন, ‘‘আমরা বাড়িতে একটা কুকুর ঢুকলে তাড়িয়ে দিই। কিন্তু তপনবাবু কত যত্ন করে কুকুরগুলোর পরিচর্যা করেন, রাস্তার কুকুরকে খাওয়ান।’’ প্রৌঢ়ের স্ত্রী সুশীলাদেবীও বলেন, ‘‘কুকুরের সেবাই ওঁর ধ্যানজ্ঞান। ওঁর দেখাদেখি আমরাও রাস্তার কুকুরদের প্রেমে পড়ে গিয়েছি।’’
একসময় ইটের ব্যবসা করতেন তপনবাবু। এখন অখন্ড অবসর। তাই ঘরে বসে না থেকে নিজেকে ব্যস্ত রাখার পথ খুঁজে নিয়েছেন রাস্তার কুকুরদের শুশ্রুষা করার মধ্যে দিয়ে। সাঁইথিয়া পুর এলাকায় কুকুরের খোঁজে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরে বেড়ান তিনি।
পশু চিকিৎসকের পরামর্শ মতো অসুস্থ কুকুরের চিকিৎসা করেন। নিজেও পশু চিকিৎসা সংক্রান্ত বইপত্র পড়েছেন। শিখে নিয়েছেন ইঞ্জেকশন দেওয়াও। বাড়াবাড়ি কিছু হলে অবশ্য টোটো ভাড়া করে কুকুরদের নিয়ে পৌঁছোন সিউড়ির সরকারী পশু চিকিৎসালয়ে। শুধু তাই নয়, খাওয়ার পরও তাকে সহজে আসতে দেয় না।
সম্প্রতি তাঁকে পুরস্কৃত করেছে সাঁইথিয়া পুরসভা। সাঁইথিয়ার চেয়ারম্যান বিপ্লব দত্ত বলেন, ‘‘তপনবাবু রাস্তার কুকুরদের জন্য যা করেন তার জন্যই তাঁকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।’’ একই মন্তব্য রাজ্য প্রাণী ক্লেশ নিবারণী সমিতির জেলা সদস্য উর্মিলা গঙ্গোপাধ্যায়েরও। তিনি বলেন, ‘‘তপনবাবুর মহানুভবতা অনুসরণযোগ্য।’’