ভোরে-দুপুরে দুই দুর্ঘটনায় বরযাত্রীর গাড়ি, মৃত আট

দু’টি দুর্ঘটনা। দু’টিই বিয়ে বাড়ি সেরে ফেরার পথে। দু’টি ক্ষেত্রেই বরযাত্রীর গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে। এই জোড়া ঘটনায় পুরুলিয়ায় মারা গেলেন আট জন। আহতের সংখ্যা ৩০। তাঁদের ঝাড়খণ্ডের টাটানগরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল ও পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। প্রথম দুর্ঘটনাটি ঘটে পুরুলিয়া-জামশেদপুর ৩২ নম্বর জাতীয় সড়কে, পুরুলিয়া মফস্সল থানা এলাকার কাড়ামারা গ্রামের কাছে। শুক্রবার ভোররাতের ওই দুর্ঘটনায় ছ’জনের মৃত্যু হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম অনুপ গরাঁই (১৮), রমেশ পরামানিক (১৯), সুমিত সাও ওরফে মন্টু (১৯), গোবিন্দ ধীবর (১৯), ইন্দ্রজিত গরাঁই (১৯)।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৫ ০১:১৯
Share:

ট্রেলারে ধাক্কা মেরে দুমড়ে গিয়েছে বরযাত্রীর গাড়ি।— নিজস্ব চিত্র।

দু’টি দুর্ঘটনা। দু’টিই বিয়ে বাড়ি সেরে ফেরার পথে। দু’টি ক্ষেত্রেই বরযাত্রীর গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে। এই জোড়া ঘটনায় পুরুলিয়ায় মারা গেলেন আট জন। আহতের সংখ্যা ৩০। তাঁদের ঝাড়খণ্ডের টাটানগরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল ও পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

Advertisement

প্রথম দুর্ঘটনাটি ঘটে পুরুলিয়া-জামশেদপুর ৩২ নম্বর জাতীয় সড়কে, পুরুলিয়া মফস্সল থানা এলাকার কাড়ামারা গ্রামের কাছে। শুক্রবার ভোররাতের ওই দুর্ঘটনায় ছ’জনের মৃত্যু হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম অনুপ গরাঁই (১৮), রমেশ পরামানিক (১৯), সুমিত সাও ওরফে মন্টু (১৯), গোবিন্দ ধীবর (১৯), ইন্দ্রজিত গরাঁই (১৯)। এই পাঁচ জনই বলরামপুরের বাসিন্দা। মৃত জিতেন বাউরির (২০) বাড়ি পুরুলিয়া সদর থানা এলাকার কেতিকায়। গাড়িটিতে মোট ১১ জন যাত্রী ছিলেন। আহত বাকি পাঁচ জনকে প্রথমে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় ভোরেই তাঁদের টাটানগরে পাঠানো হয়। অল্প আহত এক জনকে অবশ্য সদর হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এ দিনই বেলা সওয়া ১১টা নাগাদ বলরামপুর-বাঘমুণ্ডি রাস্তায় বলরামপুর থানার পাথরবাঁধের কাছে বাঘমুণ্ডিগামী একটি বরযাত্রী বোঝাই ম্যাটাডর উল্টে গেলে মারা যান দু’জন। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতেরা হলেন মহেশ্বর মাঝি (৫০) ও চুনারাম মাঝি (৪০)। মহেশ্বরবাবু বলরামপুর থানার খয়রাডি গ্রামের বাসিন্দা। চুনারামবাবুর বাড়ি আড়শা থানার রঞ্জিতডি গ্রামে। ওই এই দুর্ঘটনায় ২৫ জন আহত হন। তাঁদের প্রথমে বলরামপুরের বাঁশগড় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে পাঁচ জনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও ২০ জনকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ভোর তিনটে থেকে সাড়ে তিনটের মধ্যে ৩২ নম্বর জাতীয় সড়কে বলরামপুরের যে গাড়িটি দুর্ঘটনায় পড়ে, সেটির যাত্রীরা মফস্সল থানার বিড়গিড়ি গ্রামে একটি বিয়ে বাড়িতে বরযাত্রী হয়ে দিয়েছিলেন। বিয়ের অনুষ্ঠান সেরে বলরামপুরে ফেরার পথে কাড়ামারা গ্রামের অদূরে একটি ধাবার কাছে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেলারের পিছনে সজোরে ধাক্কা মারে বরযাত্রীদের গাড়িটি। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, কোনও গাড়িকে ওভারটেক করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে অথবা গাড়িটি প্রচণ্ড গতিতে থাকায় চালক গাড়ির নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি। আবার ভোররাতে চালকের চোখে ঘুম এসেও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ট্রেলারটি রাস্তার একেবারে ধারে দাঁড়িয়ে থাকলেও কিছুটা অংশ রাস্তার উপরে ছিল। সংঘর্ষের পরে এক আরোহীর মাথার একাংশ শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ছিটকে যায়। পুলিশ আলাদা কাপড়ে জড়িয়ে মাথার সেই অংশ হাসপাতালে পাঠায়। ঘটনাস্থলে থাকা এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, গাড়ির গতি কতটা ছিল।’’ সংঘর্ষের ফলে সাদা রঙের গাড়িটির বাঁ দিকের অংশ দুমড়ে মুচড়ে গিয়েছে। বরযাত্রীদের চিৎকার শুনে স্থানীয় মানুষ ও পুলিশ তাঁদের পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। এখানেই ছ’জনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পুরুলিয়ায় আসেন মৃতদের আত্মীয়-পরিজনেরা। সুমিত সাওয়ের বাবা জগন্নাথ সাও বলেন, ‘‘ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে বিয়েবাড়িতে গিয়েছিল। ভোরে খবর পাই, ওদের গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েছে। হাসপাতালে এসে দেখি এই অবস্থা।’’ আর বেশি কথা বলতে পারেননি তিনি। বলরামপুরের যে পাড়া থেকে বিড়গিড়ি গ্রামে গিয়েছিলেন বরযাত্রীরা, সেই এলাকার বাসিন্দা সাধন মহান্তি বলেন, ‘‘এত বড় দুর্ঘটনা ঘটে গেল! এই অবস্থায় আর কী বৌ ভাতের অনুষ্ঠান হবে। কাকে কী বলে সান্তনা দেব।’’

অন্য দিকে, বলরামপুর থানার খয়ারাডি গ্রাম থেকে বাঘমুণ্ডি থানার পোঁড়া গ্রামে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় পড়ে আর একটি বরযাত্রী বোঝাই গাড়ি। পুলিশ সূত্রের খবর, কাশবহাল গ্রামের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বরযাত্রী বোঝাই ম্যাটাডরটি উল্টে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা ও পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে বলরামপুরের বাঁশগড় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠায়। স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, মহেশ্বর ও চূনারামকে মৃত অবস্থাতেই আনা হয়। এখান থেকে পাঁচ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। ২০ জনকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। পোঁড়া গ্রাম থেকেই খয়রাডি গ্রামে বিয়ের অনুষ্ঠান সেরে ফিরছিলেন বরযাত্রীরা। বরের ভাই মধুরাম বাস্কে বলেন, ‘‘আমি অন্য গাড়িতে ছিলাম। ওই গাড়িতে থাকা আমার বাবাও জখম হয়েছেন। দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ির এক যাত্রী কৈলাশ বেসরার কথায়, ‘‘একটা গরুকে বাঁচাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় আমাদের ম্যাটাডর।’’ বরের বাড়িতে এ দিনই প্রীতিভোজের অনুষ্ঠান ছিল। মধুরাম বলেন, ‘‘অনুষ্ঠান বাতিল করতে হয়েছে।’’

জেলা পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, ‘‘দু’টি ঘটনায় আট জনের মৃত্যু হয়েছে। মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। ভোরবেলায় যে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেই গাড়ির চালকের খোঁজ চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন