উদ্যোগী সর্বশিক্ষা মিশন

কুসংস্কার দূর করতে স্কুলে দল

ব্লক স্তরের আলোচনাসভার পরে স্কুল স্তরেও পড়ুয়াদের নিয়ে ওই সভা হবে। তার পরে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বিভিন্ন গ্রামে সচেতনতার শিবির করা হবে। শিবিরগুলিতে মানুষকে সচেতন করতে পড়ুয়ারাই মুখ্য ভূমিকা নেবে বলে ঠিক হয়েছে।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৭ ০৩:১২
Share:

কোথাও ডাইনির অপবাদ দিয়ে হেনস্থা করা হচ্ছে, কোথাও আবার স্কুলের শৌচাগারে ভূত রয়েছে বলে গুজব রটিয়ে পড়ুয়াদের ভয় দেখানো হচ্ছে। এ সব ছাড়াও রোগ সারাতে ওঝার স্মরণাপন্ন হওয়া তো রয়েছেই। আইনি পথে কড়া ব্যবস্থা নিয়েও এ সব রোখা যাচ্ছে না। কুসংস্কারকে কেন্দ্র করে একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলেছে বাঁকুড়া জেলার প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে। যার পরিণাম কখনও কখনও জীবন দিয়ে খেসারত দিতে হচ্ছে।

Advertisement

মানুষের মন থেকে এই সব নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে বিজ্ঞান মঞ্চের সহযোগিতায় এ বার স্কুলে স্কুলে পড়ুয়াদের বিশেষ দল গড়ার উদ্যোগ নিল সর্বশিক্ষা মিশন। তাঁদের আশা, পড়ুয়াদের ওই দলই রুখে দাঁড়াবে এলাকাবাসীর অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে। এর জন্য স্কুলের বাছাই করা ছাত্রছাত্রীদের রীতিমতো প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে।

বাঁকুড়া সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায় জানান, প্রাথমিক ভাবে জঙ্গলমহলের মধ্যে থাকা বাঁকুড়ার চারটি ব্লক— রাইপুর, রানিবাঁধ, সারেঙ্গা ও সিমলাপাল থেকেই এই প্রকল্পের সূচনা হবে। প্রতিটি স্কুলে বাছাই করা সাত-আটজন পড়ুয়াদের নিয়ে একটি করে দল গড়া হবে। ওই দলে কন্যাশ্রী প্রকল্পের মেয়েদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। দলটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন স্কুলের একজন শিক্ষক। শীঘ্রই বিডিওদের মাধ্যমে জঙ্গলমহলের সব ক’টি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকদের চিঠি দিয়ে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক বাছাই করে দল গড়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।

Advertisement

এরপর প্রতি ব্লকে আলোচনাসভার আয়োজন করা হবে বিজ্ঞান মঞ্চের সঙ্গে যৌথ ভাবে।

ব্লক স্তরের আলোচনাসভার পরে স্কুল স্তরেও পড়ুয়াদের নিয়ে ওই সভা হবে। তার পরে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বিভিন্ন গ্রামে সচেতনতার শিবির করা হবে। শিবিরগুলিতে মানুষকে সচেতন করতে পড়ুয়ারাই মুখ্য ভূমিকা নেবে বলে ঠিক হয়েছে।

সুপ্রভাতবাবু বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীরাই দেশের ভবিষ্যৎ। এই প্রকল্পে এক দিকে কুসংস্কার মুক্ত হবে পড়ুয়ারা, আবার অন্য দিকে, নিজের গ্রামের বাসিন্দাদের মনের অন্ধকার কাটাতেও দায়বদ্ধতা বাড়বে তাদের।’’ তিনি জানাচ্ছেন, অন্ধবিশ্বাস দূর করা ছাড়াও পণপ্রথা বা বাল্য বিবাহ রোধ, এলাকায় শিক্ষার বিকাশের উপরেও মানুষকে সচেতন করা হবে। সর্বশিক্ষা মিশনের পাশাপাশি এই প্রকল্পে সমাজ কল্যাণ দফতর, কন্যাশ্রী প্রকল্পেরও বড় ভূমিকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সুপ্রভাতবাবু। ইতিমধ্যেই বিজ্ঞান মঞ্চের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছে সর্বশিক্ষা মিশন।

পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের বাঁকুড়া শাখার সম্পাদক জয়দেব চন্দ্র বলেন, ‘‘সর্বশিক্ষা মিশনের এই উদ্যোগ খুবই প্রাসঙ্গিক। আমরা সব রকম ভাবে তাঁদের পাশে রয়েছি। ছাত্রছাত্রীদের সহজ ও মনোগ্রাহী উপায়ে কী ভাবে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সচেতন করা যায়, তা নিয়েও চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছি আমরা।’’

এই উদ্যোগের কথা শুনে বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে পড়ুয়ারা বড় ভূমিকা নিতেই পারে। কুসংস্কারের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে মহিলাদের মধ্যেই। তাই কন্যাশ্রীর মেয়েদের এগিয়ে আসতে হবে।’’ সুপ্রভাতবাবু জানাছেন, চলতি অগস্টের শেষের দিকেই ব্লক ভিত্তিক শিবিরগুলি শুরু হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন