Birbhum

রসিদে চাঁদা তুলছেন শ্যামাপদ, দলে বিতর্ক

গোটা ঘটনা নিয়ে বিজেপি-র অন্দরে যথেষ্ট হইচই শুরু হয়েছে। দলের জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল রসিদ কাটার কথা স্বীকার করেছেন।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২০ ০৮:৫২
Share:

সেই রসিদ। নিজস্ব চিত্র

কালীমন্দির তৈরির জন্য রসিদ ছাপিয়ে মোটা অঙ্কের ‘চাঁদা’ তুলছেন বীরভূম জেলা বিজেপি-র সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল—এমনই অভিযোগ তুলে সামাজিক মাধ্যমে সরব হয়েছেন দলের কর্মীদের একাংশ। তাঁদের দাবি, এই কাজ ‘নিয়ম বহির্ভূত’। বিতর্ক আরও বেড়েছে, সেই রসিদে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ বা আরএসএসের অন্যতম প্রাণপুরুষ মাধব সদাশিব গোলওয়ালকরের ছবি থাকায়। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ আরএসএসের স্থানীয় কর্মীদের বড় অংশও। প্রশ্ন উঠেছে, মন্দির গড়তে এ ভাবে দলের জেলা সভাপতি ‘চাঁদা’ তুলতে পারেন কিনা।

Advertisement

গোটা ঘটনা নিয়ে বিজেপি-র অন্দরে যথেষ্ট হইচই শুরু হয়েছে। দলের জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল রসিদ কাটার কথা স্বীকার করেছেন। তবে একই সঙ্গে অভিযোগের পিছনে দলের কিছু লোকের ‘হাত থাকা’র গিকে ইঙ্গিত করেছেন। ঘটনার পিছনে অন্তর্দ্বন্দ্বের ছায়াও দেখছেন দলের নেতৃত্বের একাংশ। সম্প্রতি দলবিরোধী কাজের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে শ্যামপদের বিরোধী হিসেবে পরিচিত দুই নেতা কালোসোনা মণ্ডল এবং দেবাশিস (পলাশ) মিত্রকে। এ বার শ্যামাপদের বিরুদ্ধে উঠল রসিদ দিয়ে টাকা তোলার অভিযোগ, তা-ও দলের অন্দর থেকেই। এর থেকেই স্পষ্ট হচ্ছে দলের কোন্দল বলে মনে করছেন বিজেপি কর্মীদের বড় অংশই।

মাস কয়েক আগে খয়রাশোলের গঙ্গারামচক মৌজায় পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের খোলামুখ কয়লাখনি থেকে দলের নামে জোর করে এক লক্ষ টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছিল বিজেপি-র এক মণ্ডল সভাপতির বিরুদ্ধে। অভিযোগ অস্বীকার করলেও বিষয়টি নিয়ে মামলা চলছে। তার মধ্যেই আবার অভিযোগ উঠায় যথেষ্ট অস্বস্তি দলের অন্দরে।

Advertisement

বিজেপির একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে, ময়ূরেশ্বরের বীরনগরী গ্রামে একটি ভগ্নপ্রায় কালীমন্দির নতুন করে গড়ার জন্য একটি ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ, সেটার এখনও রেজিস্ট্রেশন নেই)। শ্যামাপদ মণ্ডল সেই ট্রাস্টের সভাপতি। মন্দির গড়ার বাজেট এক কোটি। সেই ট্রাস্টের পোশাকি নাম ‘শ্রী গুরুজী সেবা সমিতি’। যে রসিদ ছাপিয়ে টাকা আদায় চলছে বলে অভিযোগ, তাতে ছবি রয়েছে আরএসএসের ‘শ্রী গুরুজী’ গোলওয়ালকরের। বিজেপি কর্মী ও সঙ্ঘসেবকদের একাংশের আপত্তি এখানেই। প্রথম আপত্তি , সঙ্ঘ কখনও এ ভাবে টাকা আদায় করে না। দ্বিতীয়, দলের এক শীর্ষ পদাধিকারী হয়ে কী ভাবে সঙ্ঘচালকের ছবি ব্যবহার করে টাকা আদায় করছেন শ্যামাপদবাবু।

বিজেপি আইটি সেল সামলাতেন প্রতীক চক্রবর্তী নামে এক বিজেপি কর্মী। সম্প্রতি নিজের ফেসবুক পোস্টে ওই রসিদের ছবি দিয়ে তিনি প্রশ্ন ছুড়েছেন—‘‘সত্যিই কি সঙ্ঘের পরম পূজনীয় সরসঙ্ঘ চালক গুরুজীর ছবি দিয়ে রাজনৈতিক পদাধিকারীর টাকা কালেকশন করা বৈধ?’’ এই প্রশ্ন ফেসবুকে দেওয়ার পর দলের কর্মীদের বা সঙ্ঘসেবকদের একাংশের তরফে প্রতিক্রিয়া মিলেছে, তা শ্যামাপদ মণ্ডলের জন্য দৃশ্যতই অস্বস্তিকর। সঙ্ঘের দক্ষিণবঙ্গ প্রান্ত প্রচারক জলধর মাহাতো যদিও বলেন, ‘‘সামাজিক মাধ্যমে সড়গড় নই। বীরভূমের কার্যকর্তাদের কাছে আমাকে বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিতে হবে। তার পরেই এই নিয়ে মন্তব্য করা সম্ভব।’’

অন্য দিকে, শ্যামাপদের বক্তব্য, ‘‘এলাকার ১০০ জনকে নিয়ে ওই সেবা সমিতি গঠিত হয়েছে। দলের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। আমি ওই সমিতির সভাপতি হিসাবে দু’টি রসিদ কেটেছি। একটি ১০ হাজার, অন্যটি ৪১ হাজার টাকার। ৪১ হাজার টাকা এখনও পাইনি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘কালী মন্দিরই গড়া হবে। এখানে টাকা নয়ছয় বা আত্মসাতের প্রশ্নই ওঠে না। কিছু লোক অনর্থক বিষয়টি নিয়ে হইচই করে দলের বদনাম করার চেষ্টা করছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন