ভাজুইয়ের জমাটি আসর সিউড়িতে

লোক গবেষক আদিত্য মুখ্যোপাধ্যায় জানান, ভাজুই গ্রামীণ শষ্য উৎসব। যা এখন লুপ্তপ্রায় লোক উৎসব। গ্রামীণ মহিলাদের সমকালীন নানা বিষয়ের কথা উঠে আসে ভাজুই গানের আসরে।

Advertisement

তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৩৫
Share:

গান: রবীন্দ্রপল্লির সংস্কৃতি মঞ্চে চলছে অনুষ্ঠান। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

‘টাকা চলে না, চলে না রে ৫০০ টাকা/ ১০০০ টাকা চলে না, শুনে বড়লোকের রাতে ঘুম আসে না, আবার ঘরে দেখি ১০ টাকার কয়েনও চলে না’— নোট বাতিলের বছর পূর্তির আগে এমনই গানের কলি গেয়ে শোনালেন লাভপুরের ভাজুই গানের মহিলা শিল্পীর দল।

Advertisement

সোমবার রাতে রবীন্দ্রপল্লির কালীমন্দির সংলগ্ন সাংস্কৃতিক মঞ্চে ওই অনুষ্ঠান হয়। কার্তিকের হালকা শীতের আমেজে এ ভাবেই মেতে ওঠে রাস উৎসব ও লোকসংস্কৃতির মেলা। কর্মকর্তাদের দাবি, শহুরে মানুষদের কাছে লোকসংস্কৃতির অনাবিল আনন্দ তুলে ধরতেই এই প্রয়াস। এ বার ষোলো বছরে পা দিয়েছে মেলা। এ বারের উপস্থাপনা ছিল ভাজুই গান।

লোক গবেষক আদিত্য মুখ্যোপাধ্যায় জানান, ভাজুই গ্রামীণ শষ্য উৎসব। যা এখন লুপ্তপ্রায় লোক উৎসব। গ্রামীণ মহিলাদের সমকালীন নানা বিষয়ের কথা উঠে আসে ভাজুই গানের আসরে। কোনও লিপি ছাড়াই গ্রামীণ মহিলারা দল বেঁধে মুখে মুখে ছড়া কেটে, গান গেয়ে, ঘুরে ঘুরে নেচে আসর মাতিয়ে রাখেন। রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত কড়িধ্যা যদুরায় হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক তথা এই উৎসবের অন্যতম কর্মকর্তা কল্যাণ ভট্টাচার্য জানান, ভাদ্র মাসে ইন্দ্র দ্বাদশীর পর দিন থেকে সাত দিনের এই ব্রত। মেয়েরা এই ব্রত করেন। জিতাষ্টমীর আগের দিন ‘ভাঁজো’ বিসর্জন হয়।

Advertisement

অপদেবতার হাত থেকে শষ্যরক্ষার জন্য প্রার্থনা করা হয় এই উৎসবে। এই উপলক্ষে গ্রামে আবাহন, বলিদান, ভড় ইত্যাদি হয়। প্রাচীন আমলে বীজ পরীক্ষার এক ব্যবস্থা এই উৎসবের মাধ্যমে হতো। গ্রাম বাংলার এই সংস্কৃতি মূলত কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। গ্রামের মেয়েরা নিজেরাই ছড়া কেটে, গান গেয়ে, নাচ করে কৃষিকেন্দ্রিক বিনোদন উৎসবে মেতে উঠতো। লাভপুর, নানু্‌র, ময়ূরেশ্বরের কিছু কিছু জায়গায় এখনও ভাজুই বা ভাঁজো গানের প্রচলন আছে। মূলত সাত রকমের শষ্যবীজকে অঙ্কুরিত করে তার থেকে নতুন চারা নিয়ে হয় এক প্রতিযোগিতা। যার চারা ভাল হতো, তাঁর কাছ থেকে বীজ নিয়ে সংরক্ষণ করা হতো। সেই আমলে এই উৎসবের মধ্যে দিয়ে চলত বীজ পরীক্ষার প্রক্রিয়াকরণ।

কল্যাণবাবুর কথায়, ‘‘সম্প্রতি আমাদের স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের ভাজুই গান কলা উৎসবে জেলায় প্রথম হয়। রাজ্যস্তরেও প্রশংসিত হয়।” সঞ্চালক বরুণ দাসের দাবি, ‘‘এ দিন দু’ঘণ্টারও কিছু বেশি সময় চলে অনুষ্ঠান। তাতে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।’’ শনিবার থেকে শুরু হওয়া ছ’দিনের এই উৎসবের এ দিন ছিল তৃতীয় দিন। উৎসব কমিটির পক্ষে সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিকাশ সাহা জানান, অতীতে এই মঞ্চে থেকেই শহরের মানুষ মালদার গম্ভীরা, মেদিনীপুরের শীতলাগান, বাঁকুড়ার ঝুমুরের মতো অনুষ্ঠান দেখেছেন। উপরি পাওনা ছিল জমজমাট মেলা। রাস উপলক্ষে এক ঢিলে দুই পাখি, ভাজুই গান শোনা আর মেলা দেখা— শহরের অনন্য বিনোদন সন্ধ্যা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন