ধৃত চাঁই-সহ ১৫, উদ্ধার ৫৪টি মোটরবাইক
Crime

পড়ে পাওয়া চাবি দিয়েবাইক-চুরির হাতেখড়ি 

তদন্তকারীদের দাবি, চক্রগুলির মূল পাণ্ডা দীপক চৌধুরী। বাড়ি ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার মুশাবনি থানা এলাকায়।

Advertisement

রথীন্দ্রনাথ মাহাতো

বান্দোয়ান শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২০ ০১:০৫
Share:

সার-দিয়ে: বান্দোয়ান থানা চত্বরে রাখা উদ্ধার হওয়া মোটরবাইকগুলি। নিজস্ব চিত্র

এলাকায় চোরাই মোটরবাইক বিক্রির চেষ্টা চলছে বলে খবর এসেছিল। হানা দিয়েছিল বান্দোয়ান থানার পুলিশ। দেখা গেল, সুতো ছড়িয়ে রয়েছে অনেক দূর পর্যন্ত। হদিস মিলল দু’টি আন্তঃরাজ্য মোটরবাইক চোরাই চক্রের। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মোট ১৫ জন গ্রেফতার হয়েছে। পুরুলিয়া পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগান বলেন, ‘‘ঝাড়খণ্ড, ঝাড়গ্রাম ও পুরুলিয়ার বিভিন্ন জায়গায় চক্র দু’টি কাজ করত। তল্লাসি চালিয়ে ৫৪টি চোরাই মোটরবাইক উদ্ধার হয়েছে।’’

Advertisement

তদন্তকারীদের দাবি, চক্রগুলির মূল পাণ্ডা দীপক চৌধুরী। বাড়ি ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার মুশাবনি থানা এলাকায়। পেশায় ইলেক্ট্রক মিস্ত্রি। কাজের সূত্রে মাঝেমধ্যেই ঘাটশিলা থেকে ট্রেনে চড়ে জামশেদপুরে যেতে হত। এক দিন জামশেদপুর স্টেশনের কাছে একটি মোটরবাইকের চাবি কুড়িয়ে পায় সে। দাঁড় করিয়ে রাখা বাইকগুলি ওই চাবি দিয়ে খোলার চেষ্টা শুরু করে। একটি বাইক চালুও হয়ে যায়। আর ‘হাতেখড়ি’ হয়ে যায় দীপকের।

পুলিশ জানাচ্ছে, কিছু দিনের মধ্যেই ‘মাস্টার কি’ জুটিয়ে চুরিতে নেমে পড়ে দীপক। মুশাবনি থানা এক বার তাকে ধরেও ফেলে। কিছু দিন জেল খেটে বেরিয়ে এসে আবার পুরনো ধান্দা ফেঁদে বসে দীপক। এ বারে তার সঙ্গী হয় সুকুমার গোয়ালা (‌গোপ) ও শেখ সামজাদ।

Advertisement

সুকুমারের আদি বাড়ি ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ির ওদলচুয়ায়। তবে ছোটবেলা থেকেই ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার ঘাটশিলায় থাকাত সে। ২০১৯ সালে বিনপুর থানার পুলিশের হাতে এক বার ধরাও পড়েছিল। শেখ সামজাদের বাড়ি পূর্ব সিংভূমের চাকুলিয়াতে। হালে থাকছিল জামশেদপুরের আজাদবস্তিতে। তদন্তকারীদের দাবি, মূলত চুরি করত দীপক। সুকুমার ও সামজাদ চোরাই মোটরবাইক বিক্রির ব্যবস্থা করত।

সুকুমারের সঙ্গে স্টিকার আর সাদা নম্বর প্লেট নিয়ে দীপক বেরিয়ে পড়ত। চেষ্টা করত, রোজ একটা করে মোটরবাইক চুরি করার। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, কোনও ‘পার্কিং’-এ গিয়ে একটি মোটরবাইক নিশানা করে নিত দু’জনে। নতুন বাইক ছিল বেশি পছন্দের। সুযোগ বুঝে হেলমেট পরে ‘মাস্টার কি’ নিয়ে চলে যেত বাইকের কাছে। ‘স্টার্ট’ দিয়েই চম্পট। পথে যাতে নজর-ক্যামেরা না থাকে, সে ব্যাপারে আগে থেকে নিশ্চিত হয়ে নিত তারা। কিছুটা দূরে ফাঁকা জায়গায় বদলে ফেলত মোটরবাইকের নম্বর। গায়ে কিছু লেখা থাকলে তার উপরে সেঁটে দিত রং-বেরঙের স্টিকার।

পুলিশের দাবি, চুরির পরে মোটরবাইক নিয়ে যাওয়া হত ঘাটশিলা, গালুডি ও মুশাবনির ডেরায়। সেখানেই ঘাঁটি গাড়ত দীপক। সুমুকার ও সামজাদ বিভিন্ন জায়গায় এজেন্টেরদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পাচারের ব্যবস্থা করত। চুরির জন্য মোটরবাইক পিছু ছ’-সাত হাজার টাকা আসত দীপকদের হাতে। হাত বদলে ক্রেতাদের কাছে যখন বাইক যেত, তখন তার দাম হত ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা।

এ ভাবেই গত ১৯ জানুয়ারি বান্দোয়ানের জুগিডিতে একটি চোরাই বাইক বিক্রির চেষ্টা চলছিল। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পাকড়াও করে কালীপদ মুর্মু ও নিত্যলাল মুড়াকে। তারা বান্দোয়ান এলাকায় দীপকদের ‘এজেন্ট’ হিসাবে কাজ করত বলে দাবি তদন্তকারীদের। ধৃতদের জেরা করে উদ্ধার হয় দু’টি মোটরবাইক। তার পরে হেফাজতে নিয়ে দু’টি আন্তঃরাজ্য বাইক-চুরি চক্রের হদিস মেলে। পুরুলিয়ার বরাবাজার, ঝাড়গ্রামের জামবনি, বেলপাহাড়ি, ঝাড়খণ্ডের ঘাটশিলা, মুশাবনি, চাকুলিয়া বহড়াগোড়া, পরশুডি ও ওড়িশার ময়ূরভঞ্জের বাংরিপোশিতে হানা দিয়ে উদ্ধার হয় মোট ৫৪টি মোটরবাইক। তবে, তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, অধিকাংশ মোটরবাইক তারা চুরি করেছে জামশেদপুরের বিষ্টুপুর, সাকচি ও জুবিলিপার্কের মতো জায়গা থেকে।

২০১৮ সালে বান্দোয়ান ব্লক চত্বর থেকে একটি মোটরবাইক চুরি হয়েছিল। এ যাত্রা বরাবাজার থেকে সেটি উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, দীপকের চোরাই-চক্রের এক ‘এজেন্ট’ নিজেই সেটি চালাত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন