পুলিশের অনুমান, ভারী জিনিস দিয়ে মাথা থেঁতলে খুন করা হয়েছে প্রৌঢ়াকে। ছবি: অভিজিত্ সিংহ।
প্রতিদিনই ভোরে প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে ফুল তুলে আনতেন প্রৌঢ়া। মঙ্গলবারও বেরিয়েছিলেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে বাড়ি ফেরননি। মায়ের খোঁজে বেরিয়ে ছোট ছেলে লক্ষ্য করেন পথে লোকজনের জটলা। উৎসাহী হয়ে ওই জটলা সরিয়ে দেখেন, তাঁরই মায়ের অর্ধ নগ্ন রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছে টগর গাছের পিছনে। বাঁকুড়া শহরের ঘটনা।
পুলিশ জানায়, নিহতের নাম কল্যাণী মণ্ডল (৫০)। শহরের কমরারমাঠ এলাকায় তাঁর বাড়ি। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, ভারী জিনিস দিয়ে মাথা থেঁতলে খুন করা হয়েছে তাঁকে। কাকভোরে রেলস্টেশন সংলগ্ন গুড শেডের কাছে রেলের একটি পরিত্যক্ত কটেজের সামনে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় বিস্মিত শহরবাসী। বাঁকুড়া জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার বলেন, ‘‘তদন্ত শুরু হয়েছে। খুনের পিছনে কী কারণ রয়েছে তা খতিয়ে দেখছি।’’
মৃতার পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সকালে প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে ফুল তুলে আনার অভ্যাস কল্যাণীদেবীর দীর্ঘদিনের। ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছ’টা নাগাদ ফিরে আসতেন। বাড়ি ফিরে সংসারের কাজ শুরু করতেন কল্যাণীদেবী। কিন্তু এ দিন নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলেও প্রৌঢ়া বাড়ি ফেরেননি। ছোট ছেলে গুনারাম মণ্ডল মায়ের খোঁজে গিয়ে দেখেন এই দৃশ্য। তাঁর কথায়, ‘‘এই ঘটনা যে ঘটতে পারে তা কল্পনার অতীত ছিল। ওই অবস্থায় দেখতে পেয়ে নিজের জামা খুলে মায়ের গায়ে জড়িয়ে দিই।’’ কিন্তু এ ভাবে তাঁর মাকে খুন হতে হল কেন? সেনাবাহিনীতে কাজ করেন গুনারামের দাদা জয়রামবাবু। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। আমাদের কোনও শত্রু নেই। মা কোনও গয়না পরেও ঘর থেকে বের হননি।’’ বাঁকুড়া সদর থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করে দোষীদের কড়া শাস্তির দাবি তুলেছেন স্বামী ধীরেনবাবু।
কল্যাণী মণ্ডল।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, বাঁকুড়া শহরে ঢোকার মূল সড়ক লালবাজার মোড় থেকে স্টেশনমোড় যাওয়ার রাস্তার একশো মিটারের মধ্যেই রয়েছে একটি রেলওয়ের কটেজ। সেই কটেজটির দেওয়াল ঘেঁষে রয়েছে একটি টগর ফুলের গাছ। ওই গাছের পিছনেই রক্তাক্ত দেহটি পড়েছিল। কটেজের দেওয়ালের নীচের দিকে রক্তের দাগ। ঘটনাস্থলের চারপাশে আগাছার জঙ্গল। ঘটনাস্থলের প্রায় এক কিলোমিটার দূরে লালবাজার মোড়েই রয়েছে সিসি ক্যামেরা। ভোর ৫টা থেকে সকাল ৬টার মধ্যেই এলাকায় লোকজন ভিড় করতে থাকে। এমনই একটি জায়গায় কীভাবে এই ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এই ঘটনার পরেই জেলা শহরে সাধারণ মানুষের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা ও দোষীদের ধরার দাবিতে লালবাজারমোড় থেকে স্টেশনমোড় যাওয়ার রাস্তায় প্রতীকী অবরোধে নামে বামপন্থী মহিলা সংগঠনগুলি।