ইউনেস্কোর হেরিটেজের সম্ভাব্য তালিকায় নাম। তবু কেন শিকে ছিঁড়ছে না মন্দিরনগরীর?
Bishnupur Municipality

পরিকাঠামোয় পিছিয়ে একদা মল্ল-রাজধানী

শহরের পরিকাঠামোর হাল ফেরানো যে দরকার, মানছেন পুরসভা ও বিষ্ণুপুর মহকুমা প্রশাসনের আধিকারিকেরাও। তাঁদের দাবি, এ নিয়ে ইতিমধ্যে পদক্ষেপ করাও শুরু হয়েছে।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

 বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:০৪
Share:

টেরাকোটা মন্দিরের জন্য বিখ্যাত বিষ্ণপুর। —ফাইল চিত্র।

(শেষ পর্ব)

Advertisement

বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষা পেতে রাজদূর্গ ছিল বৃত্তাকার সুদীর্ঘ পরিখায় ঘেরা। যুদ্ধের কামান তৈরির জন্য কামানঢালায় গড়া হয়েছিল উপযুক্ত পরিকাঠামো। নগরীতে জলকষ্ট এড়াতে সাতটি দীর্ঘ বাঁধ খনন করা করা হয়েছিল। লালমাটির কাঁকুরে টিলা বা খোয়াই রাজদরবারের চারপাশের সৌন্দর্য বাড়াত।— মল্লরাজধানী বিষ্ণুপুরের বর্ণনায় এমনই সব তথ্য তুলে ধরেন গবেষকেরা।

Advertisement

কিন্তু গত কয়েক দশকে অবৈধ নির্মাণের দাপটে ধাপে ধাপে বিষ্ণুপুর থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে সেই সুদীর্ঘ পরিখা। কামানঢালার উপর এখন গড়ে উঠেছে নতুন বসতি। বাঁধগুলি মজে যাচ্ছে। লালমাটির টিলা জমি মাফিয়াদের দাপটে হারিয়ে গিয়েছে। বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র বা হেরিটেজ তকমা পেলে প্রায় হাজার বছর প্রাচীন মল্লরাজধানীর হারিয়ে যাওয়া ওই সব ঐতিহাসিক চিহ্নগুলি রক্ষা করা যেত বলে মনে করেন অনেকেই।

বিষ্ণুপুর নিয়ে গবেষণায় যুক্ত পাঁচমুড়া কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক নীহারকান্তি হাজরার মতে, “ইউনেস্কোর হেরিটেজ তকমা পেলে ইতিহাস ধ্বংসকারী কাজকর্ম অবশ্যই রোখা যেত। পাশাপাশি শহরের উন্নয়নে আন্তর্জাতিক অনুদানও মিলত।”

তবে ওই স্বীকৃতি না পাওয়ার পিছনে এই শহরের বেহাল পরিকাঠামো বড় অন্তরায় বলে দাবি বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশের। তাঁদের মতে, বিষ্ণুপুরের শহরের রাস্তাঘাট খুবই সঙ্কীর্ণ। বহু জায়গায় নিকাশি ব্যবস্থাও বেহাল। দেশ-বিদেশ থেকে আসা পর্যটকদের জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামোরও অভাব এই শহরে। এ সব কারণে অতীতে ইউনেস্কোর প্রতিনিধিদের নজর কাড়তে ব্যর্থ হয়েছে বিষ্ণুপুর।

শহরের পরিকাঠামোর হাল ফেরানো যে দরকার, মানছেন পুরসভা ও বিষ্ণুপুর মহকুমা প্রশাসনের আধিকারিকেরাও। তাঁদের দাবি, এ নিয়ে ইতিমধ্যে পদক্ষেপ করাও শুরু হয়েছে।

বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান গৌতম গোস্বামী জানান, শহরের পথ চওড়া করতে ‘আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেনেজ সিস্টেম’ গড়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই শহরের নানা জায়গায় সেই কাজ শেষ হয়েছে। বিষ্ণুপুরের ঐতিহ্যবাহী মন্দিরগুলিতে পর্যটকদের গাড়ি যাতে সহজেই যাতায়াত করতে পারে, সে জন্য শহরের ভিতর রবীন্দ্রস্ট্যাচু মোড় এলাকার রাস্তা আরও চওড়া করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এত দিন শহরের নোংরা ফেলার জায়গা ছিল না। নতুন ডাম্পিং গ্রাউন্ডও
গড়া হচ্ছে।

বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক অনুপকুমার দত্ত বলেন, “পোড়ামাটির হাট চালু করে জেলার শিল্পকে পর্যটকদের সামনে আমরা নিয়মিত তুলে ধরছি। শহরের নানা জায়গায় দেওয়াল চিত্র এঁকে আরও আকর্ষণীয় করা হচ্ছে। শহরের পরিকাঠামোর উন্নয়নে পুরসভার সঙ্গে নানা পরিকল্পনা
নেওয়া হচ্ছে।”

বিষ্ণুপুরের শিক্ষক তথা ইতিহাস গবেষক সুব্রত পণ্ডিত বলেন, “গত কয়েক বছরে ধাপে ধাপে বিষ্ণুপুরে বেশ কিছু পরিকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। আগামী দিনে এই কাজ আরও গতি পাবে বলেই আমরা আশাবাদী। গাল না ছেড়ে বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্রের স্বীকৃতি পাওয়ার অপেক্ষায় আমরা রয়েছি। সরকার ও প্রশাসন এ নিয়ে যথাযথ সচেষ্ট হোক, এটাই চাই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন