বাঁকুড়ায় মমতার জোর তাগাদা

উচ্ছেদ অভিযানে নামছে প্রশাসন

জেলা সদরের ঘিঞ্জি রাস্তাঘাটে সাইকেল, রিকশার ধাক্কা খেয়ে পথচারীদের চলতে হয়। তারপরেও বছরের পর বছর দোকানি ও হকারদের পসরা, পার্কিং রাস্তা আরও ছোট করে দিয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ ছিলই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:০১
Share:

হারিয়েছে পথ। দখল নিয়েছে দোকানের পসরা। বাঁকুড়ার বড়বাজারে তোলা নিজস্ব চিত্র।

জেলা সদরের ঘিঞ্জি রাস্তাঘাটে সাইকেল, রিকশার ধাক্কা খেয়ে পথচারীদের চলতে হয়। তারপরেও বছরের পর বছর দোকানি ও হকারদের পসরা, পার্কিং রাস্তা আরও ছোট করে দিয়েছে। এ নিয়ে ক্ষোভ ছিলই। এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও জেলা সফরে এসে বাঁকুড়া পুরকর্তৃপক্ষকে শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে তাগাদা দিলেন।

Advertisement

দেরিতে হলেও বাঁকুড়া শহরের গন্ধেশ্বরী নদীকে দখল মুক্ত করার অভিযান সদ্য শেষ করেছে প্রশাসন। এ বার শহরের কয়েকটি জায়গাকেও বেদখলমুক্ত করার কাজে নামার পরিকল্পনা নিচ্ছে প্রশাসন। এ বার শহরের ভৈরবস্থান ও সার্কিট হাউস সংলগ্ন এলাকা দখল মুক্ত করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী শুক্রবার পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়ে রাস্তার জায়গা থেকে অবৈধ নির্মাণ ব্যবসায়ীদের নিজেদেরই ভেঙে ফেলতে বলা হয়েছে। তারপরেই অভিযানে নামবে বলে জানাচ্ছেন প্রশাসনের কর্তারা। এলাকায় এ নিয়ে মাইকে ঘোষণাও করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের তরফে। এরপরেই হইচই পড়ে গিয়েছে এলাকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে।

Advertisement

জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “সার্কিট হাউসে বিভিন্ন বৈঠকে যোগ দিতে প্রায়ই রাজ্যের মন্ত্রীরা আসেন। তবে সার্কিট হাউসের আশপাশের রাস্তা বেদল হয়ে থাকায় অনেক সময় গাড়ি নিয়ে তাঁদের যাতায়াতে অসুবিধা হয়। তাই অভিযানের প্রথম পর্যায়েই ওই এলাকাটিকে দখল মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” প্রশাসন সূত্রে খবর, আপাতত সার্কিট হাউস ও পূর্ত দফতরের দেওয়াল ঘেঁষে যে সব দোকান তৈরি হয়েছে, সেগুলিকেই ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই এলাকায় বহু গুমটি, চা ও মাংসের দোকান রয়েছে। প্রশাসন ওই সমস্ত স্থায়ী ও অস্থায়ী নির্মাণকেই বেআইনি বলে দাবি করছে। মহকুমাশাসক (বাঁকুড়া সদর) অসীমকুমার বালা বলেন, “এলাকায় গজিয়ে ওঠা অবৈধ দোকানগুলির জন্য রাস্তায় যানজট হচ্ছে। অবৈধ নির্মাণ সরিয়ে ওই এলাকার সৌন্দর্যায়ন করার বিষয়ে আমরা ভাবছি।”

শহরে যানবাহনের সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চললেও রাস্তাঘাটের পরিকাঠামো গড়ে তোলার দিকে পুরসভা বা প্রশাসন নজর না দেওয়ায় পুরবাসীর বড় অংশই এতদিন ক্ষুব্ধ ছিলেন। তবে শহরের গা বেয়ে বয়ে চলা গন্ধেশ্বরী নদীর জায়গায় সম্প্রতি অন্তত ৬০টি পাকা বেআইনি নির্মাণ প্রশাসন ভাঙায়, বাসিন্দাদের আশা এ বার শহরের জনবহুল এলাকাতেও বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে নামবে প্রশাসন। ঠিক এই সময়েই মুখ্যমন্ত্রীর ওই নির্দেশে তাঁরা খুশি।

প্রশাসন সূত্রে খবর, গত মঙ্গলবার মুকুটমণিপুরের বারোঘুটুতে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন, প্রশাসনের জমি দ্রুত দখল মুক্ত করতে হবে। এ ধরনের অভিযানের আগে অনেক ক্ষেত্রেই শাসক দলের একাংশ ভোটার হারানোর ভয়ে এই কাজ বন্ধ করতে প্রশাসনকে চাপ দেয় বলে অভিযোগ ওঠে। কিন্তু খোদ মুখ্যমন্ত্রী ওই নির্দেশ দেওয়ার পরে প্রশাসনের কাজ আরও সহজ হয়ে গিয়েছে বলেই মত প্রশাসনিক মহলের। কেবল সার্কিট হাউস চত্বর ফাঁকা করেই এই অভিযান বন্ধ হয়ে যাবে না বলেও আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “সার্কিট হাউস দখল মুক্ত করে ধাপে ধাপে আমরা শহরের মাচানতলা মোড়, চকবাজার, রানিগঞ্জমোড়ের মতো জায়গাগুলিকেও দখল মুক্ত করব।”

ঘটনা হল ওইসব এলাকাগুলি ব্যবসার প্রাণ কেন্দ্র। হাজার-হাজার ব্যবসায়ীর জীবন-জীবিকাও জড়িয়ে রয়েছে ওই ব্যবসার উপর। কাজেই সেখানে দখল মুক্ত অভিযান চালাতে গেলে ব্যবসায়ীদের বড়সড় চাপের মুখে পড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। বাঁকুড়া চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন দরিপা বলেন, “অবৈধ নির্মাণ করে ব্যবসা করাকে আমরা সমর্থন করি না। তবে যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবসা করছেন, তাঁদের পুনর্বাসন দিতে হবে।” বাঁকুড়ার জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “ব্যবসায়ীদের স্বার্থ অবশ্যই আমরা দেখব। তাঁদের কোথায় পুনর্বাসন দেওয়া হবে তা নিয়েও চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছি। তবে প্রশাসনকে তার কাজ করতে দিতে হবে।” একই আশ্বাস বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্তেরও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন