বৈধ বালিঘাটে কাজ বন্ধ ব্যবসায়ীদের

বকেয়া টাকা না মেটালে নির্দিষ্ট ‘স্যান্ড ব্লক’ থেকে বালি তোলায় নিষেধাজ্ঞা এবং বালি ‘চুরি’ আটকাতে দ্রুত  ই-চালান জারি করার সিদ্ধান্ত— জেলা প্রশাসনের মূলত এই দু’টি সিদ্ধান্তের জেরে  নানা অসুবিধার দিক তুলে ধরে বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু করেছে বৈধ বালি কারবারীদের সংগঠন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৩৮
Share:

বকেয়া টাকা না মেটালে নির্দিষ্ট ‘স্যান্ড ব্লক’ থেকে বালি তোলায় নিষেধাজ্ঞা এবং বালি ‘চুরি’ আটকাতে দ্রুত ই-চালান জারি করার সিদ্ধান্ত— জেলা প্রশাসনের মূলত এই দু’টি সিদ্ধান্তের জেরে নানা অসুবিধার দিক তুলে ধরে বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু করেছে বৈধ বালি কারবারীদের সংগঠন। কোথায় তাঁদের অসুবিধা, তা নিয়ে কথা বলতে চেয়ে শুক্রবার জেলা প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকদের আলোচনায় বসতে অনুরোধ জানিয়েছে ‘স্যান্ড ওনার্স অ্যাসোশিয়েশন’। ওই সংগঠনের দাবি, প্রশাসন যদি বাস্তব সমস্যা থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকে এবং ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত কার্যকর করার রাস্তা বেছে নেয়, তা হলে জেলায় বালি ব্যবসায়ীরা সঙ্কটে পড়বেন। সে ক্ষেত্রে আন্দোলন তীব্র করা ছাড়া পথ নেই।

Advertisement

নদীবক্ষ থেকে ইচ্ছামতো বালি তোলায় ২০১৬ সালে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। বর্তমানে বালি তোলার অনুমতি পেতে হলে ই-অকশনে অংশগ্রহণ করতে হয় ইচ্ছুক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে। সর্বোচ্চ দর দিয়ে বালিঘাট বা স্যান্ড ব্লকের স্বত্ত্ব পেতে পারেন সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, শর্তপূরণ করে এখনও পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন নদীর মোট ২০৩টি স্যান্ড ব্লকের হাঁক হয়েছে। তার মধ্যে ১৮৩টি কার্যকর করা হয়েছে। পরিবেশগত ছাড়পত্র পেয়েছে ১৭৭টি। ১১৬ জনকে ‘লং টার্ম মাইনিং লিজ’ দেওয়া হয়। সেই বালি ব্যবসায়ীরাই এ বার আন্দোলন শুরু করেছেন।

কেন আন্দোলনের পথে হাঁটছেন তাঁরা?

Advertisement

বকেয়া টাকা না মেটালে নির্দিষ্ট ‘স্যান্ড ব্লক’ থেকে বালি তোলা যাবে না— পুরো টাকা মেটাননি এমন ৮৩ জন লিজপ্রাপ্তকে ডেকে সম্প্রতি এমনই বার্তা দিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। তাঁরা জানান, নির্দিষ্ট সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও প্রায় ৮০ কোটি টাকার বেশি বকেয়া রয়েছে। সেটা দিতেই হবে। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, সর্বোচ্চ দর দেওয়া ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সরকারের তরফে ‘অ্যাওয়ার্ড অফ কনট্রাক্ট’ দেওয়া হয়। তা পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে নির্ধারিত অঙ্কের এক তৃতীয়াংশ টাকা প্রশাসনের কাছে জমা দিতে হয়। তার কিছু দিনের মধ্যেই প্রশাসনের তরফে লেটার অফ ইনডেন (এলওআই) দেওয়া হয়ে লিজপ্রাপ্তকে। এর পরে মাইনিং প্ল্যান তৈরি করে পরিবেশ ছাড়পত্রের (ইসি) জন্য আবেদন করতে হয় ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে। ছাড়পত্র পাওয়ার পরেই লিজপ্রাপ্তের সঙ্গে সরকারের (লং টার্ম মাইনিং লিজ) চুক্তি সম্পন্ন হয়। তার পরে লিজপ্রাপ্ত চালানের জন্য ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে আবেদন করেন। আবেদন গ্রাহ্য হলে যে পরিমাণ বালি তিনি উত্তোলন করবেন, সেই হারে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা জামা করে চালান পেয়ে থাকেন।

স্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, বাকি দুই-তৃতীয়াংশ টাকা জমা দেওয়ার জন্যে লেটার ওফ ইনডেন (এলওআই) দেওয়ার দিন থেকে সময় ধরছে প্রশাসন। কিন্তু চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার দিন থেকেই তা ধরা উচিত। অন্য জেলা সেই ভাবেই বকেয়া নিচ্ছে। বীরভূম ব্যতিক্রম কেন? দুই, যাঁরা লিজ পেয়েছেন, তাঁদের অনেকেই এখনও প্রশাসনিক ঢিলেমিতে পরিবেশের ছাড়পত্র পাননি। বালি তুলতে না পারলে কী ভাবে তাঁরা টাকা মেটাবেন! তৃতীয়ত, চলতি অর্থবর্ষে যাঁরা লিজ পেয়েছেন, তাঁরা সব প্রক্রিয়া শেষ করতেই বর্ষা চলে আসে। বর্ষার চার মাস কেউ বালি তুলতে পারেননি।

১৫ অক্টোবর থেকে বালি ঘাট খুললেও, ফরাক্কা সেতু বন্ধের জন্য কারবার প্রায় বন্ধের মুখে পড়ে। তাই বকেয়া মেটানোর সময়সীমা বেঁধে দিলে কী ভাবে সেই টাকা পরিশোধ করবেন লেসিরা? তা ছাড়া এমনও ঘাট রয়েছে, শুরু থেকেই স্থানীয় সমস্যার জন্য সেই ঘাট থেকে বালি তোলা সম্ভব হয়নি বা বালি নেই সেই ঘাটে। সরকারকে রাজস্ব দেওয়া হলেও সমস্যা মেটানোর কোনও ব্যবস্থা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি। উল্টে বৈধ লিজপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রুজু করা হয়েছে। সেই বিষয়গুলি দেখার জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানানো হবে। ই-চালান নিয়ে সংগঠনের দাবি, বালি চুরি রুখতে এই ব্যবস্থার বিরোধিতা কেউ করছে না। কিন্তু উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরির আগেই তাড়াহুড়ো করে এই ব্যবস্থা চাপিয়ে দিলে অনেক সমস্যা হবে।

সংগঠনের সহ-সভাপতি পরভেজ আলম সিদ্দিকি বলছেন, ‘‘আমরা বৈধ ভাবে ব্যবসা করছি। কিন্তু জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর ও প্রশাসন নিত্যনতুন আইন চাপিয়ে দেওয়ায় জেরবার হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ঋণগ্রস্থ হয়েছেন অনেকে। এতে বালি উত্তোলনের ব্যবসাই বন্ধ হয়ে যাবে। প্রচুর মানুষ রুজিরুটি হারাবেন।’’

অতিরিক্ত জেলাশাসক( ভূমি ও ভূমি সংস্কার) পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, ‘‘প্রশাসন কারও শত্রু নয়। নিয়ম মেনে কারবার চলুক। তাঁরা শুক্রবার আলোচনায় বসতে চেয়েছেন। নিশ্চয়ই তা করা হবে। দাবিগুলি বিবেচনা করা হবে। তবে অন্যায় দাবিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন