মাটির টানে পুতুল নিয়ে রথের  মেলায়

শালদহ নদীর মাটি যেন প্রাণ পায় বৃদ্ধের হাতে। শনিবার জমজমাট মেলায় বসে বছর বাষট্টির শঙ্কর জানান, ঠাকুরদা বনমালি সূত্রধরের কাছে পুতুল বানানোয় তাঁর হাতেখড়ি।

Advertisement

প্রশান্ত পাল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৮ ০৩:০৯
Share:

ফাইল চিত্র।

তাঁর ডালায় হাতি-ঘোড়া মেলে দশ টাকায়। ঝালদার রথের মেলা মানেই জিলিপি, পাঁপড় আর শঙ্কর সূত্রধরের পুতুল। প্রায় চার দশক হতে চলল, প্রতি বছর তিনি মেলায় আসেন ঝাঁকা ভরা পুতুলের পসরা নিয়ে।

Advertisement

শালদহ নদীর মাটি যেন প্রাণ পায় বৃদ্ধের হাতে। শনিবার জমজমাট মেলায় বসে বছর বাষট্টির শঙ্কর জানান, ঠাকুরদা বনমালি সূত্রধরের কাছে পুতুল বানানোয় তাঁর হাতেখড়ি। বলেন, ‘‘তখন আমার দশ-বারো বছর বয়স। ঠাকুরদার সঙ্গেই একদিন রথের মেলায় মাটির পুতুল বিক্রি করতে এসেছিলাম। কত আর দাম তখন? এক একটা পুতুল একপয়সা।’’ তার পরে সময় বয়ে গিয়েছে। শঙ্করের মেলায় আসায় ছেদ পড়েনি। দুই নাতি প্রসেনজিৎ ও লক্ষ্মণও এখন মেলায় আসে তাঁর সঙ্গে। তাঁদেরও মূর্তি গড়া শিখিয়েছেন। শঙ্কর বলেন, ‘‘ওরা ছোটা ভীম, মোটু পাতলু— এই সবও বানায়। বিক্রিও হচ্ছে ভালই। আমাদের সময় তো এ সব ছিল না।’’

মানভূমে পঞ্চকোট রাজবংশের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল বাংলার প্রান্তিক জনপদ ঝালদায়। সেই রামও নেই, সে অযোধ্যাও নেই। তবে রথের রশির টানে সেই পুরনো কথা ইতিহাসের পথ ধরে এগিয়ে চলেছে। জেলা তো বটেই, ঝাড়খণ্ড থেকেও প্রচুর মানুষ আসেন ঝালদার রথের মেলায়। স্মৃতি হিসাবে কিনে নিয়ে যান দশ টাকার হাতি-ঘোড়া। রথের মেলার জন্য জৈষ্ঠ্য থেকেই মূর্তি বানানো শুরু করে দেন শঙ্কর। শিল্পী জানান, এক বার মাটি এনে দিতে একশো টাকা নেয়। মূর্তি গড়ে, শুকিয়ে, রং করে— অনেকটাই খরচ হয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘‘লাভ খুব একটা হয় না। তবে ঐতিহ্যের একটা টান তো আছে। এক আধ বার ভেবেছি, এ বার থাক। কিন্তু জৈষ্ঠ্য এলেই এলেই মনটা কেমন করে ওঠে।’’

Advertisement

ঝালদা শহরের বাসিন্দা আইনজীবী পিনাকী রক্ষিত, ঝালদা রথ কমিটির মুখপাত্র শ্যামল কর্মকারেরা বলেন, ‘‘এই পুতুল নিয়ে ঝালদার মানুষের অনেক স্মৃতি রয়েছে।’’ ছোট বেলায় রথের মেলায় তিনিও শঙ্করের থেকে পুতুল কিনেছেন বলে জানান ঝালদার বাসিন্দা বিধায়ক নেপাল মাহাতোও। শনিবার ঝালদায় রথের মেলা দেখতে এসেছিলেন ঝাড়খণ্ডের মুরির বাসিন্দা গৌরী তিওয়ারি। তিনি বলেন, ‘‘অনেক বছর ধরেই ঝালদায় আসি। বাচ্চাদের জন্য মাটির পুতুল কিনে নিয়ে যাই। এ বারও কিনলাম। মেলার স্মৃতি।’’

মেলায় বসে এ ভাবেই স্মতি আর ইতিহাসের সাঁকো বেঁধে যান শিল্পী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন