বৈঠকে উপস্থিতি বাড়াতে খুলল ‘শিশু আলয়’

পঞ্চায়েতের অধিকাংশ সদস্যই মহিলা। তাঁদের মধ্যে অনেকেরই শিশু রয়েছে। বাড়িতে ওই সব শিশুদের দেখার কেউ নেই। আবার শিশু নিয়ে পঞ্চায়েতেও থাকার পরিবেশ নেই।

Advertisement

অর্ঘ্য ঘোষ

লাভপুর শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৭ ০০:২৫
Share:

খেলাঘর: লাভপুরের গ্রামে তৈরি হয়েছে এমনই ঘর। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি

পঞ্চায়েতের অধিকাংশ সদস্যই মহিলা। তাঁদের মধ্যে অনেকেরই শিশু রয়েছে। বাড়িতে ওই সব শিশুদের দেখার কেউ নেই। আবার শিশু নিয়ে পঞ্চায়েতেও থাকার পরিবেশ নেই। তাই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকেও ওই সদস্যাদের গরহাজিরা বাড়ছিল। ফলে থমকে পড়ছিল গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের কাজ। এ বার সেই সমস্যা দূর করতে উদ্যোগী হল লাভপুরের জামনা পঞ্চায়েত। লোককল্যাণ পর্ষদের উদ্যোগে তারা ওই সব শিশুদের ভুলিয়ে রাখার জন্য অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে।

Advertisement

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই পঞ্চায়েতের ১১ জন সদস্যের মধ্যে ৮ জনই মহিলা। তাঁদের অনেকেরই শিশু রয়েছে। ওই পঞ্চায়েতেই রয়েছে নারী জাগরণ কমিটি। তাঁদের ১৮ জন সদস্যার মধ্যেও বেশ কয়েক জনের শিশু রয়েছে। কিন্তু ওই সব শিশুকে দেখভালের জন্য অধিকাংশ পরিবারেই আলাদা কোনও লোক নেই। চরম দোটানায় পড়েছিলেন ওই সব মহিলারা।

স্থানীয় ধ্রুববাটি সংসদের সদস্যা উত্তরা বাগদির দুই ছেলে। বড়টির বয়স ৫ বছর, ছোটটি আট মাসের। বাড়িতে স্বামী কাশীনাথ ছাড়াও রয়েছেন শ্বশুর এবং শাশুড়ি। স্বামী এবং শ্বশুর দু’জনেই দিনমজুর। রান্নার কাজেই ব্যস্ত থাকতে হয় শাশুড়িকে। একই পরিস্থিতি জামনা সংসদের টিঙ্কু বাগদি এবং নারী জাগরণ কমিটির সর্বমঙ্গলী মণ্ডলেরও। টিঙ্কুদেবীর ৭ এবং ২ বছরের দু’টি ছেলে রয়েছে। ৮ এবং ২ বছরের দু’টি মেয়ে রয়েছে সর্বমঙ্গলাদেবীর। কিন্তু দু’জনের পরিবারেই ওই সব বাচ্চাদের দেখাশোনা করার মতো কেউ নেই। টিঙ্কুদেবীরা বলছেন, ‘‘আমরা বাড়িতে বাচ্চা রেখে পঞ্চায়েতে আসতে পারতাম না। কারণ বাচ্চা নিয়ে পঞ্চায়েতের কাজেও মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হতো না।’’

Advertisement

ওই সমস্যা দূর করতে তাই উদ্যোগী হয়েছে পঞ্চায়েত। বাচ্চাদের মনোরঞ্জনের উপযোগী করে তোলার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে একটি ঘর। সেখানে বাচ্চাদের শোওয়ার বিছানা, দোলনা থেকে রাখা হয়েছে রকমারি খেলনার সম্ভার। এক জন মহিলাকেও ওই সব বাচ্চাদের দেখাশোনার জন্য নিয়োগ করা হয়েছে। সম্প্রতি আনুষ্ঠানিক ভাবে ওই প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। হাজির ছিলেন সংশ্লিষ্ট লাভপুর পঞ্চায়েত সমিতির বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ সুপ্রভাত ভট্টাচার্য, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য মানিক মাঝি, লোককল্যাণ পর্ষদের ব্লক সমন্বয়ক ঝুমা হাজরা প্রমুখ।

পঞ্চায়েতে হাজির ছিলেন উত্তরাদেবীরা। তাঁরা বলছেন, ‘‘পঞ্চায়েত এবং বাচ্চা নিয়ে আমরা চরম দোটানায় ছিলাম। এ বার আর সেই সমস্যা রইল না।’’ প্রধান ছবি বাগদি বলেন, ‘‘এই দোটানার কারণেই বহু গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মহিলা সদস্যেরা হাজির হতে পারছিলেন না। সেই জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের অভাবে উন্নয়নমূলক কাজ থমকে যাচ্ছিল। সেই সমস্যা দূর করতেই এই উদ্যোগ।’’ ঝুমাদেবী জানান, শুধু পঞ্চায়েত কিংবা নারী জাগরণ কমিটির সদস্যেরাই নন, পঞ্চায়েতের নিচুতলায় অবস্থিত ব্যাঙ্কে আসা মহিলারাও এখানে বাচ্চা রেখে কাজ করার সুযোগ পাবেন। লাভপুরের বিডিও জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, ‘‘ইতিবাচক পদক্ষেপ। অন্যান্য পঞ্চায়েতেও করা যায় কিনা দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন