বোর্ড স্থগিত ছিল না, জানা গেল চিঠিতে

বিজেপির রঘুনাথপুর ২ মণ্ডল সভাপতি অসীম চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রশাসনের তুঘলকি কাজকর্মে আমরা অবাক।’’ ২৭ সেপ্টেম্বর ওই পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের সভায়পরে বহিরাগত লোকজন ঢুকে ভাঙচুর চালায়। মারধর করা হয় সরকারি কর্মীদের।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৫৪
Share:

রঘুনাথপুর ১ ব্লকের নতুনডিতে বোর্ড গড়ল বিজেপি। নিজস্ব চিত্র

বিজ্ঞপ্তিতে প্রশাসন জানিয়েছিল, বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার স্থগিত থাকা যে সমস্ত পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন হবে, তার মধ্যে একটি হল রঘুনাথপুর ২ ব্লকের মঙ্গলদা-মৌতড়। দিন কয়েক আগে আর একটি চিঠিতে জানা গেল, ওই পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন স্থগিতই ছিল না। আগেই হয়ে গিয়েছে। এই ঘটনায় প্রশ্ন তুলতে শুরু করে দিয়েছেন বিরোধীরা। তবে জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় দাবি করছেন, কোনও ভাবে বোর্ডের বিষয়টি তাঁদের নজর এড়িয়ে যাওয়ায় একটা গোলমাল হয়েছিল।

Advertisement

বিজ্ঞপ্তিতে দ্বিতীয় দফার দ্বিতীয় দিনে, বৃহস্পতিবার মঙ্গলদা-মৌতোড় পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের প্রথম সভা হবে বলে জানিয়েছিল জেলা প্রশাসন। দিন কয়েক আগে ব্লক প্রশাসন একটি চিঠি পায়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই চিঠিতে জেলাশাসক মঙ্গলদা-মৌতোড় পঞ্চায়েতে বৃহস্পতিবার বোর্ড গঠনের সভা করতে নিষেধ করেছেন। এ দিন ওই পঞ্চায়েতে সভা হয়নি। জেলাশাসক বলেন, ‘‘গত ২৭ সেপ্টেম্বরই মঙ্গলদা-মৌতোড় পঞ্চায়েতে প্রথম সভা হয়ে গিয়েছে। কোনও ভাবে বিষয়টি আমাদের নজর এড়িয়ে গিয়েছিল। তাই ভুলবশত বিজ্ঞপ্তিতে ওই পঞ্চায়েতের নাম থেকে যায়। পরে বিডিওকে বলা হয়েছে সভা বন্ধ করতে।’’

এ দিন বিজেপির রঘুনাথপুর ২ মণ্ডল সভাপতি অসীম চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রশাসনের তুঘলকি কাজকর্মে আমরা অবাক।’’ ২৭ সেপ্টেম্বর ওই পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের সভায়পরে বহিরাগত লোকজন ঢুকে ভাঙচুর চালায়। মারধর করা হয় সরকারি কর্মীদের। ভাঙা হয় চেয়ার-টেবিল। কিছু নথিপত্রও ছিঁড়ে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। তার পরেই বিজ্ঞপ্তি।

Advertisement

আর তার পরে আবার চিঠি। প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বৃহস্পতিবার দাবি করেছেন, ওই দিন কিছু নথিপত্র নষ্ট হলেও বোর্ড গঠনের নথি অক্ষতই ছিল। তাতে দেখা গিয়েছে, ২৭ সেপ্টেম্বর বোর্ড গঠনের সভা হয়েছে। তাতে নির্দিষ্ট সংখ্যক সদস্য হাজির থাকায় ‘কোরাম’ হয়েছে। সূত্রের খবর, প্রধান ও উপপ্রধান হয়েছেন তৃণমূলের দুই সদস্য।

বিজেপির অভিযোগ, পঞ্চায়েতটি তৃণমূলকে ‘উপহার’ দেওয়ার জন্যই বোর্ড গঠনের সভা বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। ভোটে মঙ্গলা মৌতড়ে বিজেপি পেয়েছিল ন’টি আসন। তৃণমূল দু’টি। একটি আসন পেয়েছিল সিপিএম। পরে সিপিএমের এক জন আর বিজেপির দু’জন যোগ দেন তৃণমূলে। বিজেপির দাবি, তার পরেও সংখ্যায় ভারী ছিল তারা। আর সেই জন্য ২৭ সেপ্টেম্বর দুষ্কৃতীতের দিয়ে তাদের সদস্যদের পঞ্চায়েতে ঢোকা আটকে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বিজেপির দাবি, ঘটনা চাউর হতেই ‘স্থানীয় লোকজন’ পঞ্চায়েতে ঢুকে বিক্ষোভ দেখান।

অসীমবাবু দাবি করেছেন, সভা বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের তরফে তাঁদের সদস্যদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতে কোথাও উল্লেখ করা হয়নি ওই পঞ্চায়েতে বোর্ড ইতিমধ্যেই গঠন হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘অগণতান্ত্রিক ভাবে এত দিন পঞ্চায়েতগুলিতে বোর্ড গঠন স্থগিত করেছিল প্রশাসন। ফের সেই পদ্ধতি মেনেই বোর্ড গঠনের সভা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’’ তাঁর অভিযোগ, শাসকদলের নির্দেশেই এমনটা করেছে জেলা প্রশাসন।

তবে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন পাড়ার তৃণমূল বিধায়ক উমাপদ বাউড়ি। তিনি বলেন, ‘‘মঙ্গলদা-মৌতোড়ে পঞ্চায়েতে সেপ্টেম্বরেই বোর্ড গঠন হয়ে গিয়েছে। কোনও ভাবে বিষয়টি নেহাতই নজর এড়িয়ে গিয়েছিল প্রশাসনের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন