কোপাইয়ের মন বুঝতে যাত্রা অধ্যাপকের

নদীর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক এত বছরে কতটা বদলালো— তা দেখতে ২৫ বছর পর ফের কোপাইয়ের উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার পথ হাঁটলেন বিশ্বভারতীর ভূগোলের অধ্যাপক তথা নদী-গবেষক মলয় মুখোপাধ্যায়। সঙ্গে তাঁর বার্তা, নদীকে ভালবাসুন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৩৮
Share:

অভিযান: কোপাইয়ের তীরে অভিযাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র

নদীর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক এত বছরে কতটা বদলালো— তা দেখতে ২৫ বছর পর ফের কোপাইয়ের উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার পথ হাঁটলেন বিশ্বভারতীর ভূগোলের অধ্যাপক তথা নদী-গবেষক মলয় মুখোপাধ্যায়। সঙ্গে তাঁর বার্তা, নদীকে ভালবাসুন।

Advertisement

২৪ ডিসেম্বর ঝাড়খণ্ডের খাজুরি থেকে যাত্রা শুরু করেন মলয়বাবু। সঙ্গে ছিলেন আরও কয়েক জন সঙ্গী। কোপাইয়ের উৎস ওই গ্রামের কাছেই। সেখানে তার পরিচিতি শাল নদী। বিনুরিয়া গ্রামের পর থেকে ওই নদীর নাম বদলায় কোপাইয়ে। সেই নামকরণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। মলয়বাবু জানান, ৩১ ডিসেম্বর মিলনপুরে শেষ হবে তাঁদের অভিযান। সেখানে কোপাই মিলেছে বক্রেশ্বর নদে।

মলয়বাবুর বক্তব্য, সংখ্যাতত্ত্বের মাপকাঠিতে নদী নিয়ে গবেষণা বা বিশ্লেষণ করা যায় ঠিকই, কিন্তু মানুষের সঙ্গে নদীর সম্পর্ক বুঝতে ঘুরতে হবে তার তীরে। কথা বলতে হবে নদী-ঘেঁষা গ্রামের মানুষের সঙ্গে। শুনতে হবে তাঁদের কথা। সেই ধারনা থেকেই ১৯৯১ সালে কোপাই নদীর উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত হেঁটে ঘুরেছিলেন তিনি। সঙ্গী ছিলেন তাঁর স্ত্রী সুতপা, শিশুকন্যা, ছাত্রছাত্রী মিলিয়ে ১৪-১৫ জন। ভেবেছিলেন অভিজ্ঞতার কথা লিখবেন বইয়ে। তা লিখেছিলেনও। নদী নিয়ে মানুষ কী ভাবছে, সচেতনতা, তীরের মন্দির-মসজিদের স্থাপত্যশৈলী, কুটির শিল্প, শিক্ষা পরিকাঠামো, বাড়িঘরের গঠন— এমন নানা বিষয়ে সে বার সমীক্ষা করা হয়েছিল।

Advertisement

২৫ বছর পর ফের একই ধরনের অভিযান কেন? বিশ্বভারতীর অধ্যাপক বলেন, ‘‘এত বছর পর যান্ত্রিকতা, আধুনিকতা ও অগ্রগতির জেরে নদী-মানুষের সম্পর্কে কতটা পরিবর্তন হয়েছে, প্রকৃতিগত বদলই বা কত— তা খুঁজে দেখতেই এই অভিযান। এ বার মলয়বাবুর সঙ্গী ৪০ জন। তালিকায় রয়েছেন পড়ুয়া, গবেষক, বিভিন্ন কলেজ ও স্কুলের শিক্ষক। মলয়বাবু জানান, ২৪ ডিসেম্বর কোপাইয়ের উৎসে একটি শিলা স্থাপন করে অভিযান শুরু করা হয়েছিল। দিনে তাঁরা হাঁটছেন। দুপুরে খাওয়ার পর ফের পথচলা। রাতে তাঁবু খাটিয়ে বিশ্রাম। তারই মধ্যে চলছে নদী-ঘেঁষা জনপদে ঢুকে সমীক্ষা। মঙ্গলবার অভিযানে সামিল দলের সদস্যদের সঙ্গে দেখা হল দুবরাজপুরের কুখুটিয়ায়। শাল নদীর কাছে কুখুটিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এ দিন সকালে লোকপুর থেকে নদী বরাবার ১৪ কিলোমিটার হেঁটে যখন তাঁরা দুপুরের খাবার খাচ্ছেন— সেই সময়।

চোখমুখে ক্লান্তি থাকলেও অভিযান নিয়ে তৃপ্তির ছাপ স্পষ্ট। ভূগোলে স্নাতকোত্তরের পর এখন বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন রনিগঞ্জের পায়েল ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘এ এক ভিন্ন স্বাদের অভিজ্ঞতা।’’ হেতমপুর কলেজের ভূগোল শিক্ষক সুরজিৎ দে-র কথায়, ‘‘আগের বার নদী বরাবর হাঁটার সৌভাগ্য হয়নি। একটা অন্য রকম কাজের সাক্ষী থাকলাম।’’ প্রথম থেকে অভিযানে যোগ দিতে না পরালেও এ দিন ওই দলে সামিল হয়েছেন নানুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক অরজিৎ দাস।

মলয়বাবুর আক্ষেপ, আধুনিকতার ছোঁয়ায় নদীর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক বেশ কিছুটা কমেছে। আত্মীয়তাও কমেছে। সব চেয়ে বিপজ্জনক প্রবণতা নদীর পাশে ইট ভাটা তৈরি করা। এতে নদীর ক্যাচমেন্ট এলাকায় (বৃষ্টির জল যে এলাকা থেকে নদীগর্ভে পড়ে) গভীর গর্ত তৈরি হচ্ছে। বাঁধ তৈরি করা হয়েছে অনেক জায়গায়। বালি তোলা হচ্ছে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে। এ সবে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ নষ্ট হচ্ছে। বন্যার ভয় বাড়ছে। বনসৃজন করেও এই বিপদ আটকানো যাবে না।

গত বার ওই অভিযানে সামিল ছিলেন হেতমপুর রাজ উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সন্ধ্যা দাস। তিনি বলেন, ‘‘এই ছোট নদীতে যে ভাবে বাঁধ দেওয়া হয়েছে তা দেখে মন খারাপ হয়ে গিয়েছে।’’

এ দিন বিকেলে কুখুটিয়া থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে সন্ধ্যাদেবীর স্কুলেই রাত্রিবাসের কথা অভিযাত্রী দলের। কিন্তু তার আগে স্কুল পডুয়াদের সঙ্গে নদী-বিষয়ক আলোচনা করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন