Saraswati Puja 2024

সরস্বতীর বিসর্জনের আগে মাজারে পৌঁছয় সিন্নি

গ্রাম সূত্রে জানা গেল, বহু কাল আগে পীরবাবার মাজারের জন্য ১২ বিঘা জমি দিয়েছিলেন গ্রামের হিন্দু জমিদারেরাই। তাঁরাই মাজার দেখভালের জন্য খাদিমদের গ্রামে নিয়ে এসেছেন।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত 

দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:২৭
Share:

খোসনগর গ্রামের সরস্বতী প্রতিমা। দেবীর বাহন জোড়া বাঘ। —নিজস্ব চিত্র।

সরস্বতী পুজোর সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে পীর সাহেবের মাজারও! দুবরাজপুরের খোসনগর গ্রামে এটাই বাস্তাব। ধর্মকে কেন্দ্র করে দেশের নানা অংশে অসহিষ্ণুতা নিয়ে চর্চার মাঝেই শাল নদী ঘেঁষা দুবরাজপুরের গ্রামে দুই সম্প্রদায়ের সম্প্রীতির ছবি।

Advertisement

গ্রামে ঢুকতেই ডান দিকে রয়েছে পীর কেরওয়ানী শাহ আবদুল্লা সাহেবের মাজার। প্রতি শ্রাবণের শেষ বৃহস্পতিবার পীর সাহেবের প্রয়াণ দিবস বা উরস উৎসব হয়। প্রচুর মানুষ আসেন। বছরের আরও একটি সময় ওই মাজারে ভিড় জমে। তা হল সরস্বতী পুজোর সময়। পীরসাহেবের মাজার দেখাশোনার দায়িত্ব থাকা দুই খাদিম (ভক্ত বা সেবায়েত) শাহজাহান মোল্লা এবং আব্দুল মীরন বলছেন, ‘‘গ্রামের জমিদার পরিবারের শতাব্দী প্রাচীন সরস্বতী মূর্তির বিসর্জনের আগে পীরবাবার মাজারে সিন্নি (পায়েস বা ক্ষীর) চড়ানোই রীতি।’’ সিন্নি না-চড়ালে যে প্রতিমা বের করা যায় না বলে জানালেন সরস্বতী পুজোর শরিকেরাও।

গ্রাম সূত্রে জানা গেল, বহু কাল আগে পীরবাবার মাজারের জন্য ১২ বিঘা জমি দিয়েছিলেন গ্রামের হিন্দু জমিদারেরাই। তাঁরাই মাজার দেখভালের জন্য খাদিমদের গ্রামে নিয়ে এসেছেন। হিন্দুদের পৃষ্ঠপোষকতায় মাজার দেখভাল করেন তাঁরাই। সরস্বতী পুজোর বিসর্জনের আগেই নয়, খোসনগরে সারা বছর ধরে গৃহস্থের যে কোনও মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানেই পীরবাবার মাজার আর দেবী সরস্বতী মন্দির ছুঁয়ে যান গ্রামের মানুষ।

Advertisement

একই ভাবে শাহজাহান মোল্লা, আব্দুল মীরনরা সরস্বতী পুজো তাঁদের নিজেদের বলেই মনে করেন। গ্রামের সব চেয়ে প্রাচীন ওই মন্দিরের সরস্বতী পুজো ও সম্প্রীতির মেববন্ধন নিয়ে গর্বিত গ্রামের প্রত্যেকেই। বুধবার গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, বড়দের পাশাপাশি রংবেরঙের পোশাক পরে মন্দিরে ভিড় জমিয়েছে কচিকাঁচারা ।

পীর কেরওয়ানী শাহ আবদুল্লা সাহেবের মাজার। —নিজস্ব চিত্র।

জমিদারি গিয়েছে বহুকাল। তৎকালীন গ্রামের জমিদার ঘোষেদের প্রাচীন মন্দিরটি কয়েক মাস আগে ভেঙে পড়ায় বাঁশ কাপড়ের মণ্ডপ তৈরি হয়েছে এ বার। সরস্বতী পুজো চালান জমিদার পরিবারের বংশধরদের প্রায় ২৭ ঘর শরিক। বেশ কিছু ঘোষ ও পাল পদবিধারী এবং এক ঘর সরকার পদবিধারীরাই বর্তমান শরিক। তাঁদের অন্যতম বিশ্বজিৎ মোহন ঘোষ, মনোজিৎ ঘোষ, বিপত্তারণ সরকার, রণজিৎ পালেরা জানিয়েছেন, ১২৮১ বঙ্গাব্দে তাঁদের পূর্বপুরুষেরা এই গ্রামে সরস্বতী পুজোর প্রচলন করেন। পুজো প্রচলনের চার বছর পর থেকে দেবালয় তৈরি হওয়া শুরু হলেও মন্দির নির্মাণ শেষ হয় ৯ বছর পরে। সেই থেকেই সরস্বতী বিসর্জনের আগে সিন্নি চড়ানোর রীতি চলে আসছে। তবে সরস্বতী পুজো শুরুর কত আগে পীরবাবার মাজার, তা জানাতে পারেননি শরিকরা।

খোসনগর গ্রামের শতাব্দী প্রাচীন সরস্বতী প্রতিমাও আর পাঁচটা গ্রামের থেকে আলাদা। দেবীর বাহন এখানে হাঁস নয়। বরং এক জোড়া বাঘ। এখানেই শেষ নয়। সরস্বতীর এক পাশে রয়েছেন মহালক্ষ্মী, অন্য পাশে রাজলক্ষ্মী। সঙ্গে রয়েছেন জয়া, বিজয়া। এবং আরও কয়েকটি পরী। দুর্গাপুজোর মতো এক চালায় এতগুলি প্রতিমা নিয়ে এক ভিন্ন আঙ্গিকের প্রতিমা।

পুরোহিত বিপন মজুমদার বলেন, ‘‘বংশপরম্পরায় সরস্বতীর পুজো করছে আমাদের পরিবার। খোসনগরের দু’টিই উৎসব। পীরবাবার উরস ও সরস্বতী পুজো। গ্রামের সকলে এই দুটো দিনের জন্য মুখিয়ে থাকেন। উরসে দুই সম্প্রদায়ের প্রচুর জমায়েত হয়। সরস্বতী পুজোর সঙ্গেও জুড়ে গিয়েছে পীর বাবার মাজার।’’ বিসর্জনের দিন সিন্নি চড়ানোর আগে মাজার চত্বর পরিচ্ছন্ন করা হবে। গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘আমরা কখনই পীরবাবার মাজার আর সরস্বতী মন্দিরকে (যদিও মন্দির ভেঙে গিয়েছে) আলাদা চোখে দেখি না।’’ ফের নতুন মন্দির নির্মাণের কথা ভাবছেন শরিকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন