প্রতীকী ছবি।
প্রৌঢ়ার মাথা ফেটে রক্ত ঝরছে। তাঁর ধুলো-রক্ত মাখা মাথা কোলে নিয়ে আহত এক যুবক হাত নেড়ে গাড়ি থামানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু ভ্রুক্ষেপ নেই কারও। হুশ করে বেরিয়ে যাচ্ছে একের পর এক গাড়ি। সেই দৃশ্য দেখে মোটরবাইক থেকে নেমে দুর্ঘটনায় আহত দু’জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠালেন দুই যুবক। রবিবার বিকেলে পুরুলিয়া মফস্সল থানা এলাকার উইলকক্স রোড বাইপাসের উপরে চাকদা এলাকার ঘটনা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বিকেল প্রায় চারটে নাগাদ চাকদা এলাকায় কোনও ভাবে একটি মোটরবাইক উল্টে ছিটকে পড়েন চালক যুবক ও আরোহী ওই প্রৌঢ়া। দু’জনেই গুরুতর চোট পান। প্রৌঢ়ার মাথা ফেলে গল গল করে রক্ত ঝরতে থাকে। সঙ্গী যুবকও হাতে-পায়ে চোট পেয়েছেন। তবে তিনি জ্ঞান হারাননি। তিনি কোনওরকমে উঠে ওই প্রৌঢ়ার কাছে গিয়ে তাঁর মাথা কোলে তুলে নেন। তারপরে হাত নেড়ে রাস্তায় গাড়ি থামোর চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু একের পর এক গাড়ি সেখান দিয়ে পেরিয়ে গেলেও থামেনি।
কয়েক জন মহিলা তাঁদের ওই অবস্থায় দেখে হাঁটা থামিয়ে চিৎকার করে লোকজন ডাকার চেষ্টা করেন। কিন্তু দু’টি গ্রামের মধ্যবর্তী ওই এলাকায় জনবসতি বিশেষ না থাকায় লোকজনের সাড়া পাওয়া যায়নি।কিন্তু তাঁদের চিৎকারে কোনও গাড়ি অবশ্য থামেনি।
সেই সময় কংসাবতী নদী তীরের মেলা দেখে ওই রাস্তায় মোটরবাইকে ফিরছিলেন দুই যুবক চাকদা গ্রামের বাসিন্দা সোমেশ্বর গড়াই ও অভিষেক পাল। তাঁরা গাড়ি থেকে নেমে পড়েন। সোমেশ্বরের কথায়, ‘‘মহিলার রক্তে রাস্তা ভেসে যাচ্ছিল। তা দেখে মোটরবাইক থেকে নেমে পড়ি। এত রক্তক্ষরণ হয়েছে, যে তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠাতে না পারলে বড় বিপদ হয়ে যাবে বুঝতে পারি। কিন্তু হাত দেখিয়ে কয়েকটা গাড়ি থামানোর চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। শেষে কপাল জোরে একটা টোটোকে পেয়ে যাই।’’
দুই বন্ধুতে আহত দু’জনকে টোটোয় তুলে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তাঁরা ফোন করে ডাকেন তাঁদের বন্ধু শহরের যুব তৃণমূল কর্মী বিধান বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিন জনে মিলে হাসপাতালে তাঁদের ভর্তি করেন।
কিছু দিন আগেই পুরুলিয়ার ব্লাড ব্যাঙ্কের শোচনীয় অবস্থায় থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত দুই শিশু রক্ত পাচ্ছে না শুনে কাজ ফেলে দৌড়ে গিয়েছিলেন দুই যুবক।
এ ক্ষেত্রেও আহতদের পাশে দাঁড়ালেন আরও দুই যুবক। মানবিকতার এই দিক নতুন করে উঠে এল পুরুলিয়ায়। এখন সময়ের পিছনে সবাই দৌড়ন। সেখানে পরপর এই দু’টি ঘটনা একপ্রকার নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন অনেকে।