থমকেই ডিজিটাল লেনদেন

কেন্দ্রীয় সরকার নগদে কেনাকাটি কমাতে নোটবন্দির সময়েই ডিজিটাল লেনদেনে জোর দিয়েছিল। তখন বাঁকুড়ার অনেক ব্যবসায়ী ও ব্যাঙ্কগুলি আগ্রহ দেখালেও এক বছর পরে বহু দোকানেই এখনও পিওএস (পয়েন্ট অব সেল) মেশিন নেই।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৭ ০১:২৯
Share:

নগদহীন: বাঁকুড়া সমবায় বিপণিতে। নিজস্ব চিত্র

কেউ মেশিন নিয়েও খরচ বেশি অভিযোগ তুলে ফিরিয়ে দিয়েছেন। কারও আবার অভিযোগ, চেয়েও পাওয়া যায়নি বলে আগ্রহ হারিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকার নগদে কেনাকাটি কমাতে নোটবন্দির সময়েই ডিজিটাল লেনদেনে জোর দিয়েছিল। তখন বাঁকুড়ার অনেক ব্যবসায়ী ও ব্যাঙ্কগুলি আগ্রহ দেখালেও এক বছর পরে বহু দোকানেই এখনও পিওএস (পয়েন্ট অব সেল) মেশিন নেই। ফলে বেচাকেনা চলছে নগদেই। এর জন্য বণিকসভা দায়ী করছে ব্যাঙ্কগুলিকে।

Advertisement

ঘটনা হল, নোটবন্দির সময় বাজারে নগদের আকালে সাধারণ ক্রেতা থেকে বিক্রেতা সকলেরই নাভিশ্বাস উঠেছিল। লাটে উঠেছিল ব্যবসা। সেই সময় বণিকসভার উদ্যোগে বাঁকুড়া শহরের বহু ব্যবসায়ীই ডিজিটাল পদ্ধতির দিকে ঝুঁকে ছিলেন। শহরের প্রায় এক হাজার ছোট-বড় ব্যবসায়ী পিওএস মেশিন নিতে চেয়ে বণিকসভার কাছে আবেদনও করেছিলেন। তারপরেও এই হাল কেন?

বাঁকুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক তথা কনভেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডার-এর রাজ্য সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন দরিপা বলেন, “নগদের জোগান কম হওয়াতেই ডিজিটাল বেচাকেনায় উৎসাহী হয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। চাহিদা মতো পিওএস মেশিন না থাকায়, সেই সুযোগটাই ব্যাঙ্কগুলি কাজে লাগাতে পারল না।”

Advertisement

আবার যাঁরা পিওএস মেশিন পেয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই তা ফিরিয়েও দিয়েছেন। বাঁকুড়ার কাটজুড়িডাঙা এলাকার এক বিদেশি মদ বিক্রেতা রাজীব ধুমা বলেন, “লাভের গুড় পিঁপড়েতে খেয়ে যাচ্ছিল। মেশিনের জন্য এক দিকে মাসে ভাড়া গুনতে হচ্ছে, অন্য দিকে, কেনাবেচা হলেই বাড়তি চার্জও গুনতে হচ্ছে। তাই ফিরিয়ে দিয়েছি।”

রাজীববাবুর মতো অনেকেই একই অভিযোগ তুলে মেশিন ফিরিয়ে দিয়েছেন বলে জানাচ্ছে বণিকসভা। আবার বাঁকুড়ার বড়কালীতলা এলাকার মুদি ব্যবসায়ী জনার্দন দত্তের দাবি, নোটবন্দির সময়ে পিওএস মেশিন চেয়ে তিনি আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ব্যাঙ্ক তাঁর সঙ্গে কোনও যোগাযোগই করেনি। তাই মেশিন নেওয়া হয়ে ওঠেনি।

যদিও বাঁকুড়ায় ক্রেতাদের মধ্যে কার্ডে বিল মেটানোর প্রবণতা গত এক বছরে অনেকটাই বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন পিওএস মেশিন ব্যবহারকারী বহু ব্যবসায়ীই।

নোটবন্দির সময়ে বাঁকুড়া সমবায় বিপণিতে কার্ডে বিক্রির ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। ওই বিপণি র ভাইস চেয়ারম্যান বিশ্বনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তখন বেশ কয়েক মাস ৯০ শতাংশ বিক্রি কার্ডেই হয়েছে। পরে খুচরো টাকা বাজারে পর্যাপ্ত আসায় কার্ডে বিক্রি কিছুটা কমলেও এখন দৈনিক ২০-৩০ হাজার টাকা কার্ডেই লেনদেন হচ্ছে।’’

ওই সময়েই পিওএস মেশিন নিয়েছেন বাঁকুড়ার গোলপার্ক এলাকার রেডিমেড ব্যবসায়ী পার্থ গড়াই। তিনিও জানাচ্ছেন, দৈনিক বেচাকেনার পাঁচ শতাংশ বিল মেশিনেই মেটাচ্ছেন ক্রেতারা। যদিও অনেকেই এতে অভ্যস্ত নন, তবে ধীরে ধীরে কার্ডে বিল মেটাতে ক্রেতাদের জড়তা কাটছে বলেই তাঁর মত।

নোটবন্দির আগে থেকেই ডিজিটাল লেনদেন শুরু করেছেন মাচানতলা এলাকার বস্ত্র বিক্রেতা সব্যসাচী কুণ্ডু। তাঁরও অভিজ্ঞতা, “পিওএস মেশিনে বিল মেটানোর চাহিদা কয়েক গুন বেড়ে গিয়েছে। যাঁরা মোটা অঙ্কের কেনাকাটা করছেন, তাঁদের বেশিরভাগই মেশিনে কার্ড স্যোয়াইপ করে বিল মেটাতেই পছন্দ করছেন।”

বাঁকুড়ার কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্তারাও দাবি করছেন, জেলার শহরগুলিতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কেনাকাটা বাড়ছে ধাপে ধাপে। বাঁকুড়া শহরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের দাবি, “বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুরের মতো শহরগুলিতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কেনাকাটা আশাতীত ভাবেই বেড়েছে। বাঁকুড়া শহরে অন্তত ৪০ শতাংশ, বিষ্ণুপুরে ২৫ শতাংশ কেনাকাটাই হচ্ছে কার্ডে। আমরা নিশ্চিত ধাপে ধাপে আরও বাড়বে।”

তাহলে নোটবন্দির সময়ে পিওএস সেই সময়ে কেন দেওয়া যায়নি? ব্যাঙ্ককর্মীদের অনেকেই স্বীকার করেছেন, খুচরো টাকার আকালের সময়েই পিওএস মেশিন দেওয়ার ভাল সুযোগ থাকলেও, জোগানের অভাবেই তা মার খেয়েছে।

বণিকসভা মনে করছে, নগদে কারবার কমাতে বা ক্যাশলেস ইকোনমি তৈরি করতে কেন্দ্রীয় সরকারকে এখন অনেকটাই এগিয়ে আসতে হবে। মধুসূদনবাবুর মতে, “ব্যবসায়ীদের পিওএস মেশিনের মাসিক ভাড়া দিতে কোনও আপত্তি নেই। তবে তাঁদের দাবি কেনাবেচায় ছাড় দিতে হবে। এই বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্র একটু নরম হলেই, আরও বহু ব্যবসায়ীই সাড়া দেবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন