বেআইনি কেব্‌ল-এ মৃত বালক

বিদ্যুতের খুঁটি দিয়ে আকছার টিভির কেব্‌ল সংযোগ নিয়ে যাওয়া হয়। এই ব্যাপারে ঝুঁকির দিকটায় আমল দেন না ব্যবসায়ীরা। সাধারণ মানুষও বিশেষ গা করেন না। কিন্তু ঝুঁকি যে কতটা গুরুতর তা সামনে উঠে এল এক প্রাথমিক স্কুলপড়ুয়ার মৃত্যুতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৭ ০১:৫০
Share:

চিহ্ন: এই জায়গাতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় রাহুল বাউড়ির। দুর্ঘটনার পরে ঘটনাস্থলে ভিড় করেছেন এলাকার বাসিন্দারা। ছবি: শুভ্র মিত্র

বিদ্যুতের খুঁটি দিয়ে আকছার টিভির কেব্‌ল সংযোগ নিয়ে যাওয়া হয়। এই ব্যাপারে ঝুঁকির দিকটায় আমল দেন না ব্যবসায়ীরা। সাধারণ মানুষও বিশেষ গা করেন না। কিন্তু ঝুঁকি যে কতটা গুরুতর তা সামনে উঠে এল এক প্রাথমিক স্কুলপড়ুয়ার মৃত্যুতে।

Advertisement

রবিবার বিষ্ণুপুর শহরের কাটনধার এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় বছর দশেকের রাহুল বাউড়ির। ওই এলাকায় আরামবাগ-বিষ্ণুপুর ২ নম্বর রাজ্য স়ড়কের পাশ দিয়ে বিদ্যুতের খুঁটি দিয়ে টিভির অনেক কেব্‌ল সংযোগ টানা হয়েছে। লোহার গ্যালভানাইজড তারের সঙ্গে টিভির কেব্‌ল বেঁধে বিদ্যুতের খুঁটি দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। উপরে দিয়ে ১১ হাজার ভোল্টের হাইটেনশন বিদ্যুতের তার, অল্প কিছুটা নীচে টিভির কেব্‌ল ধরে রাখা ধাতব তার। এ দিন ওই ওয়ার্ডে একটি খুঁটির উপরে বাঁশ পড়ে টিভির কেব্‌ল বাঁধা ধাতব তার ছিঁড়ে যায়। তারের একটি ছেঁড়া প্রান্ত গিয়ে ঠেকে উপরের হাইটেনশন তারে। নীচে ‘U’ অক্ষরের মতো বাকিটুকু ঝুলছিল। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে ঝুলে থাকা তার রাহুলের হাতে ঠেকে। সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় সে। বিস্ফোরণ হয়ে ঝুলে থাকা তার ছিঁড়ে আলাদা হয়ে যায়। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় রাহুলের একটি হাত এবং একটা পা পুড়ে কুঁকড়ে গিয়েছে।

রাহুলের বাড়ি বাঁকুড়া শহরের স্টেশন রোড এলাকায় বেলগড়িয়া পাড়ায়। বেলগড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল সে। রাহুলের মামা গোপাল ক্ষেত্রপাল এবং প্রসেনজিৎ ক্ষেত্রপাল বলেন, ‘‘অনুষ্ঠান উপলক্ষে দিন দু’য়েক আগে ছেলে রাহুল আর মেয়ে প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে আমাদের বোন মনসা বাউড়ি এবং ভগ্নিপতি সুজিত বাউড়ি এসেছিলেন। সুজিত পেশায় দিনমজুর। এ দিন সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ রাহুল মাঠে শৌচে বেরোলে দুর্ঘটনাটি ঘটে।’’

Advertisement

এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, ঘাসজমিতে রাহুলের দেহ পড়ে রয়েছে। দেহ ঘিরে জটলা করেছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। সেখানে দাঁড়িয়ে কাঠানধারপল্লির বাসিন্দা সোমনাথ মুখোপাধ্যায়, নীলকণ্ঠ দাস, শেখ কামাল, পাশের গ্রাম মধুবনের বিদ্যুৎ দেরা বলেন, ‘‘কোনও নিয়মের তোয়াক্কা না করে বিদ্যুতের খুঁটিতে লোহার তার বেঁধে কেব্‌ল নিয়ে গিয়েছেন। অনেক দিন ধরেই আমরা দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছিলাম। সেটাই হল। বিদ্যুৎ দফতরের নজরদারিতেও গাফিলতি রয়েছে।’’

বাড়ির উঠোনে রাহুলের শোকাহত আত্মীয়রা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। ভিড় করেছেন পড়শিরা। ঘটনার পরে, সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ক্ষতিপূরণের দাবিতে এ দিন প্রায় ঘণ্টা দু’য়েক রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। খবর পেয়ে সেখানে যান বিষ্ণুপুর থানার আইসি আস্তিক মুখোপাধ্যায় এবং পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায়। আইসি জানান, বিক্ষুব্ধদের বুঝিয়ে অবরোধ তোলা হয়। দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে রাহুলের পরিবারের তরফে এখনও থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।

বিষ্ণুপুর বিদ্যুৎ বণ্টন বিভাগের ডিভিশনাল ম্যানেজার তীর্থ মাল বলেন, ‘‘খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই লাইনে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কর্মীদের পাঠিয়েছি।’’ তাঁর দাবি, কিছু দিন আগেই বিষ্ণুপুর মহাকুমাশাসকের অফিসে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। সেখানে কেব্‌ল ব্যাবসায়ীদের বলা হয়েছিল, বিদ্যুৎবাহী খুঁটিতে কোন লোহার তার বা কেব্‌ল বাঁধা যাবে না। যাঁরা বেঁধেছিলেন তাঁদের ওই তার খুলে ফেলতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এ ক্ষেত্রে যে ব্যবসায়ী ওই তার টাঙিয়েছিলেন তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

গাফিলতির কথা মেনে নিয়েছেন বিষ্ণুপুর কেব্‌ল ব্যাবসায়ী সংগঠনের ওই অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা জগন্নাথ কোটাল। তিনি বলেন, ‘‘খুব দুঃখজনক ঘটনা। ভবিষ্যতে যাতে এ রকম আর না হয় আমরা তা দেখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন