মাধ্যমিক পাসেই পাহাড় জয় সাহেবের

জন্ম থেকেই পোলিও আক্রান্ত সাহেব। হাঁটাচলা দূরের কথা, ভাল করে পেন-পেনসিল ধরার ক্ষমতাও নেই তাঁর। প্রথম দিকে তাঁকে স্কুলে ভর্তি করা নিয়ে টানাপড়েনে ছিলেন বাবা, মা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৮ ০২:৪৫
Share:

বিজয়ী: সাহেব শেখ। নিজস্ব চিত্র

নম্বরের নিরিখে হয়তো অন্যদের থেকে অনেক পিছিয়ে তিনি। কিন্তু চলাফেরার ক্ষমতাহীন সাহেব শেখের কাছে মাধ্যমিক পাস করাটাই এভারেস্ট জয়ের সামিল।

Advertisement

জন্ম থেকেই পোলিও আক্রান্ত সাহেব। হাঁটাচলা দূরের কথা, ভাল করে পেন-পেনসিল ধরার ক্ষমতাও নেই তাঁর। প্রথম দিকে তাঁকে স্কুলে ভর্তি করা নিয়ে টানাপড়েনে ছিলেন বাবা, মা। পরে কয়েক জনের পরামর্শে ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করান। সেই সময় কোলে করে তাঁকে স্কুলে নিয়ে যেতে হত। সাহেব বাড়িও ফিরতেন সে ভাবেই। পরে সাঁইথিয়া টাউন হাইস্কুলে তাঁকে ভর্তি করানো হয়। সেই সময় স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সাহেবকে একটি তিন-চাকার সাইকেল দেয়। সেই সাইকেলেই স্কুলে যাতায়াত করেন তিনি। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় প্রতি বছর পরীক্ষা দিতে পারেননি। জেদেই সব জেতার পণ ছিল সাহেবের। ২০১৭ সালে, ২৩ বছর বয়সে ওই স্কুল থেকে প্রথম বার মাধ্যমিকে বসেন তিনি। কোনও ‘রাইটার’ ছাড়া পরীক্ষা দিয়ে দু’টি বিষয়ে অকৃতকার্য হন। তবুও ভেঙে পড়েননি। এ বারও ‘রাইটার’ ছাড়া সমস্ত বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে ১৯৯ নম্বর পেয়ে পাস করেন।

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক উজ্বলকুমার সাহা বলেন, ‘‘ভাল করে কলম ধরতে পারে না। তবু নিজে লিখে পরীক্ষা দেবে বলে রাইটার চায়নি। ওর মতো একটি ছেলের পক্ষে প্রতিবন্ধকতা জয় করে পাশ করা কোনও পাহাড় পেরনোর চেয়ে কম নয়।’’ তিনি জানান, এ বারে সাঁইথিয়া শহরের স্কুলগুলির মধ্যে মাধ্যমিকে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে তাঁদের স্কুলেরই আঙ্কেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু আঙ্কেশের সাফল্যের চেয়ে সাহেবের সাফল্য তাঁদের কাছে কম কিছু নয়।

Advertisement

একই বক্তব্য স্কুলের করণিক কৌস্তভ ভাণ্ডারির। তিনি বলেন, ‘‘শুধু শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নয়, সাহেবের ক্ষেত্রে অনটনও বড় অন্তরায় ছিল। সব উপেক্ষা করে ও যে পরীক্ষায় পাস করতে পারবে অনেকে ভাবতেই পারেননি।’’ সাঁইথিয়ার হেমন্ত বসু পল্লিতে সাহেবদের অভাবের সংসার। বাবা কাবলু শেখ রাজমিস্ত্রি। মা রিনাবিবি গৃহবধূ। টাকার অভাবে সাহেবের এক ভাই ও বোন স্কুল ছেড়ে দিয়েছিল। ওই পরিবারে সাহেবই প্রথম মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরলেন। কাবলু শেখ বলেন, ‘‘ভাবতে পারিনি ও মাধ্যমিক পাস করতে পারবে। নিজের জেদেই ও পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে।’’ ভবিষ্যতে চাকরি করে তাঁরই মতো প্রতিবন্ধীদের সাহায্য করতে চান সাহেব। প্রত্যয়ী গলায় তিনি জানান, ‘‘যত কষ্টই হোক, এক দিন লক্ষ্যে পৌঁছবই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন