স্মৃতি জড়ানো বাড়িতে সুভাষ-স্মরণ

দিলীপবাবু জানান, সুভাষচন্দ্র কংগ্রেস ছেড়ে নতুন দল গঠন করলেও কংগ্রেসের অনেক নেতাই তাঁকে শ্রদ্ধা করতেন।

Advertisement

প্রশান্ত পাল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:১৮
Share:

শহরে: পুরুলিয়ার নামোপাড়ার বাড়িতে সুভাষচন্দ্র। ছবি: দিলীপকুমার গোস্বামীর সৌজন্যে

আটাত্তর বছর আগেকার কথা। ১৯৩৯ সালের ৯ ডিসেম্বর। সুভাষচন্দ্র এসেছিলেন এই পুরুলিয়াতেই। শহরের একটি বাড়িতে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। মঙ্গলবার পুরুলিয়ার নামোপাড়ার সেই চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে পালিত হল সুভাষচন্দ্রের জন্মজয়ন্তী।

Advertisement

কংগ্রেস ছেড়ে ফরওয়ার্ড ব্লক গঠনের সময়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে মতাদর্শ প্রচার করেছিলেন সুভাষচন্দ্র। পুরুলিয়া তখন মানভূমের সদর। জেলার ইতিহাস গবেষক দিলীপকুমার গোস্বামী জানান, ১৯৩৯-এর এপ্রিলে কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেন সুভাষচন্দ্র। পুরুলিয়ায় তখন কংগ্রেসের প্রতিপত্তি। দল ছাড়ায় অনেকেই কটাক্ষ করছেন তাঁকে। এই পরিস্থিতিতে তিনি এলেন জেলায়।

দিলীপবাবু জানান, সুভাষচন্দ্র কংগ্রেস ছেড়ে নতুন দল গঠন করলেও কংগ্রেসের অনেক নেতাই তাঁকে শ্রদ্ধা করতেন। তিনি আসবেন শুনে সবারই একটাই প্রশ্ন— তাহলে উঠবেন কোথায়? তখন মানভূম কংগ্রেসের সহসভাপতি নীলকণ্ঠ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর নাতি প্রদ্যোৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুরুলিয়া বার অ্যাসোসিয়েশনের হলে আলোচনা হচ্ছিল সুভাষচন্দ্র কোথায় থাকবেন তা নিয়ে। ঠাকুরদা বলেছিলেন, আমাদের বাড়িতেই থাকবেন।’’

Advertisement

১৯৩৯-এর ৯ ডিসেম্বর ট্রেনে পুরুলিয়া পৌঁছলেন সুভাষচন্দ্র। তাঁকে স্বাগত জানাতে মানুষের ঢল নেমেছিল স্টেশনে। নতুন তৈরি হওয়া ফরওয়ার্ড ব্লকের মানভূমের নেতা তখন অন্নদাপ্রসাদ চক্রবর্তী। তাঁর আত্মজীবনীতে পাওয়া যায় সেই দিনের কথা। ট্রেন থেকে নামতে দেখা গেল, সুভাষচন্দ্রের গা পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে। স্টেশনেই চায়ের বন্দোবস্ত করা হল। তার পরে শহর ঘুরে, শোভাযাত্রা করে কংগ্রেস অফিসের সামনে দিয়েই তাঁকে চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। নেতার শরীর খারাপ দেখে কর্মসূচি বাতিল করার কথা বলেছিলেন অন্নদাপ্রসাদ। সুভাষচন্দ্র রাজি হননি।

দিলীপবাবু বলেন, ‘‘শহরে অনেকেরই নিজস্ব গাড়ি ছিল সেই সময়ে। কিন্তু সুভাষচন্দ্রের কাজের জন্য একটিও পাওয়া যাচ্ছিল না। ভাড়া গাড়ির ব্যবস্থা করলে সেটাও পুলিশ নিয়ে নেয়।’’

পঞ্চকোট রাজবংশের প্রকৃতীশ্বরলাল সিংহ দেও তখন এগিয়ে আসেন। দিলীপবাবু জানান, সদ্য কেনা গাড়িতে সুভাষচন্দ্রকে নিয়ে মানভূমের বিভিন্ন জায়গা ঘুরেছিলেন তিনি। মানভূমে জুড়ে অনেকগুলি সভা করেন সুভাষচন্দ্র। শেষ সভা ছিল পুরুলিয়া শহরের জুবিলি ময়দানে। সেখান থেকে তাঁকে আদ্রায় গিয়ে ট্রেন তুলে দেওয়া হয়। তখনও জ্বর কমেনি।

সে দিনের স্মৃতিতে চট্টোপাধ্যায় বাড়ির সামনে রয়েছে সুভাষচন্দ্রের আবক্ষ মূর্তি। এ দিন আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে বাড়ির উঠোন। অনেকে সেখানে গিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন প্রাক্তন শিক্ষক বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবীপ্রসাদ অধিকারী প্রমুখ।

প্রদ্যোৎবাবু বলেন, ‘‘এ আমাদের গর্বের স্মৃতি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন