শিশুকল্যাণ সমিতি নেই

নিয়মের গেরোয় ঘরে ফেরা

শিশুকল্যাণ সমিতি না থাকায় পুরুলিয়া জেলায় চাইল্ড লাইন ও ছোটদের হোমগুলি সমস্যায় পড়েছে।আদালতের নির্দেশে বছর দুয়েক হল এই জেলায় শিশুকল্যাণ সমিতির অস্তিত্ব নেই। এ দিকে, প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগ তো রয়েইছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আদ্রা শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৭ ০২:৩৭
Share:

শিশুকল্যাণ সমিতি না থাকায় পুরুলিয়া জেলায় চাইল্ড লাইন ও ছোটদের হোমগুলি সমস্যায় পড়েছে।

Advertisement

আদালতের নির্দেশে বছর দুয়েক হল এই জেলায় শিশুকল্যাণ সমিতির অস্তিত্ব নেই। এ দিকে, প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগ তো রয়েইছে। এই পরিস্থিতিতে উদ্ধার করা শিশু ও কিশোরদের বাড়ি ফেরাতে সমস্যায় পড়েছে চাইল্ড লাইন ও হোমগুলি। বিশেষত আদ্রার মণিপুর হোম এবং চাইল্ড লাইনের আদ্রার শাখা ছোটদের ফেরাতে নাকাল হচ্ছে বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে উদ্ধার হওয়া বালকদের হোম কর্তৃপক্ষ আ নিতে আগ্রহী হচ্ছেন না। সমস্যা সমাধানে জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিকে চিঠি লিখেছেন মণিপুরের অরুণোদয় শিশু নিকেতন। কিন্তু পরিস্থিতির বদল হয়নি।

কী ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে হোম বা চাইল্ড লাইনকে? দু’টি ঘটনাতেই বিষয়টি স্পষ্ট। প্রথমত, দেড় মাস যাবৎ মণিপুরের হোমে রয়েছে বাঁকুড়ার আশ্রমপাড়ার বাসিন্দা, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী বিক্রম শাসমল। কাশীপুর থানা তাকে উদ্ধার করে ওই হোমে পাঠিয়েছিল। বিক্রমের বাবা বীরেন্দ্র শাসমল খবর পেয়ে ছেলেকে বাড়ি ফিরিয়ে নিতে কয়েকবার বাঁকুড়া থেকে মণিপুরে এসেছেন। কিন্তু ছেলেকে ফেরত পাননি। কেন ছেলেকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারছেন না, সেটাই বুঝতে পারছেন না বীরেন্দ্রবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘সামনেই ছেলেটার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। অথচ হোম থেকে ওকে ছাড়ছে না।”

Advertisement

দ্বিতীয়ত, পুরুলিয়া শহরের মামার বাড়ি থেকে পালিয়ে আদ্রা স্টেশনে চলে এসেছিল পাড়া থানার দুবড়ার আরফাজ ওস্তা। আদ্রার রেলপুলিশ এই মূক-বধির ছেলেটিকে উদ্ধার করে চাইল্ড লাইনকে দিয়েছিল। দিন পনেরো ধরে সে মণিপুরের হোমে রয়েছে। খবর পেয়ে ছেলেকে বাড়ি নিয়ে যেতে হোমে কয়েকবারই এসেছেন তার বাবা সামিম আহমেদ। কিন্তু বীরেন্দ্রবাবুর মতোই তিনিও ছেলেকে ফেরত পাননি।

বস্তুত জেলায় শিশু কল্যাণ সমিতি না থাকাতেই উদ্ধার করা ছেলেগুলিকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারছেন না বলে জানাচ্ছেন মণিপুরের অরুণোদয় শিশু নিকেতনের সম্পাদক নবকুমার দাস ও চাইল্ড লাইনের আদ্রা সাবসেন্টারের কর্মকর্তা মন্টু মাহাতো।

হোম সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে নিখোঁজদের জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির সম্মতি নিয়ে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হতো। পরিবারের খোঁজ পাওয়া গেলে সম্মতি মিলতে বেশি সময় লাগত না। কিন্তু ওই সমিতির অস্তিত্ব না থাকায় বর্তমানে ওই পদ্ধতি অনেক দীর্ঘ হয়েছে। এখন রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসকের কাছে প্রথমে উদ্ধার করা বালক বা কিশোরকে বাড়ির লোকের হাতে তুলে দেওয়ার আর্জি জানানো হচ্ছে। সেই আবেদন মহকমাশাসক পাঠিয়ে দিচ্ছেন জেলাশাসককে। তাঁর সম্মতি পাওয়ার পরেই উদ্ধার করা ছেলেটিকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পুরুলিয়ার আনন্দমঠ হোমে থাকা মেয়েদেরও বাড়ি ফেরাতেও জেলাশাসকের সম্মতি লাগছে। সব মিলিয়ে দেরি হচ্ছে বলে অভিযোগ। নবকুমারবাবুরা বলছেন, ‘‘উদ্ধার হওয়া ছেলেগুলির অবিভাবকেরা অনেকেই হোমে এসে দেরির জন্য আমাদের উপরে চোটপাট করছেন।”

শুধু তাই নয়, পুলিশ থেকে ছোটদের হোমে পাঠাতে গেলেও জেলাশাসকের অনুমতি লাগছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও সময় লাগছে বলে কিছু ক্ষেত্রে প্রশাসনের লিখিত নির্দেশ ছাড়াই তাদের হোমে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন বলে নবকুমারবাবু জানাচ্ছেন। তিনি জানান, সাম্প্রতিক সময়ের অন্তত পাঁচজন শিশুকে প্রশাসনের লিখিত নির্দেশ ছাড়াই হোমে রাখতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। এতে হোমের ঝুঁকিও থাকছে।

সমস্যার কথা মানছে জেলা প্রশাসনও। জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশের ফলে জেলায় শিশু কল্যাণ সমিতি এখন নেই। ফলে শিশুদের অধিকার রক্ষার স্বার্থে ওই কাজ জেলা প্রশাসনকেই করতে হচ্ছে।” তবে প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রিতায় উদ্ধার হওয়াদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে অনেক দেরি হচ্ছে বলে তিনি মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, ‘‘যে ঘটনাগুলিতে কোনও জটিলতা নেই, সেগুলির ক্ষেত্রে দিন পনেরোর মধ্যে বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। জটিলতা থাকা ঘটনাগুলি আরও একবার খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে সে ক্ষেত্রেও একমাসের মধ্যে হোমে নির্দেশ যাচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন