‘পস’-এ চলছে বই বিকিকিনি। বাঁকুড়া বইমেলায়। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।
নগদে নয়। এ বার বইমেলায় বই কেনার জন্য প্রকাশনা সংস্থাগুলিকে ই-পেমেন্টের মাধ্যমেই টাকা মেটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাঁকুড়া জেলার গ্রন্থাগারগুলি। নেপথ্যে রয়েছে নোট-সঙ্কট।
বুধবার থেকে বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজের মাঠে শুরু হয়েছে সাতদিনের ৩২তম জেলা বইমেলা। থিম রামকিঙ্কর বেইজ। মেলার উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট কবি সুবোধ সরকার। বই নিয়ে ৮৯টি স্টল এসেছে। বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থা থেকে বই কেনার জন্য জেলার প্রতিটি গ্রামীণ গ্রন্থাগার ৬ হাজার, শহর গ্রন্থাগার ১০ হাজার ও জেলা গ্রন্থাগারকে ৪০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ করা হয়েছে।
বরাদ্দ করার টাকার পরিমাণ কম বলে অনেক গ্রন্থাগারেই ক্ষোভ ছিল। কিন্তু সেই টাকাও নগদে কী ভাবে মিলবে তা নিয়েও দুর্ভাবনা ছিল। এই পরিস্থিতিতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রকাশনা সংস্থাগুলির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বইকেনার টাকা ‘মানি ট্রান্সফার’ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাঁকুড়ার জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক মনোরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে গেলে এখন দীর্ঘক্ষণ লাইন দিতে হচ্ছে। নগদ টাকা কতটা তোলা যাবে তারও নিশ্চয়তা নেই। তাই সমস্যা এড়াতেই আমরা এই পন্থা নিয়েছি।”
খবর ছড়াতেই মিশ্র প্রভাব পড়েছে জেলার প্রকাশনী সংস্থাগুলির মধ্যে। চাতক সাহিত্য গোষ্ঠীর সম্পাদক তপন মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের প্রকাশনী সংস্থার নিজস্ব অ্যাকাউন্ট নেই। বই বিক্রি করলে কারও ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টেই দিতে হবে। নানা সমস্যা রয়েছে। এ বার তাই আমরা গ্রন্থাগারগুলিকে বই বিক্রির চেষ্টা করব না বলেই ঠিক করেছি।” মেলায় নগদে বেচাকেনার উপরেই ভরসা করতে চাইছেন তাঁরা। যদিও ‘বাংলার আভাস’ নামের একটি সংস্থার সম্পাদক আশিস পান্ডে বলেন, “সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দিলে সুবিধাই হবে আমাদের।’’ সাধারণ মানুষের হাতে নগদের অভাবের প্রভাব যে বই বিক্রিতেও পড়তে চলেছে, তার আগাম আঁচ পেয়েছে প্রকাশনী সংস্থাগুলি। তাই বাঁকুড়া বইমেলায় নগদহীন কেনাকাটার প্রস্তুতি নিয়েই এসেছেন অনেকে। আনন্দ পাবলিশার্সের প্রতিনিধি জয়ন্ত দাস বলেন, “রঘুনাথপুরে পুরুলিয়া জেলা বইমেলায় অনেকেই নগদ টাকা না থাকায় আমাদের বই কিনতে পারেননি। তাই বাঁকুড়া বইমেলায় আমাদের স্টলে ব্যাঙ্কের ডেবিট বা ক্রেডি়ট কার্ডে কেনাকাটা করার সুযোগ রেখেছি।’’ কলকাতার একটি ইংরেজি প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার সুবর্ণ চক্রবর্তী বলেন, “মানুষের হাতে এখন নগদ টাকার জোগান কম। তাই আমরাও ‘পস’ নিয়েই এসেছি।” তবে কলকাতার অন্য একটি প্রকাশনা সংস্থার কর্মী সন্তু কোলে জানাচ্ছেন, পুরুলিয়া বইমেলায় তাঁরা পস সঙ্গে রাখায় বেশিরভাগ ব্যবসা
তাতেই সেরেছেন।
জেলার প্রকাশনা সংস্থাগুলির কাছে কার্ডে কেনার ব্যবস্থা নেই। ফলে বিক্রি কেমন হবে তা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। বাঁকুড়ার প্রকাশক বিপ্লব বরাট বলেন, “বই বিক্রির জন্য বইমেলার অপেক্ষায় থাকি। নগদের যা সমস্যা চলছে, তাতে বিশেষ ব্যবসা পাব কি না, সংশয় রয়েছে।”
সেই ধন্দ নিয়েই শুরু বইমেলা।