হুড়ায় দ্বন্দ্বের নালিশ

প্রথম দিনে সাতে সাত শাসকদল

পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের প্রথম দিনেই গুলি, বোমায় তপ্ত হয়ে উঠেছিল পুরুলিয়া। পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনের প্রথম দিন মঙ্গলবার অবশ্য নির্বিঘ্নেই কাটল। এ দিন ১৯টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে বান্দোয়ান, মানবাজার ১ ও ২, পুঞ্চা, হুড়া, নিতুড়িয়া এবং পুরুলিয়া ১ তে বোর্ড গঠন হয়। সবগুলিই পেয়েছে তৃণমূল।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:২৭
Share:

সাথে: পুরুলিয়া ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি (সাদা শাড়িতে) নাচের তালে। রাঁচী রোডে। ছবি: সুজিত মাহাতো

পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের প্রথম দিনেই গুলি, বোমায় তপ্ত হয়ে উঠেছিল পুরুলিয়া। পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনের প্রথম দিন মঙ্গলবার অবশ্য নির্বিঘ্নেই কাটল। এ দিন ১৯টি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে বান্দোয়ান, মানবাজার ১ ও ২, পুঞ্চা, হুড়া, নিতুড়িয়া এবং পুরুলিয়া ১ তে বোর্ড গঠন হয়। সবগুলিই পেয়েছে তৃণমূল। কোথাও পটকা ফেটেছে, কোথাও ধামসা-মাদল বাজিয়ে হয়েছে আদিবাসী নৃত্যও।

Advertisement

যদিও বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘প্রশাসন তৃণমূলের সংখ্যাগরিষ্ঠ পঞ্চায়েত সমিতিগুলিতে প্রথম দিনে নির্বিঘ্নে বোর্ড গঠন করিয়ে দিল। বিজেপি যে সব পঞ্চায়েত সমিতি দখল করেছে এবং ত্রিশঙ্কু থাকা সমিতিগুলিতে পরের দু’টি দিনে বোর্ড করানোর দিন ঠিক করেছে। ওই দুই দিনে তৃণমূল পরিকল্পিত ভাবে গোলমাল করে পঞ্চায়েতের মতো সমিতিতেও বোর্ড গঠন স্থগিত করে দেবে। সময় পেয়ে তৃণমূল ফের সমিতিতে আমাদের জয়ী সদস্যদের ভাঙিয়ে ওই সব সমিতি দখলের চেষ্টা চালাবে।’’ যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব অভিযোগ মানতে চাননি। জেলা প্রশাসনের এক কর্তাও দাবি করেন, ‘‘উত্তেজনাপ্রবণ সমিতিগুলিতে পরে বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক অবান্তর।’’

এ দিন মানবাজার মহকুমা এলাকার পাঁচটি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে চারটিতে বোর্ড গঠন হল। মানবাজার ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হয়েছেন পুষ্পা দাস ও সহ-সভাপতি পদে হন দিলীপ পাত্র। এই পঞ্চায়েত সমিতির মোট আসন ২৬টি। তৃণমূল ২১টি, সিপিএম ২টি ও একটি নির্দল পেয়েছে। মানবাজার ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন যথাক্রমে চন্দ্রশেখর দাস ও বিকাশ মাহাতো। এই পঞ্চায়েত সমিতির মোট আসন ১৮টির মধ্যে তৃণমূল ১৬টি, বিজেপি ও নির্দল ১টি করে পেয়েছে। বান্দোয়ান পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন যথাক্রমে আহ্লাদি মাহাতো ও রবীন্দ্রনাথ হেমব্রম। এখানে পঞ্চায়েত সমিতির মোট আসন ১৮টি। তৃণমূল ১২টি ও বিরোধীরা ৬টি আসন পেয়েছে। পুঞ্চা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও সহ-সভাপতি হন যথাক্রমে কৃষ্ণচন্দ্র মাহাতো ও পার্থসারথি মাহাতো। এখানে ২৩টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ২১টি ও সিপিএম ২টি আসন পেয়েছে।

Advertisement

পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি ও বিধায়ক— শাসকদলের এই দুই নেতার দ্বন্দ্বের প্রভাব নিতুড়িয়াতে পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনে পড়ে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন তৃণমূলের নিচুতলার কর্মী-সমর্থকেরা। দিনের শেষে অবশ্য তৃণমূলের ঐক্যবদ্ধ ছবিটাই সামনে এসেছে নিতুড়িয়া ব্লকে।

সভাপতি ও সহ-সভাপতি পদে প্রত্যাশামাফিক নির্বাচিত হয়েছেন যথাক্রমে সরস্বতী টুডু ও শান্তিভূষণপ্রসাদ যাদব। আশঙ্কা থাকলেও এই ব্লকে বিধায়ক অনুগামীরা ওই দুই পদে প্রার্থী দেননি। নির্বাচনে নিতুড়িয়া ব্লকের ১৭টি আসনের সবক’টিতেই জিতেছে তৃণমূল।

রবিবার পুরুলিয়া শহরে একটি হোটেলে জেলার ১২টি পঞ্চায়েত সমিতিতে সভাপতি ও সহ-সভাপতি পদ কারা পাবেন, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠক করেছিলেন জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো ও রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন। সেখানেই স্থির হয়েছিল নিতুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির আসন তফসিলি উপজাতি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হওয়ায় ফের সভাপতি হচ্ছেন না শান্তিভূষণবাবু। পরিবর্তে শান্তিভূষণবাবুই সরস্বতী টুডুর নাম প্রস্তাব করেছিলেন। গত পাঁচ বছর সভাপতি হিসাবে সমিতি পরিচালনা করেছেন শান্তিভূষণবাবু। সেই প্রেক্ষিতে দলীয় সিদ্ধান্ত ছিল সহ-সভাপতি হবেন তিনি। মঙ্গলবার বোর্ড গঠনে সেটাই হয়েছে। তবে বিধায়কের সঙ্গে দ্বন্দ্বের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে শান্তিভূষণবাবু বলেন, ‘‘আমাদের ব্লকে দলের মধ্যে কোনও দ্বন্দ্ব নেই। সবটাই অপপ্রচার।’’

পুরুলিয়া ১ পঞ্চায়েত সমিতির ২২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পায় ১৫টি, কংগ্রেস চারটি, সিপিএম দু’টি এবং বিজেপি একটি। তৃণমূলের তরফে ফের এখানে সভাপতি হন পদ্মাবতী মাহাতো, সহ-সভাপতি হন শিবরাম কালিন্দী। হুড়া পঞ্চায়েত সমিতির ২৫টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের দখলে গিয়েছিল ১৭টি। বিজেপি পায় আটটি। এ দিন তৃণমূলের দুই সদস্য গরহাজির হন। ১৫-৮ ভোটে জিতে সভাপতি হন তৃণমূলের প্রসেনজিৎ মাহাতো, সহ-সভাপতি হন সুভাষচন্দ্র মাহাতো। অনুপস্থিতদের সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তৃণমূলের বিগত বোর্ডের সভাপতি সুভাষ মাহাতো। স্থানীয় সূত্রে খবর, সুভাষবাবু নিজেই এখানে সভাপতি পদের দাবিদার ছিলেন।

অন্যদিকে এই পদের আর এক দাবিদার ছিলেন বিধায়ক ঘনিষ্ঠ প্রসেনজিৎ পরামাণিক। তিনি আগে সুভাষ মাহাতোর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত থাকলেও পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকেই দু’জনের দূরত্ব বাড়ে। তবে দিন দুয়েক আগে জেলা নেতৃত্ব এই পঞ্চায়েত সমিতিতে প্রসেনজিৎ পরামাণিককে সভাপতি করার সিদ্ধান্ত জানান।

দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নবেন্দু মাহালি বলেন, ‘‘সর্বসম্মতিক্রমে প্রসেনজিৎ সভাপতি হয়েছেন। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কোনও ব্যাপার নেই।’’ আর সুভাষ মাহাতোর দাবি, ‘‘শরীর খারাপ থাকায় এ দিন আমি উপস্থিত হতে পারিনি।’’

আজ, বুধবার ত্রিশঙ্কু পঞ্চায়েত সমিতিগুলিতে কী হয়, সবার নজর সে দিকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন