কাল্পনিক: মণ্ডপে রেল স্টেশন। ময়ূরেশ্বরের কোটাসুরে। নিজস্ব চিত্র
হাতখরচের টাকা বাঁচিয়ে টাকা ১৭ বছর ধরে সরস্বতী পুজোয় নিজের হাতে নিত্যনুতন থিম-এ এলাকায় সাড়া ফেলেছে ময়ূরেশ্বরের কোটাসুর সোনালী সঙ্ঘ। এ বার উদ্যোক্তারা তুলে ধরেছেন ট্রেন-সহ আস্ত একটা স্টেশন। মণ্ডপ দেখতে তাই জমছে ভিড়।
উদ্যোক্তারা জানান, এক সময় ওই গ্রামে অন্য পুজো হলেও, সরস্বতী পুজো হতো না। সরস্বতী আরাধনা হতো শুধু স্কুলে। কিন্তু পাড়ার মহিলাদের সকলে সেখানে অঞ্জলি দিতে যেতে পারতেন না। গ্রামে তা নিয়ে ক্ষোভ ছিল। তা দূর করতেই ১৭ বছর আগে কার্তিক মণ্ডল, বাপ্পাদিত্য মণ্ডল, সুজয় চক্রবর্তীদের মতো কয়েক জন স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া গ্রামের মদনেশ্বর শিবমন্দির সংলগ্ন এলাকায় সরস্বতী পুজো শুরু করেন।
সে বারের থিম ছিল গ্রাম। তার পর কোনও বছর আইফেল টাওয়ার, কোনও বছর কুমোরপাড়ার গরুর গাড়ি উঠে এসেছে মণ্ডপে। গত বছর মণ্ডপে মহাকবি কালিদাসের থিম তাক লাগিয়ে দিয়েছিল সবাইকে।
এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। উদ্যোক্তাদের বেশির ভাগই স্কুল বা কলেজ পড়ুয়া। পড়াশোনার সময় বাদ দিয়ে এক মাস ধরে গোটা রেলস্টেশন তৈরি করেছেন তাঁরা। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে পাটকাঠি। পালিশ করা পাটকাঠি দিয়ে তৈরি হয়েছে চায়ের দোকান, ওভারব্রিজ, টিকিট কাউন্টার, শৌচাগার, অনুসন্ধান অফিস, একটা ট্রেনও!
মদনেশ্বর শিবমন্দিরের নামে সেই স্টেশনের নাম রাখা হয়েছে ‘মদনেশ্বর জংশন’। ট্রেনের নাম ‘বাগদেবী এক্সপ্রেস’। ওই ট্রেনেই সওয়ার হবেন সরস্বতী।
দশম শ্রেণির রিম্পা মণ্ডল, বিএ দ্বিতীয় বর্ষের সুমনা মণ্ডল, নেপাল লোহার বলেন— ‘মাসখানেক ধরে পড়াশোনার ফাঁকে যে যখন পারছি তখনই মণ্ডপের কাজে হাত লাগাচ্ছি। কাজ যত এগিয়েছে ততই অবাক হয়েছি। ভাবতেই পারছি না আমরাই এ সব গড়েছি।’ স্থানীয় শিক্ষক সুব্রত দাস, প্রসেনজিৎ হাজরা জানান, ওই পুজোর উদ্যোক্তাদের অধিকাংশই স্কুল-কলেজের পড়ুয়া। গ্রামের চাঁদাই সম্বল। চাঁদার টাকায় পুজোর সব দিক ঠিকমতো দেখা যায় না। তাই অনেকেই হাতখরচের টাকা বাঁচিয়ে জমিয়ে রাখে পুজোর থিম গড়তে।
পুজো নিয়ে উচ্ছ্বসিত এলাকার বাসিন্দারাও। শ্যামলী মণ্ডল, সুলেখা মণ্ডল, দেবনারায়ণ মণ্ডল, রামকৃষ্ণ মণ্ডল বলেন— ‘এক সময় আমদের গ্রামে সরস্বতী পুজো হতো না। স্কুল বা অন্য জায়গায় পুজো দেখতে যেতে হতো। এখন গ্রামেই থিমের পুজো দেখতে দূরদূরান্তের মানুষ ভিড় জমান।’
এ বারের থিমের পরিকল্পনা করেছেন শিক্ষক পরেশ ভাণ্ডারি। তিনি বলেন, ‘‘এই গ্রাম থেকে নিকটবর্তী রেলস্টেশনের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। গ্রামের অনেক বাচ্চা এখনও স্টেশন, ট্রেন দেখেনি। তাদের দেখাতেই এমন মণ্ডপ গড়া হয়েছে।’’