বাঁধভাঙা: নজরুলের কোলে কান্না মেয়ের। সাজা ঘোষণার পরে। বুধবার সিউড়ি জেলা আদালতে। নিজস্ব চিত্র
কলেজ ছাত্রীকে গুলি করে খুনের ঘটনায় নিহতের জামাইবাবু ও তার এক সঙ্গীকে মঙ্গলবার দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত। বুধবার দু’জনকেই যাবজ্জীবন সাজা শোনালেন বীরভূম জেলা আদালতের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মুকুল কুণ্ডু। সাজাপ্রাপ্তেরা হল নজরুল ইসলাম ওরফে লাকি ও সন্দীপন মাহারা।
মামলার সরকারি আইনজীবী সৈয়দ সমিদুল আলম জানিয়েছেন, খুনের জন্য প্রত্যেককে যাবজ্জীবন সাজা এবং ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছেন বিচারক। অনাদায়ে আরও এক বছর কারাবাস। অন্য দিকে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টার জন্য উভয়ের ৫ বছর কারাবাস ও ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা হয়েছে। অনাদায়ে আরও ৫ মাস সশ্রম কারাবাস হয়েছে। নজরুলের ক্ষেত্রে অস্ত্র আইনে দু’টি পৃথক ধারায় মামলা হয়েছি। প্রতিটির জন্য তাকে ৩ বছর করে কারাবাসের সাজা দিয়েছেন বিচারক। সব ক’টি সাজাই এক সঙ্গে চলবে।
সরকারি আইনজীবী জানান, ২০১৫ সালের ২০ অগস্ট গুলিবিদ্ধ হন কলেজ ছাত্রী কুসুম ওরফে টুনি খাতুন। দিদি শাবানার সঙ্গে স্কুটিতে বাড়ি ফেরার সময় তাঁকে গুলি করা হয়। সিউড়ির ফকিরপাড়ার বাসিন্দা কুসুমকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরের দিন ভোরে মারা যান তিনি। বোনের উপর গুলি চালানোর ঘটনায় সিউড়ি থানায় স্বামী নজরুল এবং এক অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন শাবানা।
এ দিন বছর আটেকের মেয়ে বর্ষাকে নিয়ে আদালতে উপস্থিত ছিলেন শাবানা। স্বামীর সাজা ঘোষণার পরে বলেন, ‘‘আদালতের বিচারে খুশি। বোন বিচার পেল।’’ মেয়ে খুনের বিচার পেলেন বলে জানিয়েছেন শাবানার মা নূরজাহান বিবিও। সাজা শোনার পরে জেলে যাওয়ার পথে মেয়েকে জড়িয়ে কেঁদে ফেলে নজরুল। স্ত্রীর সঙ্গে তার কিছুটা বাদানুবাদও হয়।
অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী সোমনাথ মুখোপাধ্যায় জানান, সাজা ঘোষণার আগেই কান্নায় ভেঙে পড়ে নজরুল ও তার সঙ্গী সন্দীপন মাহারা। যতটা সম্ভব কম সাজার আর্জি জানায় বিচারকের কাছে। নজরুলের আর্জি ছিল, তার মেয়ে ছোট। তাকে মানুষ করতে হবে। অন্য দিকে সন্দীপন বলে, তার বাবা–মায়ের বয়স হয়েছে। তবে সরকার পক্ষের আইনজীবী কম সাজার বিরোধিতা করেন।
সৈয়দ সমিদুল আলমের কথায়, ‘‘আমার যুক্তি ছিল, বাচ্চা মেয়েটি জন্ম থেকে মায়ের কাছেই থাকে। শাবানা একটা কাজ পেয়েছেন। অতএব মেয়ের কথা ভাবার নজরুলের প্রয়োজন নেই। তা ছাড়া ঠান্ডা মাথায় এই খুন সংগঠিত করেছে দুজনেই। তাই সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে সেটা যেন বিবেচ্য না হয়।’’ তবে দুই আইনজীবীই জানাচ্ছেন, যেহেতু এটি বিরলতম অপরাধ নয়, বিচারক রায় দেওয়ার সময় যাবজ্জীবন সাজা শুনিয়েছেন।
সোমনাথবাবু জানান, নজরুল আদালতে জানায়, সে উচ্চ আদালতে যেতে চায়। কিন্তু আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় জেলা আইনি পরিষেবা কেন্দ্র থেকে আইনজীবীর ব্যবস্থা করা হোক। আদালত তাতে সম্মত হয়েছে।