ছাদনাতলায় বিয়ে রুখল চাইল্ডলাইন

শেষ পর্যন্ত ঘণ্টা দুয়েক ধরে নাবালিকা কনের বাড়ির লোকেদের বুঝিয়ে শেষ পর্যন্ত বিয়েটি বন্ধ করে প্রশাসন। সোমবার রাতে ওন্দা থানা এলাকার ঘটনা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:০৩
Share:

সানাই বাজছিল। আত্মীয়স্বজনেরাও একে একে আসছিলেন। বরও বসে পড়েছিলেন ছাদনাতলায়। এমন সময়ে হঠাৎ সেখানে হাজির পুলিশ।

Advertisement

তাঁদের দেখেই চমকে ওঠেন সবাই। হুলস্থূল পড়ে যায়। গোলমালের টের পেয়েই বিয়ের আসর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় বরকে। পুলিশের পিছন পিছন ঢোকে চাইল্ডলাইনের কর্মীরা ও ব্লক অফিসের কর্মীরা। তাঁরা নিজেদের পরিচয় দিয়ে, নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করতে এসছেন বলে জানাতেই কান্নার রোল পড়ে যায়।

শেষ পর্যন্ত ঘণ্টা দুয়েক ধরে নাবালিকা কনের বাড়ির লোকেদের বুঝিয়ে শেষ পর্যন্ত বিয়েটি বন্ধ করে প্রশাসন। সোমবার রাতে ওন্দা থানা এলাকার ঘটনা।

Advertisement

১৮ বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া বৈধ নয়, তা নানা ভাবে প্রচার করছে পুলিশ, প্রশাসন ও চাইল্ড লাইন। বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে অনেক জায়গাতেই সক্রিয় কন্যাশ্রী ক্লাবও। কিন্তু তার পরেও বিভিন্ন জায়গায় নাবালিকা বিয়ে চলছেই। ওন্দা থানার ওই গ্রামের ঘটনা ফের তা সামনে এনে দিল।

চাইল্ড লাইন সূত্রের খবর, ওই নাবালিকা একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। বয়স সতেরো বছর। সোমবার রাতে ওই কিশোরীর বিয়ের আসর বসেছিল।

সোমবার সন্ধ্যায় চাইল্ড লাইনের ১৯০৮ হেল্পলাইনে ফোন যায়, এক নাবালিকার বিয়ে ঠিক হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে চাইল্ড লাইনের কর্মী রুমা মণ্ডল ও শিবদাস ঘটক ওন্দা থানা ও ব্লক অফিসে খবর দিয়ে সাহায্য চাই। তাঁরা যখন কনের বাড়িতে পৌঁছন, ততক্ষণে বিয়ের আসর জমে গিয়েছে।

রাত তখন আটটা। বর ও বরযাত্রীরা হাজির। রান্নাবান্নাও তৈরি। নিমন্ত্রিতেরা উপহার নিয়ে আসছিলেন। শীতের বেলা বলে সাত তাড়াতাড়ি খাওয়াদাওয়াও শুরু হয়ে গিয়েছিল। এরই মধ্যে পুলিশ কর্মীদের দেখে ছন্দপতন।

চাইল্ড লাইনের জেলা কো-অর্ডিনেটর সজল শীল বলেন, ‘‘কনের বাড়ির লোকজন কিছুতেই বিয়ে বন্ধ করতে রাজি হচ্ছিলেন না। কম বয়সে মেয়ের বিয়ে দিলে, কী কী ক্ষতি হতে পারে, তাঁদের তা বোঝানো হয়। এমনকী বাল্যবিবাহ হলে, আইনে কী নিদান রয়েছে, তাও জানানো হয়। বহু চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত তাঁরা বিয়ে বন্ধ করতে রাজি হন।’’ তিনি জানান, মেয়ের বাবা ক্ষুদ্র চাষি। তিনি জানিয়েছে, হাতের কাছে সুপাত্র পেয়ে তিনি মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি মুচলেকা দিয়ে জানিয়েছেন, আঠারোর আগে মেয়ের বিয়ে তিনি দেবেন না।

অন্যদিকে, মঙ্গলবার সারেঙ্গা ও রানিবাঁধ থানা এলাকাতেও আরও দু!টি নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করা হয়। চাইল্ড লাইন সূত্রে জানা গিয়েছে, সারেঙ্গার এক নাবালিকাকে মেদিনীপুরে নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। অভিযোগ পেয়ে ওই নাবালিকার বাড়িতে গিয়ে তার অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে বিয়ে বন্ধ করা হয়।

আবার, রানিবাঁধের এক নাবালিকার দেখাশোনা পাকা হয়ে গিয়েছিল। খবর পেয়ে চাইল্ড লাইনের আধিকারিকেরা তার বাড়ি গিয়ে বিয়ে বন্ধ করেন। বাঁকুড়া চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর জানান, ওই দুই নাবালিকার পরিবারের কাছ থেকেই প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে তাঁরা মেয়ের বিয়ে দেবেন না বলে মুচলেকা দিয়ে জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন