আরও ছ’টি গ্রাম নিল বিশ্বভারতী

Advertisement

দেবস্মিতা চট্টোপাধ্যায়

শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৪৯
Share:

ফাইল চিত্র।

এক দিন বিশ্বভারতীর অংশ হবে চৌপাহাড়ি জঙ্গল সংলগ্ন তাঁদের গ্রামগুলিও। আশায় দিন গুনছিলেন রুবি হেমব্রম, জিতেন মাড্ডি, সুনীল বেসরা ও ছোট্টু মুর্মুরা। শনিবার তাঁদের স্বপ্ন সত্যি হল।

Advertisement

চলতি বছরের ২৫ মে বিশ্বভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসে আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর বক্তব্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে বেশ কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেছিলেন। প্রসঙ্গক্রমে আসে গ্রামীণ পুনর্গঠনে কবিগুরুর দর্শনের কথা। তার পরই বিশ্বভারতীর অধীনে থাকা ৫০টি গ্রাম নিয়ে কাজ করার যেমন প্রশংসা করেছিলেন, তেমনই প্রতিষ্ঠানের ১০০ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই বিশ্বভারতীর অধীনে আরও গ্রাম এনে সংখ্যাটা ১০০ থেকে ২০০ করার আহ্বান জানান। তাতে প্রাণিত হয়ে আরও ৫০টি গ্রামকে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন কর্তৃপক্ষ।

শনিবার, জীবনব্যাপী শিক্ষা ও সম্প্রসারণ বিভাগের উদ্যোগে রামনগরে হওয়া একটি অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে প্রাথমিক ভাবে মোট ১০৬টি গ্রাম নিয়ে কাজ করা শুরু করল বিশ্বভারতী। কবিগুরু পল্লি-পুনর্গঠনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ১৯২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কুঠিবাড়িতে শুরু হয়েছিল ইনস্টিটিউট অফ রুরাল রিকনস্ট্রাকশনের কাজ। পরে তা নাম পায় শ্রীনিকেতন। শান্তিনিকেতন থেকে মাইল দুয়েক দূরে শ্রীনিকেতনেই প্রাণ পেতে থাকে কবিগুরুর গ্রামীণ ভাবনা। সেই সময় পার্শ্ববর্তী ৬টি গ্রামকে নিয়ে কাজ শুরু হয়েছিল। ক্রমে সেই সংখ্যাটা হয়েছিল ৫০। জীবনব্যাপী শিক্ষা ও সম্প্রসারণ বিভাগ বর্তমানে বোলপুর-শ্রীনিকেতন ব্লক ও ইলামবাজার ব্লকের ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত মোট ৫০টি গ্রাম নিয়ে কাজ করছিল। এ বার সেই সংখ্যাটা বেড়ে ১০৬ হল।

Advertisement

গ্রামের সার্বিক উন্নয়নে জীবনব্যাপী শিক্ষা ও সম্প্রসারণ বিভাগ রায়পুর, বিনুরিয়া, ইসলামপুর, পারুলডাঙা, বল্লভপুর, খোসকদমপুর, গোয়ালপাড়া সহ ৫০টি গ্রাম নিয়ে কাজ করছে। সার্বিক উন্নয়নের জন্য গঠন করা হয়েছে ৪০টি গ্রামীণ উন্নয়ন সংস্থা, ১২টি মহিলা সমিতি, ৩৬টি গ্রামীণ পাঠাগার। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময় আলোচনা সভা, উৎসব-অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে মানুষদের সচেতন করার কাজ চলছে। সুবিধার জন্য কয়েকটি গ্রাম নিয়ে ক্লাস্টার অনুযায়ী ভাগ করা হয়েছে। ইলামবাজার চৌপাহাড়ি জঙ্গল সংলগ্ন আদিবাসী গ্রামই রয়েছে প্রায় ১২টি। ধল্লা, রাঙাবাঁধ, বনশুলি, খয়েরডাঙা, আমখই, লক্ষ্মীপুর, পুরাণঢিল সবই আদিবাসী গ্রাম। গ্রামগুলিতে সার্বিক উন্নয়নেরও প্রয়োজন রয়েছে। গত তিন বছর ধরে জঙ্গল সংলগ্ন আদিবাসী গ্রাম এবং লাভপুরের আদিবাসী গ্রামগুলিতে ডাইনি প্রথা নির্মূলেও কাজ করেছে বিশ্বভারতী। এ বার এই গ্রামগুলির দায়িত্ব নেওয়ার ফলে কাজ করা আরও সুবিধা হবে বলেই মনে করছেন কর্তৃপক্ষ।

এ দিন, রামনগর হুল মঞ্চে আদিবাসী সমাজে কুসংস্কার ও সামাজিক ব্যাধি এবং তার প্রতিকার নিয়ে আলোচনাসভায় উঠে আসে শিশুশ্রমিক, নাবালিকা বিবাহ, ডাইনি প্রথা, ঝাড়ফুঁক প্রভৃতি সামাজিক ব্যাধির কথা।

ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি সেন জানান, আগে থেকে যে সমস্ত গ্রামগুলি নিয়ে বিশ্বভারতী কাজ করে চলেছে সেগুলির মানসিক চেহারা বদলে গিয়েছে। নতুন গ্রামগুলিতেও তাই-ই হবে বলে আশাবাদী তিনি। ব্যাধি দূর করতে মহিলাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। আটটি মহিলা দলের হাতে দু’টি করে ফুটবল তুলে দেওয়া হয়।

জীবনব্যাপী শিক্ষা ও সম্প্রসারণ বিভাগের প্রধান সুজিতকুমার পাল বলেন, ‘‘আমরা এই গ্রামগুলিতে আগেই ডাইনি প্রথা নির্মূলের উপরে কাজ করেছি। আপাতত সামাজিক সচেতনতা তৈরির উপরে কাজ হবে। ধীরে ধীরে গ্রামগুলির সার্বিক উন্নয়নের দিকে আমরা এগোব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন