সারছে লালপুল, যানজট শহরময়

দৃশ্য ১: দিনের শুরুতেই আচমকা মুখ্য রাস্তার উপর চৌরাস্তায় সব রকমের আসাযাওয়া বন্ধ। অস্থায়ী ডিভাইডার সরিয়ে কোনও অত্যুৎসাহী যুবক মোটরবাইক নিয়ে পেরতে গিয়ে আটকা পড়েছে। আর তারই জেরে দীর্ঘ ক্ষণ বিপর্যস্ত থাকল স্টেশন রোড। দৃশ্য ২: রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে ত্রিশুলাপট্টির রাস্তায় তৃণমূল কার্যালয় এবং বোলপুর থানার মাঝেই যানজটে আটকা পড়েছে একটি অ্যাম্বুল্যান্স। আধ ঘণ্টা ধরে নানা রকম চেষ্টা-চরিত্র করে শেষমেশ সেটি বেরতে পারলেও তত ক্ষণে যানজট আরও দীর্ঘ হয়েছে। ৪০ ডিগ্রির গরমে দুর্বিষহ অবস্থা যাত্রী থেকে চালকের।

Advertisement

মহেন্দ্র জেনা

বোলপুর শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৫ ০১:২৯
Share:

আটকা পড়েছে অ্যাম্বুল্যান্স। এমনই ছবি দেখা মিলছে রোজ দিন। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

দৃশ্য ১: দিনের শুরুতেই আচমকা মুখ্য রাস্তার উপর চৌরাস্তায় সব রকমের আসাযাওয়া বন্ধ। অস্থায়ী ডিভাইডার সরিয়ে কোনও অত্যুৎসাহী যুবক মোটরবাইক নিয়ে পেরতে গিয়ে আটকা পড়েছে। আর তারই জেরে দীর্ঘ ক্ষণ বিপর্যস্ত থাকল স্টেশন রোড।

Advertisement

দৃশ্য ২: রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে ত্রিশুলাপট্টির রাস্তায় তৃণমূল কার্যালয় এবং বোলপুর থানার মাঝেই যানজটে আটকা পড়েছে একটি অ্যাম্বুল্যান্স। আধ ঘণ্টা ধরে নানা রকম চেষ্টা-চরিত্র করে শেষমেশ সেটি বেরতে পারলেও তত ক্ষণে যানজট আরও দীর্ঘ হয়েছে। ৪০ ডিগ্রির গরমে দুর্বিষহ অবস্থা যাত্রী থেকে চালকের।

দৃশ্য ৩: রেলসেতু থেকে নেমে নিচুপট্টি রাস্তা। সংকীর্ণ রাস্তার অনেকটাই সাইকেল, মোটরবাইক এবং দোকানদারদের মাল নিয়ে আসা ট্রাক-মিনিট্রাক দখল করে রেখেছে। রাস্তায় দাপাদাপি চার চাকা টোটোর। রাস্তার ধারেই দোকানহাটে ক্রেতাদের ভিড়। সব মিলিয়ে যানজটে রাস্তা ব্যবহারকারীদের প্রাণ ওষ্ঠাগত।

Advertisement

দৃশ্য ৪: শান্তিনিকেতন রাস্তা ধরে এগোতেই শ্যামবাটী ক্যানাল। তারও পুনর্নিমাণের কাজ চলছে। পাশেই অস্থায়ী সংকীর্ণ সেতু দিয়েই চলে সব ধরনের যানবাহন। নজরদারির অভাবে এখানেও দীর্ঘ যানজট। সোনাঝুরির জঙ্গল কিংবা কসবা এবং প্রান্তিক দিক থেকে আসা গাড়িই হোক— যানজটে পড়ছে সকলেই।

দীর্ঘ টালবাহানার পরে কয়েক যুগের দাবি মেনে রেল কর্তৃপক্ষ শহরের প্রাণকেন্দ্র লালপুল সংস্কারের কাজ শুরু করেছে। ওই সংকীর্ণ সেতুর উপর দিয়ে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের যানবাহন আসা-যাওয়া করে। পাশাপাশি আশপাশের একাধিক জেলার মানুষ জনও নির্ভর করেন ওই সেতুর উপরই। কিন্তু, সেই সংকীর্ণ সেতুই ছিল বোলপুর শহরের যানজটের একটি বড় কারণ। কিন্তু, সেটি সম্প্রসারণের কাজ শুরু হওয়ার পরে কার্যত এমনই ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে শহরবাসীর যানজট-যন্ত্রণা! অভিযোগ, রাস্তায় নজরদারির জন্য কোনও রক্ষী নেই। নেই পুরসভার অস্থায়ী কর্মীরাও। ফলে লেন ভেঙে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি ঢুকেই পড়া হোক কিংবা রাস্তা দখল— রোখার জন্য কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। যার নিট ফল, তীব্র যানজটে বারবারই রুদ্ধ হচ্ছে শহরের স্বাভাবিক গতি। রেল ও প্রশাসনের আশ্বাস, লালপুল নতুন করে চালু হলেই শহরের পরিচিত যানজটের ছবিটাই পাল্টে যাবে। কিন্তু, তার আগে দুর্ভোগ বাড়ছে বই কমছে না বলেই বাসিন্দাদের অভিযোগ। যার নেপথ্যে রেল ও প্রশাসনের উপযুক্ত পরিকল্পনাহীনতা এবং বিকল্প রাস্তার অভাবকেই সাম্প্রতিক যানজটের নেপথ্যে দায়ী করছেন শহরের মানুষ। সমস্যার সমাধানে বিকল্প রাস্তার দাবিও তাঁরা তুলেছেন।

এ দিকে, রেল সূত্রের খবর, ৮ কোটি ৩ লক্ষ ৯১ হাজার ৩৫৪ টাকা ব্যয়ে ‘টু লেন রোড ওভারব্রিজ’ বানাবে রেল দফতর। পূর্ব রেলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৩ মিটার চওড়া এবং ২৮ মিটার লম্বা এই সেতুতে সাড়ে ৭ মিটারের মধ্যে আসা-যাওয়া করবে যানবাহন। ওই সেতুর দু’পাশে দেড় মিটার করে জায়গা ছাড়া থাকবে ফুটপাতের জন্য। ২০১৬ সালের পয়লা জানুয়ারির মধ্যেই লালপুলের সম্প্রসারণের এই কাজ শেষ হবে বলে রেলের আশ্বাস। যদিও তার আগেই এই মরসুমের দুর্গাপুজো এবং পৌষ মেলার মতো দু’টি মেগা ইভেন্ট রয়েছে। এমন দু’টি বড় উৎসবের সময়ে শহরের হাল কী হবে, ভেবেই শিউরে উঠছেন বোলপুরবাসী।

শহরের এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন পুরসভাও। বোলপুরের পুরপ্রধান সুশান্ত ভকতের দাবি, স্থানীয় বাসিন্দা এবং এলাকায় আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের অসুবিধার কথা মাথায় রেখে পরিস্থিতির মোকাবিলায় ঠিক কী কী বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘‘যানজট প্রতিকারে শহরের মুখ্য রাস্তার উপর থাকা বেশ কিছু মোড়ে নজরদারি বাড়ানো হবে। আশা করছি, রেল দফতরও পৌষ মেলার আগেই ওই সেতু সম্প্রসারণের কাজ শেষ করে যাত্রীদের জন্য খুলে দেবে।”

দুর্ভোগ মেটানোর আশ্বাস দিচ্ছে রেলও। পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনের ডিআরএম বদ্রি নারায়ণ বলছেন, ‘‘লালপুল সেতুর সম্প্রসারণ সাময়িক ভাবে হয়তো কিছু সমস্যা তৈরি করছে। এটা বেশি দিন হবে না। আমরা দ্রুত কাজ সারার চেষ্টা করছি। তা ছাড়া সমস্যা মেটাতে স্থানীয় পুরসভাও বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছে। সেগুলি নিয়েও আলোচনা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন