পঁচাত্তর ছুঁয়েও তরতাজা, ভোট-ময়দানে ছুটছেন অজিত

পঁচাত্তর ছুঁয়েও প্রার্থী হওয়ায় আবেগে তাই বলরামপুর ব্লকের বড় উরমা গ্রামের বাসিন্দা অজিত কুম্ভকার এখন আবেগে ফুটছেন। কর্মীদের নিয়ে ঠা ঠা রোদেও গ্রামে গ্রামে প্রচারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন অক্লান্ত অজিতবাবু।

Advertisement

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৮ ০২:২০
Share:

মনোযোগ: বোঝাচ্ছেন অজিত। শুনছে জনতা। ছবি: সুজিত মাহাতো

তৃণমূলের জন্মলগ্নে প্রথম নতুন সেই দলের প্রার্থী হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। তারপর তৃণমূলের শাসনকালে ফের দল তাঁকেই প্রার্থী করেছে।

Advertisement

পঁচাত্তর ছুঁয়েও প্রার্থী হওয়ায় আবেগে তাই বলরামপুর ব্লকের বড় উরমা গ্রামের বাসিন্দা অজিত কুম্ভকার এখন আবেগে ফুটছেন। কর্মীদের নিয়ে ঠা ঠা রোদেও গ্রামে গ্রামে প্রচারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন অক্লান্ত অজিতবাবু। তৃণমূলের বলরামপুর ব্লক সভাপতি সুদীপ মাহাতো বলেন, ‘‘অজিতবাবই এ বার আমাদের সব থেকে প্রবীণ প্রার্থী। এই বয়সেও তিনি যা করছেন, তা সবার কাছে প্রেরণা।’’

গোড়ার দিকে অজিতবাবু লোকসেবক সঙ্ঘের কর্মী ছিলেন। সেই স্মৃতি উসকে তিনি জানান, এক দিন তাঁর গ্রামে তৎকালীন কংগ্রেসের তরুণ নেতা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি এসেছিলেন। তাঁর বক্তৃতা শুনে তিনি কংগ্রেসের সমর্থক হয়ে যান। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে দিন কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল তৈরি করলেন, সে দিন থেকে তিনিও তৃণমূলে চলে আসেন।

Advertisement

১৯৯৮ সালে পুরুলিয়ার জঙ্গলমহল সিপিএমের কার্যত দুর্জয় ঘাঁটি ছিল। সিপিএমের বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেলেও লোকের বুক কাঁপত বলে অভিযোগ। সেই সময়েই বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতিতে অজিতবাবু তৃণমূলের হয়ে ভোটে দাঁড়ান। সেই লড়াইয়ের স্মৃতি এখন তাজা।

তিনি বলেন, ‘‘সিপিএমের ভরা সময়েও আমি ২৬২ ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলাম।’’ তারপর আর ভোটে দাঁড়াননি। কিন্তু দলের প্রার্থীদের জন্য কাজ করেছেন। নব্য তৃণমূলদের উপরে অভিমানে দূরে সরে যাননি। তিনি বলেন, ‘‘এ বারে সৃষ্টিধরবাবু (মাহাতো) বললেন, ‘দলের প্রথম নির্বাচনে আপনি প্রার্থী হয়েছিলেন। আপনি দলের অনেক পুরনো কর্মী। এ বারও আপনাকেই প্রার্থী হতে হবে।’ সকলে মিলে ধরল বলে ফেরাতে পারলাম না। দাঁড়িয়ে পড়লাম।’’ এ বারও তিনি পঞ্চায়েত সমিতিরই প্রার্থী।

বার্ধক্যে পৌঁছলেও এখনও মনে প্রাণে তিনি সেই আগের মতোই। কাকভোরে ঘুম থেকে উঠে বাড়ির গবাদি পশুর দেখভাল করে স্নান সেরে রুটি-ছানা খেয়ে কর্মীদের নিয়ে বেড়িয়ে পড়ছেন। কেন্দাডি, বনডি, ছোট উরমা, বারঘুটু-সহ আশপাশের টোলায় অজিতবাবু মানুষজনের কাছে অত্যন্ত পরিচিত মুখ। তাঁর কথায়, ‘‘কর্মীদের আগেই আমি তৈরি হয়ে যাই। শরীরে কোনও রোগব্যাধি নেই। ওষুধপত্রও খাই না।’’ এক কর্মীর কথায়, ‘‘অজিতদা এই বয়সেও নিজের পুরনো মোটরবাইক নিয়ে প্রচারে বেরোন। কখনও সখনও আমরাও তাঁকে মোটরবাইকে তুলে নিই।’’

কাছ থেকে দেখেছেন ইন্দিরা গাঁধীকে। বলরামপুরে রাজীব গাঁধীকেও দেখেছেন। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে তিনি শ্রদ্ধাশীল। তাঁর কথায়, ‘‘লড়াই করেই উনি দল গড়ে রাজ্য থেকে বামফ্রন্টকে সরিয়েছেন। বলরামপুরে কী দিন ছিল! শান্তি ফিরিয়েছেন। এটা কম কীসের?’’

ছয় ছেলে, ছয় বৌমা, ১২ জন নাতি-নাতনি সহ এখনও অজিতবাবুর যৌথ পরিবার। তাঁর এক ছেলে কাশীনাথ কুম্ভকারের কথায়, ‘‘বাবা আমাদের বড় গাছের মতো আগলে রেখেছে।’’ দাদু ভোটে দাঁড়ানোয় খুশি তাঁর নাতি-নাতনিরাও। তাদের মধ্যে নাতনি সুপ্রিয়া কুম্ভকারের ভোটাধিকার হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘দাদুকে ভোট দিতে সোমবার সকালেই বুথে যাব। সে জন্য তর সইছে না।’’

আর বাকি নাতি-নাতনিরা দাদু ফিরলেই প্রচারে কী কী ঘটল, সেই গল্প শুনতে ছেঁকে ধরছে।

পরের দিন ফের নতুন গল্পের রসদ খুঁজতে প্রচারের পথে নেমে পড়ছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement