আবেদনের আট মাস পার
100 day's work

মিলছে না জব-কার্ড, অভিযোগ

প্রশাসন জানাচ্ছে, আবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

Advertisement

প্রশান্ত পাল 

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২১ ০৬:৫৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

কোভিড পরিস্থিতিতে হঠাৎ বেড়ে গিয়েছে একশো দিনের কাজের কদর। এই পরিস্থিতে আবেদন করে আট মাসেও নতুন জব-কার্ড পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন পুরুলিয়ার হুড়ার লক্ষ্মণপুর পঞ্চায়েতের কয়েকটি গ্রামের বেশ কিছু শ্রমিক। ইতিমধ্যে পঞ্চায়েত অফিসে অবস্থান এবং ব্লক প্রশাসনে দরবার করেছেন তাঁরা। প্রশাসন জানাচ্ছে, আবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

Advertisement

খেতমজুর সমিতির পুরুলিয়া জেলা কো-অর্ডিনেটর প্রেমচাঁদ মাইতি জানান, দেশে জাতীয় গ্রামীণ কর্ম সুনিশ্চয়তা আইন পাশ হয়েছিল ২০০৫ সালের অক্টোবরে। রাজ্যে তা কার্যকর হয় ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে। প্রতিটি পরিবারের কর্তার নামে জব-কার্ড হয়। একশো দিনের কাজ বরাদ্দ হয় পরিবার পিছু। গত দেড় দশকে প্রচুর পরিবার বড় হয়েছে। কিন্তু নতুন জব-কার্ডের জন্য অনেকে আবেদন করেননি। ফলে, মাথাপিছু কাজ ক্রমশ কমেছে। কিন্তু অনেকেই এতদিন বিশেষ গুরুত্ব দেননি। কেউ দিনমজুরি করেছেন। কেউ পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে পাড়ি দিয়েছেন ভিন্ রাজ্যে। শ্রমিকদের একাংশ দাবি করেন, একশো দিনের প্রকল্পের তুলনায় ঠিকা শ্রমিকের কাজ করলে বেশি টাকা পাচ্ছিলেন তাঁরা।

ধাক্কাটা আসে ২০২০ সালের মার্চে, করোনার প্রথম ঢেউয়ের সঙ্গে। লকডাউনে অন্য কাজের সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এত দিন জব-কার্ড না করানো অনেকেও এ বার তৎপর হন। হুড়ার লক্ষণপুর, দেউলি, খৈরি-পিহিড়া, লায়েকডি, দুখারডি-সহ বিভিন্ন গ্রামের ওই শ্রমিকেরা জানান, ২০২০ সালের অক্টোবরে তাঁরা নতুন জব-কার্ডের জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু এখনও পাননি। লক্ষ্মণপুরের শিবাণী বাউড়ি জানান, বাড়িতে ছোট তিন মেয়ে রয়েছে। তাঁরা স্বামী-স্ত্রী মিলে এত দিন দিনমজুরি করেছেন। এখন কাজ নেই। তিনি বলেন, ‘‘আবেদন করেও জব-কার্ড পাচ্ছি না। রেশনে চাল-আটা পাই। কিন্তু নগদও দরকার।’’

Advertisement

লক্ষ্মণপুরের দীপক বাউড়ির বাবার নামে পরিবারের জব-কার্ড। তিনি বলেন, ‘‘কার্ড হওয়ার সময় পরিবার ছিল ছোট। আমাদের চার ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে। এখন বাড়িতে দশ জন। মাথা পিছু দশ দিনের বেশি কাজ জোটার উপায় নেই।’’ ওই গ্রামের বন্দনা বাউরির পরিবারে আট জন সদস্য। একটিই কার্ড। তিনি বলেন, ‘‘জমিজমা নেই। এত দিন আমি আর আমার স্বামী রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করতাম। এখন সেটাও বন্ধ।’’

খেতমজুর সমিতির লক্ষ্মণপুরের কর্মী স্বপন বাউড়ি জানান, এলাকার এমন ৭৯টি পরিবারের সমস্যা নিয়ে তাঁরা গত অক্টোবরে পঞ্চায়েতের দ্বারস্থ হন। নভেম্বরে জানানো হয় বিডিওকে। কিন্তু কাজ হয়নি। বিডিও (হুড়া) ধ্রুবাঙ্কুর ঠাকুর বলেন, ‘‘নতুন কার্ডের কতগুলি আবেদন ওই পঞ্চায়েতে জমা পড়েছে, তা দেখা হবে। পৃথক কার্ড চেয়ে জমা পড়া আবেদনগুলি জেলায় পাঠানো হয়েছে।’’ একশো দিনের কাজের পুরুলিয়া জেলার নোডাল অফিসার সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘লক্ষ্মণপুরের ওই শ্রমিকদের কার্ড পেতে এতটা দেরি কেন হচ্ছে, খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার বলেন, ‘‘পরিবার ভাগ হলে যদি কেউ নতুন করে আবেদন করেন, তা হলে খতিয়ে দেখার পরে, তাঁদের জব কার্ড দেওয়া হয়। অনেকেই ইতিমধ্যে তা পেয়েছেন। হুড়ার ওই শ্রমিকেরাও আবেদনের ভিত্তিতে জব-কার্ড পেয়ে যাবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন