নির্দিষ্ট রিপোর্টের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত, দাবি বাঁকুড়া প্রশাসনের

গন্ডগোলের  আশঙ্কা, হল না বোর্ড গড়া

আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হতে পারে— এই কারণ দেখিয়ে বুধবার বাঁকুড়ার তিনটি গ্রামপঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন স্থগিত রাখল প্রশাসন। তিনটির মধ্যে দু’টিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিজেপি। একটিতে তৃণমূল। বিরোধীদের অভিযোগ, শাসকদলকে সুবিধা করে দিতে প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:০৩
Share:

বোর্ড হয়নি। কিন্তু পঞ্চায়েত অফিসের সামনে ছিল পুলিশ পিকেট। বাঁকুড়া ২ ব্লকের মানকানালিতে। নিজস্ব চিত্র

আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হতে পারে— এই কারণ দেখিয়ে বুধবার বাঁকুড়ার তিনটি গ্রামপঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন স্থগিত রাখল প্রশাসন। তিনটির মধ্যে দু’টিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিজেপি। একটিতে তৃণমূল। বিরোধীদের অভিযোগ, শাসকদলকে সুবিধা করে দিতে প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত। যদিও প্রশাসন দাবি করেছে, নির্দিষ্ট রিপোর্টের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অভিযোগে আমল দিতে নারাজ তৃণমূলও।

Advertisement

মঙ্গলবার থেকে জেলার পঞ্চায়েতগুলিতে বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন জেলার শালতোড়া, মেজিয়া, গঙ্গাজলঘাটি, ছাতনা, বাঁকুড়া ১, বাঁকুড়া ২ ও ওন্দার মোট ৫৪টি পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন হওয়ার কথা ছিল। যদিও বিজেপির দখলে থাকা গঙ্গাজলঘাটি, বাঁকুড়া ২ ব্লকের মানকানালি আর তৃণমূলের দখলে থাকা বাঁকুড়া ২ ব্লকের সানবাঁধা গ্রামপঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেয় প্রশাসন। বাকি ৫১টি পঞ্চায়েতে বোর্ড হয়েছে। বাঁকুড়ার জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস বলেন, “ওই তিনটি গ্রামপঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে ঝামেলা হতে পারে বলে পুলিশের কাছে রিপোর্ট ছিল। সেই রিপোর্ট মেনেই অশান্তি এড়াতে বোর্ড গঠন স্থগিত রাখা হয়েছে। বাকি পঞ্চায়েতগুলিতে নির্বিঘ্নেই বোর্ড গঠন হয়েছে।”

এ দিকে, বিজেপি অভিযোগ করছে, তাদের হাতে থাকা মানকানালি ও গঙ্গাজলঘাটি গ্রামপঞ্চায়েতের সদস্যদের ভাঙিয়ে দলে টানার চেষ্টা করছে তৃণমূল। বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক মহাদেব রাণা বলেন, “কোথাও ঝামেলা হওয়ার কোনও রকমের আভাস ছিল না। তৃণমূল আমাদের সদস্যদের ভাঙিয়ে দলে টেনে বোর্ড গড়তে উঠেপড়ে লেগেছে। কিন্তু সুবিধা করতে পারেনি। তাই প্রশাসন বোর্ড গঠন স্থগিত রেখে তাদের বাড়তি সময় পাইয়ে দিচ্ছে।”

Advertisement

মানকানালি ও গঙ্গাজলঘাটি গ্রামপঞ্চায়েতে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের আসনের ব্যবধান খুব বেশি নয়। মানকানালিতে একটি আসনে আর গঙ্গাজলঘাটিতে দু’টি আসনে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। তবে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খান বলছেন, “আমরা কোনও দলের সদস্যদের ভাঙিয়ে এনে বোর্ড গড়ার পক্ষে নই। বিজেপির সদস্যেরাই আমাদের দলে আসার জন্য গোপনে যোগাযোগ করছেন।” জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক জয়দীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কেউ যদি নিঃশর্তে আমাদের দলে আসতে চান তাহলে নিশ্চয় আসতে পারেন। তবে আমরা এগিয়ে যাব না।”

গঙ্গাজলঘাটি ও মানকানালি গ্রামপঞ্চায়েতে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও বাঁকুড়া ২ ব্লকের সানবাঁধা গ্রামপঞ্চায়েতে তৃণমূল ব্যপক ব্যবধানে এগিয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। তার পরেও সানবাঁধায় কেন বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হল তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে জেলার রাজনৈতিক মহলে। তৃণমূলের একটি সূত্র দাবি করছে, সানবাঁধায় প্রধান পদের দাবিদার হিসেবে একাধিক নাম উঠে এসেছে। যা নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব একমত হয়ে উঠতে পারেননি। এই পরিস্থিতিতে দল কাউকে প্রধান হিসেবে নির্বাচন করলে অন্য পক্ষ বেঁকে বসতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। আর সেই জন্যই সানবাঁধায় আপাতত বোর্ড গঠন স্থগিত রাখা হয়েছে বলে মনে করছেন তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীদের একাংশ। কথাটা পুরোপুরি উড়িয়ে দিচ্ছেন না তৃণমূলের জেলা নেতারাও। দলের জেলা সভাপতি অরূপ বলেন, “সানবাঁধায় প্রধান নির্বাচন নিয়ে আমরা এখনও আলোচনাতেই বসতে পারিনি। শীঘ্রই আলোচনায় বসে ওখানে প্রধান কে হবেন তা ঠিক করা হবে।”

মঙ্গলবার, জেলায় পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন শুরুর প্রথম দিনেই সোনামুখীর ধুলাই পঞ্চায়েতে তৃণমূলের গোষ্ঠিদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোখাই এখন জেলা তৃণমূলের প্রধান লক্ষ্য। অরূপ খানের দাবি, “এ দিন সব পঞ্চায়েতেই শান্তিপূর্ণ ভাবে বোর্ড গঠন হয়েছে। দলের ঠিক করে দেওয়া ব্যক্তিই প্রধান ও উপপ্রধান হয়েছেন। আগামী দিনেও বোর্ড গঠন নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন