রোগিণীকে ছাড়া নিয়ে টালবাহানা, অভিযোগ

নার্সিংহোমে বিল জমা করার টাকা হাতে না থাকায় এক রোগীকে আটকে রাখার অভিযোগ উঠল নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এমনকী ‘স্বাস্থ্য সাথী’ প্রকল্পের সরকারি স্বাস্থ্য-কার্ড থাকা সত্ত্বেও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ নগদে বিল দাবি করে তাঁদের আটকে রাখে বলে দাবি ওই রোগীর পরিবারের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৭ ০০:৪১
Share:

বাড়িতে: অঞ্জলী চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

নার্সিংহোমে বিল জমা করার টাকা হাতে না থাকায় এক রোগীকে আটকে রাখার অভিযোগ উঠল নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এমনকী ‘স্বাস্থ্য সাথী’ প্রকল্পের সরকারি স্বাস্থ্য-কার্ড থাকা সত্ত্বেও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ নগদে বিল দাবি করে তাঁদের আটকে রাখে বলে দাবি ওই রোগীর পরিবারের। বাঁকুড়া শহরের পাটপুর জেল রোড এলাকার একটি নার্সিংহোমের ঘটনা। পরে স্থানীয় কাউন্সিলরের মধ্যস্থতায় নার্সিংহোম থেকে ছাড়া পান ওই রোগী।

Advertisement

বাঁকুড়া শহরের রবীন্দ্রসরণি এলাকার বধূ অঞ্জলী চট্টোপাধ্যায় গত ৭ মার্চ ওই নার্সিংহোমে রক্তে অত্যাধিক সুগার ও পায়ের যন্ত্রণা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ তাঁকে আইসিইউ-তে ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু করে। অঞ্জলীদেবীর স্বামী ফটিক চট্টোপাধ্যায় জানান, ভর্তি হওয়ার দিন দুয়েকের মধ্যেই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ তাঁর কাছ থেকে নগদে ২০ হাজার টাকা নেয়। অঞ্জলীদেবী সুস্থ হয়ে ওঠায় শনিবার রাতে তাঁকে ছুটি দেয় নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ। তবে তার আগে আরও প্রায় সাড়ে ৩২ হাজার টাকার বিল তাঁদের মিটিয়ে দিতে বলেন নার্সিংহোমের কর্মীরা।

ফটিকবাবু জানান, কাপড়ের দোকানে কাজ করে সংসার চালান। স্ত্রীকে ভর্তি করার পরে একটি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে ২০ হাজার টাকা নার্সিংহোমে দিয়েছিলেন। ছুটির সময় বাকি টাকা ‘স্বাস্থ্য সাথী’ কার্ড থেকে কেটে নিতে তিনি বলেছিলেন। কিন্তু ওঁরা রাজি হননি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বাকি টাকা না দিলে স্ত্রীকে ছাড়বে না বলে হুঁশিয়ারি দিতে থাকেন নার্সিংহোমের কর্মীরা। কোনওরকমে সাড়ে আট হাজার টাকা জোগাড় করে ওঁদের দিয়েছিলাম। তাতেও ওঁদের মন গলেনি। শেষে স্থানীয় কাউন্সিলর অনন্যা চক্রবর্তীকে খবর দিলে তিনিই নার্সিংহোমের কর্ণধার চিকিৎসক জীতেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলে স্ত্রীকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করেন।’’

Advertisement

১৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অনন্যাদেবী বলেন, “টাকা দিতে না পারলে রোগীকে আটকে রাখা যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপরেও নার্সিংহোমের কর্মীরা অন্যায় ভাবে ওই রোগীকে আটকে রাখছিলেন। ঘটনাটি নার্সিংহোমের কর্ণধার জানার পরেই ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন।’’

নার্সিংহোমের কর্ণধার জীতেনবাবু দাবি করেন, ‘‘ওই রোগিণীকে আটকে রাখা হয়নি। কর্মীরা শুধু তাঁর পরিজনদের ছুটির আগে পুরো বিল মেটাতে বলেছিলেন। তবে ভর্তির সময়েই ওই রোগীর সরকারি স্বাস্থ্য কার্ড রয়েছে জানালে, পুরো বিলই কার্ড থেকে নেওয়া হতো।”

রবিবার অঞ্জলীদেবীর স্বামী ফটিকবাবু ও কাউন্সিলর অনন্যাদেবী ফের ওই নার্সিংহোমে গিয়ে সরকারি স্বাস্থ্য-কার্ডে পুরো বিল মেটান। তাঁদের কাছ থেকে আগে নেওয়া প্রায় সাড়ে ২৮ হাজার টাকা নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষও ফটিকবাবুকে ফেরত দেন। অঞ্জলীদেবীর আক্ষেপ, “কাউন্সিলরের হস্তক্ষেপেই মুক্তি পেলাম। না হলে নার্সিংহোম থেকে ছুটিই পেতাম না। গরিব মানুষের সমস্যা কবে যে নার্সিংহোমগুলো বুঝবে?’’ বাঁকুড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রসূনকুমার দাস বলেন, “ঘটনাটি আমার জানা নেই। বিস্তারিত খোঁজ নিচ্ছি। রোগী পক্ষ যদি আমাদের কাছে অভিযোগ জানান, তাহলে ব্যবস্থা নেব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন