ধুলোটে দুশো কীর্তন দলের পাত বেনেপাড়ায়

কালীপূজো উপলক্ষে এ দিন লাভপুরের বেনেপাড়া গ্রামে উনুনে চড়ল অতিরিক্ত দুশো হাঁড়ি। বহু বছর ধরে ওই প্রথা চলছে। প্রতিবছরই অন্যান্য দিনের তুলনায় রান্নার জন্য উনুনে বেশি হাড়ি চড়ে ওই গ্রামে।

Advertisement

অর্ঘ্য ঘোষ

লাভপুর শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৭ ০২:০০
Share:

আহার: খেতে বসেছেন কীর্তন দলের সদস্যরা। সোমনাথ মুস্তাফি

কালীপূজো উপলক্ষে এ দিন লাভপুরের বেনেপাড়া গ্রামে উনুনে চড়ল অতিরিক্ত দুশো হাঁড়ি। বহু বছর ধরে ওই প্রথা চলছে। প্রতিবছরই অন্যান্য দিনের তুলনায় রান্নার জন্য উনুনে বেশি হাড়ি চড়ে ওই গ্রামে।

Advertisement

প্রচলিত রয়েছে, প্রায় দুশো বছর আগে ওই গ্রামে মড়ক দেখা দেয়। মড়ক থেকে রক্ষা পেতে স্বপ্নাদেশে কালীপুজোর প্রচলন করেন গ্রামবাসীরা। ১৬ এপ্রিল থেকে ৯ দিন ধরে কীর্তন, বিভিন্ন ধরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মেলা সহ শুরু হয় ওই পুজো। এ দিন ছিল ধুলোট উৎসব।

উদ্যোক্তাদের দাবি, উৎসবে যোগ দেয় দুশোটি কীর্তনের দল!

Advertisement

প্রতিটি দলে রয়েছেন ৮-১০ জন সদস্য। অন্যান্য জায়গায় ওইসব লোকজনকে একত্রে রান্না করে খাওয়ানো হয়। কিন্তু এখানে প্রতিটি দলকে চাল, ডাল, সব্জি, জ্বালানী-সহ ধরিয়ে দেওয়া হয় দুটি করে মাটির হাঁড়ি। ওইসব সামগ্রী নিয়ে সম্প্রদায়ের লোকেরা বেনেপাড়া, লাগোয়া মিরিটি এবং বাহ্মণপাড়ার বিভিন্ন পরিবারে পৌঁচ্ছে যান। তারপর খালি কোনও চালা কিংবা ঘরে নিজেরা রান্নার ব্যবস্থা করেন। প্রায় একই সময়ে একসঙ্গে উনুনে চাপে দুই শতাধিক হাঁড়ি।

প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে যোগ দেওয়ার ফলে পরিবারগুলির সঙ্গে একরকম সৌহার্দ্যও গড়ে উঠেছে কীর্তনীয়াদের। পরিবারের একজনকে তাঁদের সঙ্গে খাওয়ার জন্য আমন্ত্রণও জানান তাঁরা। বছর কুড়ি ধরে ওইভাবে রান্না করছেন স্থানীয় আবাদের লালুপ্রসাদ হাজরা, হাটকালুহার সন্তোষ গড়াইরা। তাঁরা বলেন, ‘‘প্রতিবছর একই পরিবারে রান্না করতে যাওয়ার সুবাদে কেমন যেন একটা সখ্যতা গড়ে উঠেছে। ওরা আমাদের রান্নার কাজে সাহার্য্য করে। আমরাও একজনকে আমাদের সঙ্গেই খেতে বলি।’’

মিরিটির হীরণ সূত্রধর, ব্রাহ্মণপাড়ার নিখিলবন্ধু সাহারা জানান, আমরাও এই দিনটার অপেক্ষায় থাকি। পিকনিকের মেজাজে কেমন একটা দিন স্বাদ বৈচিত্র পাওয়া যায়। পুজো কমিটির সভাপতি বিকাশকান্তি মণ্ডল, অন্যতম সেবাইত প্রতুল দেবাংশী, মলয় মুখোপাধ্যায়রা জানান, কী কারণে বলতে পারব না, তবে প্রথা মেনেই ওই ব্যবস্থা করা হয়। এতে খরচ তো বাড়েই ২০০টি দলের জন্য ২টি করে মাটির হাঁড়ি যোগাড় করতেই আমাদের হিমসিম খেতে হয়।

পুজো এবং মেলা উপলক্ষ্যে দূর থেকে মানুষের ঢল নামে ওই গ্রামে। নদীয়ার ফরিদপুরের স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায়, মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার শীলা চট্টোপাধ্যায়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই আমরা আসছি। ২-৩ টে দিন কাটিয়ে ফিরি। খুব আনন্দ পাই। পুজো কমিটির সম্পাদক শিবশঙ্কর পাল বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর মতোই কালীপুজোতেও লাগোয়া গ্রামগুলিতে পরিবারের বাইরে থাকা সদস্যরা ফিরে আসেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন