তৃণমূল-বিজেপির সমান আসন

রামপুর পঞ্চায়েতে পিছোল বোর্ড গঠন

জেলা পরিষদের ৪২টি আসনের সব ক’টি তাদের দখলে। তা-ও ভোটের ঢের আগে। ১৯টি পঞ্চায়েত সমিতি তাদের হাতে। মোট ১৬৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৬৪টি তারা জিতে নিয়েছে। তার মধ্যেও শাসকদলের অস্বস্তি তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতকে ঘিরে।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

মহম্মদবাজার শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৮ ০০:৪০
Share:

জেলা পরিষদের ৪২টি আসনের সব ক’টি তাদের দখলে। তা-ও ভোটের ঢের আগে। ১৯টি পঞ্চায়েত সমিতি তাদের হাতে। মোট ১৬৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৬৪টি তারা জিতে নিয়েছে। তার মধ্যেও শাসকদলের অস্বস্তি তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতকে ঘিরে।

Advertisement

ময়ূরেশ্বর ১ ব্লকের মল্লারপুর ১ এবং মহম্মদবাজার ব্লকের গণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে জয় পেয়েছে বিজেপি। এই দু’টিতেই নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছি বিজেপি। সেটা নিয়ে জেলা তৃণমূলে খচখচানি আছেই। তবে এই মুহূর্তে ৩-৩ আসনে টাই হয়ে যাওয়া মহম্মদবাজারের রামপুর পঞ্চায়েতই চর্চার কেন্দ্রে। এই পঞ্চায়েতে মোট আসন ৬টি। তৃণমূল এবং বিজেপি—দুই দলই ৩টি করে আসন পেয়েছে। তাই ‘টস’-এর আগেই বিপক্ষের প্রার্থীকে নিজের ঘরে তুলে পঞ্চায়েতের দখল নিতে উঠেপড়ে লেগেছে যুযুধান দুই পক্ষ তৃণমূল এবং বিজেপি। চেষ্টা যে চলছে, তা স্বীকারও করে নিয়েছে দু’পক্ষ। মহম্মদবাজার ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তাপস সিংহ বলছেন, ‘‘টসে কার হার, কার জিত হবে সেটার উপরে ভরসা না করে, বিপক্ষের কোনও প্রার্থীকে আমাদের দলে টেনে বোর্ড গঠন করা যায় কিনা, সেই চেষ্টা নিশ্চয়ই রয়েছে।’’ একই দাবি বিজেপির জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়। তাঁর কথায়, ‘‘কৌশল বলছি না। তবে আমরা সহজে ময়দান ছাড়ব না।’’ টানটান এই অবস্থায় দুই দলই তাই তাদের জেতা প্রার্থীদের নজরদারিতে রেখেছে।

বিনা ভোটে জেতা আসনগুলির জয়ী প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা যাবে—এই মর্মে সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে শুক্রবার। তার আগেই পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের নির্দেশে ছিল, সম্পূর্ণ নির্বাচন হয়েছে এমন যে ১০টি পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন হবে ২৭-২৯ তারিখের মধ্যে। আজ, সোমবারই ওই পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, রবিবার রাত পৌনে ৮টা নাগাদ জেলা প্রশাসন বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দেয়, আইনশৃঙ্খলা জনিত সমস্যার আশঙ্কা থাকায় সোমবার বোর্ড গঠন হচ্ছে না। এক প্রশাসনিক কর্তা বলেন, ‘‘পুলিশ আমাদের বলেছিল, ওখানে অশান্তি হতে পারে। তাই আপাতত বোর্ড গঠন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ কবে হবে বোর্ড গঠন, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রের খবর, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে রামপুর পঞ্চায়েতের দখল ছিল সিপিএমের হাতে। মাঝপথে সিপিএমের প্রধান সরাসরি তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে পঞ্চায়েতের ক্ষমতা ভোগ করেছে শাসকদল। এ বার ভোটে অবশ্য তৃণমূলের বিপক্ষেই ভোট দিয়েছেন এলাকার একটা বড় অংশের মানুষ। পঞ্চায়েতের ৩টি আসন তো বটেই, পঞ্চায়েত এলাকায় থাকা মহম্মদবাজার পঞ্চায়েত সমিটির ২টি আসনও বিজেপি-র ঝুলিতে গিয়েছে। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নেতাদের ‘ঔদ্ধত্য’, ‘দুর্নীতি’, ‘পক্ষপাতিত্বে’ ক্ষুব্ধ হয়ে মহম্মজবাজারের বাসিন্দাদের একাংশ বিজেপির দিকে ঝুঁকেছেন। ঘটনা হল, জেলায় সীমিত সংখ্যক আসনে নির্বাচনে পর যে ব্লকে বিজেপি তৃণমূলকে ভাল টক্কর দিয়েছে, সেটা মহম্মদবাজারই। তার জেরে ভোটের পরেই সব দায়িত্ব থেকে বসিয়ে দেওয়া হয় তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি রাকেশ মণ্ডলকে। তাপসবাবু নিজেও আগে বলেছিলেন, অঞ্চল সভপতির জন্যই রামপুর পঞ্চায়েতে আমাদের এমন হাল।

বিজেপি সূত্রে জানা যাচ্ছে, বোর্ড গঠনের জন্য বিক্ষুব্ধ ওই তৃণমূল নেতার দিকে তাদের নজর রয়েছে। বিজেপি নেতারা এখন বলছেন, ‘‘আমাদের ক্ষোভের কারণ রাকেশ নন। বরং তৃণমূলের নীতি।’’ এমন পরিস্থিতিতে শাসকদলও রাকেশের প্রতি এখন সুর নরম করেছে। পাছে তিনি বিজেপিকে সমর্থন করে বসেন। ব্লক সভাপতির কথায়, ‘‘হতে পারে কিছু অভিযোগ ওঁর (রাকেশ) বিরুদ্ধে আছে। তবে এটাও সত্যি তিনি তিন তৃণমূল প্রার্থীকে জিতিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেও চলেছেন।’’

রাকেশ নিজে অবশ্য বলছেন, ‘‘তৃণমূলের টিকিটে জেতা তিন প্রার্থী কী সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটা আমার জানার কথা নয়। কারণ দল আমাকে নির্বাচনের পরেই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে। প্রকাশ্যে দলের কোনও কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন