আইএনটিটিইউসি-র কার্যালয় দখলের অভিযোগ

ফের থমকে পাথর শিল্পাঞ্চল

কার্যালয় দখল করে নেওয়ার অভিযোগ তুলে মহম্মদবাজারের তালবাঁধ পাথর শিল্পাঞ্চলে বন্‌ধের ডাক দিল শাসকদলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি সমর্থকেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মহম্মদবাজার শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৬ ০১:৩৩
Share:

বন্‌ধের দাবিতে পাথর শিল্পাঞ্চলে আইএনটিটিইউসি-র মিছিল।

কার্যালয় দখল করে নেওয়ার অভিযোগ তুলে মহম্মদবাজারের তালবাঁধ পাথর শিল্পাঞ্চলে বন্‌ধের ডাক দিল শাসকদলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি সমর্থকেরা।

Advertisement

সংগঠনের দাবি, মঙ্গলবার আদিবাসী গাঁওতা আশ্রিত মহিলারা তাঁদের তালবাঁধের কার্যালয় দখল করে নেয়। তারই প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকে পাথর শিল্পাঞ্চলে বন্‌ধের ডাক দেওয়া হয়েছে।

গাঁওতা অবশ্য অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। পাথরের ট্রাক আটকে টাকা তোলাকে কেন্দ্র করে ওদের নিজেদের গোলমালের জেরেই ওরা বন্‌ধ ডেকেছে। শিল্পাঞ্চলের পাথর ব্যবসায়ীদেরও দাবি, এ দিনের বন্‌ধের মূল কারণ পাথরের গাড়ি আটকে টাকা তোলাকে কেন্দ্র করেই। জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী বলেন, ‘‘কোনও ভাবেই শিল্পাঞ্চলে বন্‌ধ হতে দেওয়া যাবে না। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মহম্মদবাজারের পাথর শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন পথে পাথরের গাড়ি আটকে টাকা তোলার রেওয়াজ দীর্ঘ দিনের। ট্রাক চালক থেকে পাথর ব্যবসায়ীদের দাবি, পাথরের গাড়ি আটকে যত্রতত্র টাকা তোলাকে কেন্দ্র করে ট্রাক চালক ও তোলাবাজদের মধ্যে মাঝে মধ্যেই অশান্তি ছড়ায়। ঢোলকাটা, সাগরবাঁধি, তালবাঁধ, হরিনসিঙা, পাঁচামি, রায়পুর— এমন অন্তত ২৫-৩০ জায়গায় পাথর বোঝাই গাড়ি আটকে টাকা তোলা চলে। অভিযোগ, এই তোলাবাজিতে প্রায় সব রাজনৈতিক দলের নামই জড়িয়ে রয়েছে।

নদিয়ার রানাঘাট এলাকা থেকে পাথর নিতে আসা ট্রাক চালক সঞ্জয় দাস বলেন, ‘‘দু’ হাত দূরে দূরে টাকা তোলার ঠেক। বিভিন্ন অজুহাতে কোথাও ৫০-১০০, কোথাও ২০০ টাকা পর্যন্ত তোলাবাজদের দিতে হয়। ওদের কথা মতো টাকা না দিলে ট্রাক আটকে নানা রকম হুমকি শুনতে হয়। বেশি প্রতিবাদ করলে মারধরও করে।’’ একই অভিজ্ঞতার কথা শোনান, মুর্শিদাবাদ, মালদা, রানিগঞ্জ থেকে আসা ট্রাক চালক বসির শেখ, শৌকত আলি, রাজেশ সিংহরা।

তালবাঁধ যাওয়ার রাস্তায় তাদের বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র।

পাথর শিল্পাঞ্চল থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার বিভিন্ন পথে ব্যাঙের ছাতার মতো টাকা তোলার ঠেক গজিয়েছে। ওইসব ঠেক বন্ধের দাবিতে কয়েকমাস আগে পাঁচামি ও তালবাঁধ এলাকার পাথর ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের সর্বস্তরে জানিয়ে একদিনের প্রতিকী ধর্মঘট করেন। এক দিনের ধর্মঘটে নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাথর ব্যবসায়ীদের আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু আশ্বাসই সার, বাস্তবে অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। বরঞ্চ যত দিন যাচ্ছে টাকা তোলার প্রবণতা বাড়ছে বলে দাবি করেন পাথর ব্যবসায়ীরা।

আইএনটিটিইউসি-র যে অস্থায়ী কার্যালয়টি জবরদখলের অভিযোগ উঠছে, সেটি সাগরবাঁধি হয়ে তালবাঁধ যাওয়ার রাস্তায় কাঁদরের ধারে। সংগঠনের যুগ্ম আহব্বায়ক ছুতোর টুডুর দাবি, মঙ্গলবার সকালে গাঁওতার এক নেতার নেতৃত্বে বেশ কিছু মহিলা কার্যালয় দখল করে নেয়। এবং মহিলারাই পাথরের ট্রাক আটকে টাকা তোলে। তিনি বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে পুলিশকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। তাই প্রতিবাদ জানাতে এ দিন তালবাঁধ এলাকার পাথর শিল্পাঞ্চলের সমস্ত কাজকর্ম বন্‌ধের ডাক দেওয়া হয়েছে। যদি প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে পরে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’’

গাঁওতা নেতা সুনীল সোরেন বলেন, ‘‘ওই কার্যালয় থেকেই শাসক দল আশ্রিত টাকা তোলার বিভিন্ন ঠেক দেখভাল করা হত। এবং ওই টাকা তোলা ও টাকার ভাগ বাটোয়া নিয়ে নিজেদের মধ্যে অশান্তি বাধে। তাদেরই একপক্ষ এ দিন বন্‌ধ ডেকেছে। এর সঙ্গে গাঁওতার কোনও সম্পর্ক নেই।’’

তালবাঁধ ক্রাসার ওনার ওয়েলফেয়ার অ্যাশোসিয়েশনের সম্পাদক প্রকাশেন্দু সরকার বলেন, ‘‘তালবাঁধ কাঁদরের ধারের ওই কার্যালয় বা ঠেক থেকে পাথরের ট্ট্রাক আটকে টাকা নেওয়া হত। মঙ্গলবার কী হয়েছে বলতে পারব না। তবে সকাল আটটা নাগাদ আইএনটিটিইউসির সমর্থকরা এসে এলাকার ৮-১০টি খাদান ও প্রায় শ খানেক ক্রাসার বন্ধ করে দেয়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন