পাশেই পুলিশ। হেদেলবেড়ায় পুলিশ সুপার।—নিজস্ব চিত্র
বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা কী ভাবে মিলতে পারে, তা প্রত্যন্ত এলাকার মানুষকে জানাতে তাঁদের দরজায় পৌঁছল প্রশাসন। রবিবার পুরুলিয়া জেলা পুলিশ ও বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতির যৌথ উদ্যোগে অযোধ্যা পাহাড়ের হেদেলবেড়া গ্রামে আয়োজন করা হয়েছিল এই শিবিরের।
রাজ্য সরকার গ্রামের মানুষজনকে জমির অধিকার দিতে পাট্টা দিচ্ছে। কিন্তু কী ভাবে সেই পাট্টা জঙ্গল এলাকার বাসিন্দারা পেতে পারেন, কোথায় গিয়ে কার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, যিনি সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে সুবিধা চাইছেন তাঁকে কী ধরনের কাগজপত্র জমা করতে হবে— তা একেবারে সহজ করে মানুষজনকে বোঝানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল এই শিবিরে।
বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেতে হলে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু প্রত্যন্ত এই এলাকার গ্রামগুলি থেকে বলরামপুর ব্লক সদরে গিয়ে ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলার হ্যাপা অনেক। এ কথা মাথায় রেখে এই শিবিরেই অ্যাকাউন্ট খোলারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। তফসিলি জাতি, উপজাতি ও ওবিসি শংসাপত্র কোথা থেকে মিলবে তাও জানানো হয়। সেই সঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্পের আবেদনের ফর্মও তুলে দেওয়া হয় এলাকার বাসিন্দাদের হাতে। কারও ভোটার তালিকায় নাম না থাকলে এই শিবিরে এসেই যাতে তিনি ভোটার তালিকায় নাম নথিভুক্তকরণের আবেদন করতে পারেন, সেই ব্যবস্থাও করেছিল প্রশাসন।
বলরামপুরের বিডিও পৌষালি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রত্যন্ত এই এলাকার মানুষজন যাতে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুযোগ সুবিধাগুলি সম্পর্কে অবগত হতে পারেন, সেই লক্ষ্যেই আমরা এই শিবিরের ব্যবস্থা করেছি।’’ ওই পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সুদীপ মাহাতো বলেন, ‘‘এ ধরনের শিবির অন্য এলাকাতেও ভবিষ্যতে করা হবে।’’
পুলিশের উদ্যোগে এখানে চিকিৎসা শিবির হয়। ছিলেন বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তাঁরা রোগ নির্ণয় করে ওষুধপত্রও দেন। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, পরবর্তী সময়ে পুলিশই চিকিৎসার জন্য তাঁদের পুরুলিয়া সদর বা যে সংস্থা এখানে পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল তাঁদের চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। মানুষজনকে ছাতা, পড়ুয়াদের হাতে লেখাপড়ার সরঞ্জাম ইত্যাদিও তুলে দেওয়া হয়।
অযোধ্যাপাহাড়ের ছতরাজেরা, উসুলডুংরি, ধানচাটানি, লুকুইচাটানি-সহ লাগোয়া গ্রামগুলির মানুষজনেরা শিবিরে উপস্থিত হয়েছিলেন। উসুলডুংরির মাধুরী বেসরা বলেন, ‘‘সরকারি সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম। আগে এ সব জানতাম না।’’
হেদেলবেড়া গ্রামের ভারতী সিং বলেন, ‘‘শরীর বড্ড দুর্বল, কিন্তু এলাকায় ডাক্তার নাই। এই শিবিরে ডাক্তার দেখাতে পারলাম। ভাল হল।’’ জেলা পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, ‘‘আগে এই এলাকায় এ ধরনের শিবির ভাবাই যেত না। এত মানুষ এসেছেন, মানুষ যদি এ ধরনের শিবির থেকে উপকৃত হতে পারেন তবেই আমাদের ভাল লাগবে।’’