উল্টোরথে ডার্বির উত্তাপে তেতে দু’ভাগ বিষ্ণুপুর

বর্ষা ভেজা দিনে লড়াইয়ের এই আঁচ নিতে বহু মানুষ ভিড় করেন বিষ্ণুপুর শহরে। বসে নেই প্রশাসনও। বিষ্ণুপুর থানার সামনে দস্তুর মতো ম্যারাপ বাঁধা হয়েছে।

Advertisement

শুভ্র মিত্র

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৭ ০২:২৮
Share:

টক্কর: কৃষ্ণগঞ্জ আট পাড়ায় তৈরি গড়ুরের কাট-আউট। ষাঁড়ের মডেল তৈরি করে তাল ঠুকছে মাধবগঞ্জ এগারো পাড়াও। নিজস্ব চিত্র

এ যেন ডার্বি! উল্টোরথের আগে ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের বড় ম্যাচের উত্তাপ ছড়িয়েছে বিষ্ণুপুরে। দু’পক্ষই অন্যপক্ষকে টেক্কা দেবে বলে হুঙ্কার ছুঁড়ছে।

Advertisement

খেলা নয়। কিন্তু বছর-বছর উল্টোরথের দিন বিষ্ণুপুরের এগারো পাড়া আর আট পাড়ার শোভাযাত্রা নিয়ে এমনই উত্তেজক পরিস্থিতি তৈরি হয়। দু’পক্ষই শোভাযাত্রায় জৌলুসে একে অন্যকে টক্কর দিতে কোমরে কষি বেঁধে নেমে পড়ে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম সেই একই উত্তাপ ধরে রেখে ঐতিহ্য বজায় রেখেছেন।

বর্ষা ভেজা দিনে লড়াইয়ের এই আঁচ নিতে বহু মানুষ ভিড় করেন বিষ্ণুপুর শহরে। বসে নেই প্রশাসনও। বিষ্ণুপুর থানার সামনে দস্তুর মতো ম্যারাপ বাঁধা হয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে আজ সোমবার উল্টোরথে জেলার বিভিন্ন থানা থেকে পুলিশ কর্মীদেরও তুলে আনা হচ্ছে।

Advertisement

উল্টোরথকে কেন্দ্র করে বিষ্ণুপুর কার্যত দুই শিবিরে ভাগ হয়ে যায়। এক পক্ষের প্রতীক গড়ুর। অন্য পক্ষের ষাঁড়। গড়ুরের মডেল নিয়ে তাল ঠুকছে কৃষ্ণগঞ্জ আট পাড়া রথ উৎসব ষোলো আনা কমিটি। অন্য দিকে, ষাঁড়ের মডেল নিয়ে মাধবগঞ্জ এলাকার এগারো পাড়া রথ উৎসব ষোলো আনা কমিটিও প্রতাপ দেখাতে প্রস্তুত।

শহরের প্রবীণ বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এ লড়াই বহু দিনের। এক সময় লড়াইের তীব্রটা এতটাই মারাত্মক ছিল যে দু’পক্ষের মানুষদের মধ্যে এই সময়ে মুখ দেখাদেখিও বন্ধ হয়ে যেত। এখন অতটা না থাকলেও লড়াইের ঝাঁঝ কম নেই। দু’তরফের শোভাযাত্রা নগর পরিক্রমায় পথে নামলেই তা বিলক্ষণ টের পান দর্শকেরা।

কার শোভাযাত্রায় বেশি চমক, কাদের আলোকসজ্জায় নতুনত্ব বেশি, কাদের বাদ্যিতে পাড়া কাঁপে— এমনই সব তুল্যমূল্য বিচার চলে। আবার গড়ুর ষাঁড়কে তুলে নিয়ে যাচ্ছে, কিংবা ষাঁড়ের গুঁতোয় গড়ুর কুপোকাত— এমন নানা ব্যঙ্গচিত্রও শোভাযাত্রায় থাকে। তা দেখেও দর্শকেরা আমোদ কুড়োন।

কৃষ্ণগঞ্জ রথ উৎসব কমিটির সভাপতি রবিলোচন দে, প্রবীণ সদস্য মথুর দে, শান্তিনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়রা বলছেন, ‘‘এ বারের বাজেট আট লক্ষ টাকা। রাধালালজীউয়ের রথ যে পথে যাবে, তার পুরোটাই চন্দননগরের আলোর তোরণ সাজানো হয়েছে। পিতলের রথের সঙ্গে সাতটি চৌদল, ঢাক, ব্যান্ডপার্টি, তাসা, ঢোল, সানাই— সব কলকাতা থেকে আসছে।’’ কমিটির সদস্যদের হুঙ্কার— ‘‘প্লাইউড দিয়ে এমন কার্টুন তৈরি করা হচ্ছে, ওরা ধারে পাশে আসতে পারবে না। আলো আর বাজনাতেও টিকতে পারবে না।’’

তাল ঠুকছে এগারো পাড়া রথ উৎসব কমিটিও। ওই কমিটির সভাপতি শান্তিনাথ পাল বলেন, ‘‘আমাদের বাজেট পাঁচ লক্ষ টাকা। মদনগোপালের রথের সঙ্গে থাকছে ছ’টি চৌদল। বাজনা আসছে আসানসোল, রানিগঞ্জ থেকে। ভাংরা নাচ, আদিবাসী নাচ-বাজনাও থাকছে। সচেতনতার বার্তা দিতে মাধবগঞ্জ মহল্লা জুড়ে আলোর মাধ্যমে আমরা জল দূষণ, যুদ্ধ নয়, খাদ্য-শৃঙখল, যোগব্যায়াম প্রভৃতি তুলে ধরছি। দর্শকেরাই বিচার করবেন, কারা সেরা।’’

রবিবার মদনগোপাল ও লালজীউ মন্দিরে বসন্তকুঞ্জে হাজির ছিলেন বিধায়ক তুষার ভট্টাচার্য, পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। সারা রাত সেখানে অনুষ্ঠান চলে। মেলাও জমে ওঠে।

রাজনৈতিক নেতা থেকে পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা রবিবার থেকেই বিভিন্ন জায়গায় বলে বেরাচ্ছেন, সবাই যেন সংযত থাকেন। শান্তি বজায় রাখেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন