‘সবাই কান খুলে শুনে রাখুন, পরিষ্কার করে বলে রাখছি...’ কী বললেন অনুব্রত?

এ বার মহম্মদবাজারেও দলের ‘লিড’ কত থাকবে, তা আগাম লিখিয়ে নিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।

Advertisement

পাপাই বাগদি

মহম্মদবাজার শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:১০
Share:

হিসেব: আগে কত লিড ছিল, শুনছেন অনুব্রত মণ্ডল। পাশে আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিজিৎ সিংহ। বুধবার মহম্মদবাজারে। নিজস্ব চিত্র

রেকর্ড রাখছেন অনুব্রত মণ্ডল। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ভোটের ‘লিড’ কত থাকবে, তার রেকর্ড। কী ভাবে? দলেরই নেতাদের দিয়ে সেই ‘লিড’-এর পরিমাণ আগাম লিখিয়ে নিচ্ছেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি! দল সূত্রের খবর, ভোটের ফলে সেই ‘লিড’ দিতে না পারলে সংশ্লিষ্ট নেতার কপালে জুটবে ‘তিরস্কার’। আর বেশি ‘লিড’ দিতে পারলে যে ‘পুরস্কার’ বরাদ্দ—তা তো একাধিক কর্মিসভায় বারবারই বলেছেন অনুব্রত।

Advertisement

আগে সাঁইথিয়ায় এই কাজ করেছিলেন। এ বার মহম্মদবাজারেও দলের ‘লিড’ কত থাকবে, তা আগাম লিখিয়ে নিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। বুধবার মহম্মদবাজার ব্লকে বুথ ভিত্তিক কর্মী সম্মেলন করেন অনুব্রত। সেখানেই এক অঞ্চল সভাপতি, এমনকি ব্লক সভাপতির কাছ থেকে ‘লিড’-এর হিসাবের মুচলেকাও নিয়েছেন অনুব্রত। পাশাপাশি সব অঞ্চল সভাপতিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘‘সবাই কান খুলে শুনে রাখুন। পরিষ্কার করে বলে রাখছি, যে অঞ্চলে লিড হবে না, সঙ্গে সঙ্গে সেই অঞ্চলের সভাপতিকে সরিয়ে দেওয়া হবে।’’

এ দিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায় চৌধুরী, সহ-সভাপতি অভিজিৎ সিংহ ও মলয় মুখোপাধ্যায়, সাঁইথিয়ার বিধায়ক নীলাবতি সাহা। তৃণমূল নেতাদের দাবি, সভা শেষে জেলা সভাপতির হাত ধরে চরিচা পঞ্চায়েতের টাংশুলি ও কদমহীড় বুথের শ’খানেক বিজেপি কর্মী তৃণমূলে যোগ দেন।

Advertisement

সভার শুরুতেই তিনি মহম্মদবাজারের একাধিক বুথ সভাপতিকে মঞ্চে ডেকে পাঠিয়ে নানা প্রশ্ন করেন। এ ছাড়াও ব্লকের প্রত্যেক অঞ্চল সভাপতিকে আগামী লোকসভা ভোটে জয়ের ব্যবধান কত হবে, সে প্রশ্ন করেন। উত্তরে সবাই নিজের মতো হিসাব বলেন। জবাব পছন্দ না হলে জয়ের ব্যবধান নিজেই ঠিক করে দিয়েছেন জেলা সভাপতি। ডেউচা অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি সাক্ষীগোপাল পালকে মঞ্চে ডেকে তাঁর অঞ্চলের সুবিধা-অসুবিধা সংক্রান্ত কিছু প্রশ্ন করেন অনুব্রত। এর পরেই জিজ্ঞেসা করেন লোকসভা ভোটে জয়ের ব্যবধান কী হবে? উত্তরে সাক্ষীগোপালবাবু বলেন, ‘‘এ বার ১৫০০ ভোটে জয়লাভ করব।’’ শুনেই তা লিখিত নেওয়ার নির্দেশ দেন অনুব্রত। বোলপুর পুরসভার কাউন্সিলর অমর শেখকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘‘এই অমর ওঁর কাছ থেকে সই করিয়ে নে!’’ এর পরের পালা ছিল মহম্মদবাজার অঞ্চলের সভাপতি অলোক ভট্টাচার্যের। তাঁকে ডেকে অঞ্চলের কাজ সংক্রান্ত কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে জেলা সভাপতি জানতে চান, ভোটে কত লিড হবে। উত্তরে অঞ্চল সভাপতি বলেন, ‘‘প্রায় ২৫০০ লিড দেব।’’ এ কথা শেষ হতেই মহম্মদবাজার ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তাপস সিংহ বলেন, ‘‘অলোক বলতে ভয় পাচ্ছে। আমরা এই অঞ্চলে ৪ হাজার ভোটের লিড দেব।’’

এটা শুনেই অনুব্রত বলে ওঠেন, ‘‘এটা ঠিক তো? ‘কনফার্ম’ তো? অনেকটা ‘ডিফারেন্স’ কিন্তু!’’ তাপসবাবু আশ্বস্ত করে জেলা সভাপতিকে বলেন, চার হাজার লিড হবেই। সঙ্গে সঙ্গে মহম্মদবাজার অঞ্চলের জন্য অমর শেখকে তাপস সিংহের সই নিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন অনুব্রত।

বুধবার সন্ধ্যায় তাপসবাবুকে প্রশ্ন করা হয়, কোনও কারণে লিড চার হাজারের কম হলে কী হবে? সরাসরি জবাব না দিয়ে ব্লক সভাপতি বলেছেন, ‘‘লিড যে চার হাজার হবেই, এতে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। আমি নিজে মহম্মদবাজার পঞ্চায়েতের সমস্ত এলাকা ঘুরেছি। কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেই বুঝেছি, লিড চার হাজারের বেশি হবে। কিন্তু, কম নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন