পঞ্চাশ হাজােরর বেশি বাড়ি শুরু এক সপ্তাহে

গত লোকসভা ভোটে পুরুলিয়ায় শাসকদল হোঁচট খেয়েছে। কারণ খুঁজতে উদ্যোগী হয়েছিল দল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৯ ০০:৫০
Share:

যাত্রাশুরু: ট্যাবলোর উদ্বোধনে সভাধিপতি ও ডিএম। নিজস্ব চিত্র

জেলা জুড়ে এক সপ্তাহে শুরু হয়ে যাবে ৫০ হাজারেরও বেশি বাড়ি তৈরির কাজ। ঘর তৈরির জন্যে অন্যায় ভাবে কাউকে কোনও টাকা দেবেন না— ইট গাঁথার আগে এমনই শপথ পাঠ করবেন আবাস যোজনা প্রকল্পের উপভোক্তারা। আজ, শনিবার থেকে পুরুলিয়া জেলা জুড়ে ‘বাংলার আবাস যোজনা সপ্তাহ’ উদ্‌যাপন শুরু হবে। ওই কর্মসূচিতেই জেলার কুড়িটি ব্লকের সমস্ত পঞ্চায়েতের উপভোক্তাদের নিয়ে এই শপথবাক্য পাঠ করানো হবে বলে জানানো হয়েছে। দায়িত্বে থাকবেন জেলা, মহকুমা ও ব্লক প্রশাসনের অধিকারিক এবং ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের পদাধিকারীরা।

Advertisement

গত লোকসভা ভোটে পুরুলিয়ায় শাসকদল হোঁচট খেয়েছে। কারণ খুঁজতে উদ্যোগী হয়েছিল দল। বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযোগ মিলেছে, সরকারি সুবিধা পাওয়ার জন্য ‘কাটমানি’ দিতে হচ্ছে বলে। ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে তৃণমূল নেতারা নানা জায়গায় জনসংযোগ করতে যাচ্ছেন। বাড়ি পাচ্ছেন না বলে অনেক মানুষই তাঁদের কাছে অভিযোগ করছেন।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত তিন বছরে জেলায় ৬৯,৫১৮টি বাড়ি আবাস যোজনায় তৈরি করা হয়েছে। জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘চলতি আর্থিক বছরে আমরা জেলায় ৫০,২২২টি বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছি। শনিবার থেকে জেলা জুড়ে বাংলার আবাস যোজনা সপ্তাহ শুরু হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য, এই সপ্তাহের মধ্যেই যাতে উপভোক্তারা নিজেদের বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’’

Advertisement

মোট বাড়ি

গত তিন বছরে ৬৯,৫১৮টি

চলতি আর্থিক বছরে ৫০,২২২টি

নির্মাণ-২৩-২৯ নভেম্বরের মধ্যেই সমস্ত বাড়ির কাজ শুরু।

বরাদ্দ-প্রতিটি বাড়ির জন্য তিন কিস্তিতে ১,৩০,০০০।

শ্রমের হিসাব

কাজ শুরু থেকে ভিত তৈরি পর্যন্ত
৩০ দিন

বাড়ির জানলা তৈরি করা পর্যন্ত
৩০ দিন

বাকি পুরো কাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত
৩০ দিন

নিজের বাড়ি তৈরির জন্য উপভোক্তা বা তাঁর পরিবার শ্রম দিলে সর্বাধিক ৯৫টি অদক্ষ শ্রমদিবসের মজুরি একশো দিনের কাজের প্রকল্প থেকে পাবেন।

জেলাশাসক জানান, বিভিন্ন সময়ে উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছয়। দেখা যায়, কারও এমন সমস্যা সামনে এসে পড়ল যে বাড়ি তৈরির কাজটা আর শুরু হল না। তাই এ সপ্তাহেই যাতে উপভোক্তারা তাঁদের বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করতে পারেন, সে বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সমস্ত বিডিওকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্রতিটি ব্লকে যত সংখ্যক বাড়ির কাজ শুরু হল তার ছবি জেলা স্তরে পাঠানোর জন্য। যে ব্লক সব থেকে বেশি বাড়ির কাজ শুরু করতে পারবে, সে ব্লককে পুরস্কৃত করা হবে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে।

প্রকল্পে বাড়ি নির্মাণের জন্য ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা পান উপভোক্তারা। তিনটি কিস্তিতে সেই টাকা তাঁদের দেওয়া হবে। পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, টাকা সরাসরি উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে পৌঁছবে। অনুমোদনের পরেই মিলবে ৬০ হাজার টাকা। জানালার নীচ পর্যন্ত তৈরি হলে পরের কিস্তির ৬০ হাজার টাকা। তার পরে, বাড়ি তৈরির কাজ শেষ হলে এবং সেই বাড়ির ছবি তুলে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে ‘আপলোড’ করলে মিলবে বাকি দশ হাজার টাকা। সভাধিপতি বলেন, ‘‘অতীতে তিন বছরে যেখানে ৬৯,৫১৮টি বাড়ি তৈরি হয়েছে সেখানে চলতি বছরে আমরা ৫০,২২২টি বাড়ি তৈরির কাজ হাতে নিয়েছি। এটা আমাদের কাছে বড় দায়িত্ব।’’

শুক্রবার এই বিষয়ক একটি ট্যাবলোর যাত্রা শুরু করেন জেলা সভাধিপতি ও জেলাশাসক। সভাধিপতি জানান, নির্মাণে এ বার নজরদারি থাকবে। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিরা সে দায়িত্বে থাকবেন। তিনি বলেন, ‘‘অনুমোদনের পরে কোনও বেনিয়ম হলে, উপভোক্তা সরাসরি বিডিওর কাছে অভিযোগ করবেন। অভিযোগের ভিত্তিতে বিডিও শুনানি করবেন। অভিযোগের সত্যতা থাকলে এফআইআর করা হবে।’’

জেলাশাসক জানান, ‘বাংলার আবাস যোজনা সপ্তাহ’ শুরুর প্রথম দিনেই প্রতি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রকল্পের সমস্ত উপভোক্তাকে ডেকে শপথবাক্য পাঠ করানো হবে— ‘এই প্রকল্পে অনুমোদিত ঘর, শ্রমদিবস আমাদেরই অধিকার। এই অধিকার থেকে আমরা অন্য কাউকে কোনও ভাগ নিতে দেব না বা অন্যায় ভাবে কাউকে কোনও টাকাপয়সা বা সুযোগসুবিধা দেব না’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন