থিমে নারীশক্তি, বার্তা ভ্রূণহত্যায়

মণ্ডপ জুড়ে থিমের মাধ্যমে কন্যাভ্রূণ হত্যা, নারীদের প্রতি নির্যাতনের মতো বিষয়গুলি দেখানো হয়েছে। তেমনই খেলোয়াড় পিভি সিন্ধু, মহাকাশচারী কল্পনা চাওলা সহ বিখ্যাত মহিলাদের ছবি ‘রাইটআপ’ সহ তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

বক্রেশ্বর শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৫০
Share:

বক্রেশ্বরের প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র

এক দিকে নারীশক্তির আরাধনা। অন্য দিকে, কন্যা সন্তানকে অবহেলা, কন্যাভ্রূণ হত্যা, নারী নির্যাতন। পরস্পর বিরোধী অথচ অনভিপ্রেত এই বিষয়টা ভাবিয়েছিল বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের শারদোৎসব সমিতির উদ্যোক্তাদের। সমাজকে বার্তা দিতে উদ্যোক্তারা তাই এ বার তাঁদের পুজোর থিম করেছেন ‘নারী শক্তি, নারী ভক্তি’।

Advertisement

মণ্ডপ জুড়ে থিমের মাধ্যমে কন্যাভ্রূণ হত্যা, নারীদের প্রতি নির্যাতনের মতো বিষয়গুলি দেখানো হয়েছে। তেমনই খেলোয়াড় পিভি সিন্ধু, মহাকাশচারী কল্পনা চাওলা সহ বিখ্যাত মহিলাদের ছবি ‘রাইটআপ’ সহ তুলে ধরার চেষ্টা হয়েছে। তবে বাইরের কোনও শিল্পী নয়, ডেকরেটরের সাহায্য নিলেও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থিম ফুটিয়ে তোলার দায়িত্ব পালন করেছেন বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মী ও তাঁদের ঘরনীরা। তবে থিম ভাবনার সঙ্গে দেবীমূর্তিকে মিলিয়ে দেওয়া হয়নি। প্রতিমা এখানে সাবেক রীতির।

বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের শারদোৎসব সমিতির পুজো এ বার ২৯ তম বর্ষে পড়ল। উদ্যোক্তারা জানালেন, তাঁদের কাজের ধরনের সঙ্গে লম্বা ছুটি খাপ খায় না। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগও কম। তাই বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে ওঠার পর থেকে নিয়ম করে এই দুর্গাপুজো পুজো হচ্ছে। আন্তরিকতাও বেড়েছে। বর্তমানে পুজোর সঙ্গে যুক্ত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৮৫০ জন কর্মী ও তাঁদের পরিবার। কমিটির সম্পাদক রূপকুমার মালিক, যুগ্ম সম্পাদক অর্জুন দেবনাথ, কোষাধ্যক্ষ জ্যোতির্ময় রাণারা বলছেন, ‘‘এমনিতে জাঁক করে পুজো হত। দু’বছর হল থিম যুক্ত হয়েছে। উদ্দেশ্য দেবীর আরাধনার সঙ্গে সমাজ সচেতনতার বার্তা দেওয়া। এক দিকে আমরা মাতৃরূপে দেবীদুর্গার আরাধনা করছি। সেই সময় মেয়েদের প্রতি অন্যায় অত্যাচার অবহেলার ঘটনা প্রতিনিয়ত সামানে আসছে। সেটা বেদনাদায়ক। তাই ‘নারী শক্তি, নারী ভক্তি’ থিমের ভাবনা নেওয়া হয়েছে। আলোকসজ্জার পরিকল্পনাও আমাদের নিজস্ব। কাজের ফাঁকে সে কাজ করতে হয়েছে।’’

Advertisement

থিম আর প্রতিমায় আকর্ষণ শেষ হচ্ছে না। রয়েছে ‘দেবীবন্দনা’ নামক একটি নৃত্যনাট্য। তাতে যোগ দিচ্ছেন কর্মীদের ঘরনীরা। রয়েছে বাচ্চাদের নানা অনুষ্ঠান। গুজরাতের গার্বা, ডান্ডিয়া নাচ থেকে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, দশমীর সকালে সমবেত সিঁদুর খেলা থাকছে। ‘‘সাবেকিয়ানার সঙ্গে আধুনিকতা, প্রাদেশিকতার বিভেদ মুছে পুজোর আনন্দকে পুরোপুরি উপভোগ করতে যা কিছু প্রয়োজন সবই হাজির’’—বলছিলেন সরবী মুখোপাধ্যায়, তানিয়া মালিক, আইরীন কবীর, অনিতা রাণার মতো তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মীদের গৃহিনীরা। তাঁদের সংযোজন, ‘‘এই কটা দিন সকলে একটা বৃহত্তর পরিবার।” সাংস্কৃতিক দিকটির পরিকল্পনায় রয়েছেন শঙ্কর মুখোপাধ্যায়, রফিওজ্জামা। মণ্ডপে সজ্জা শেষ পঞ্চমীর দিনেই। সপরিবার দেবীদুর্গা বেদীতে আসীন। স্কুলে ছুটি পড়ে যাওয়ায় আনন্দ আর ধরে না শিখাদিত্য, সুদেষ্ণা, সৃজিতার মতো কচিকাঁচাদের।

২০১২ সাল থেকে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অফিসার্স ক্লাব আয়োজিত আরও একটি দুর্গাপুজো রয়েছে। প্রথম দু’এক বছর ততটা না জমলেও ২০১৪ সাল থেকে ওই পুজোকে ঘিরে উন্মাদনা তৈরি হয়েছে। বছর চারেক আগে নতুন অফিসার্স ক্লাব বিল্ডিং তৈরির পরে পুজো সেখানে সরে আসলে সেই মাত্রা আরও বেড়েছে। থিম হচ্ছে সেখানেও। এ বারে পুজোর থিম জমিদার বাড়ির ঠাকুর দালান। তবে দুটি পুজোয় বিভেদ নেই। বরং দুটি পুজোকে ঘিরে সামনের কটা দিন আনন্দে মেতে উঠতে তৈরি বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উপনগরীর বাসিন্দারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন