স্কুলের সমস্যার কথা জানাতে পঞ্চায়েতে ‘প্রধানমন্ত্রী’

স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলে ১৫৪ জন পড়ুয়ার জন্য একটিমাত্র নলকূপ রয়েছে। অভিযোগ, মাসছয়েক ধরে সেই নলকূপের জল পানের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

লাভপুর শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:১৪
Share:

মতবিনিময়: পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের কাছে ‘মন্ত্রী’রা। শনিবার লাভপুরে। নিজস্ব চিত্র

স্কুলে নলকূপের জল পানের অযোগ্য। সংস্কারের অভাবে কাঁচা নর্দমার দুর্গন্ধে টেকা যায় না ক্লাসঘরে। বিরক্ত হয়ে স্কুলের পড়ুয়ারা সে সব জানিয়েছিল ‘প্রধানমন্ত্রী’কে। সমস্যার সমাধানে শেষে সপার্ষদ ‘প্রধানমন্ত্রী’ গেল পঞ্চায়েতে। তার হস্তক্ষেপে দ্রুত ব্যবস্থার আশ্বাস দিল পঞ্চায়েতকে। ঘটনাটি লাভপুরের ইন্দাস প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।

Advertisement

স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলে ১৫৪ জন পড়ুয়ার জন্য একটিমাত্র নলকূপ রয়েছে। অভিযোগ, মাসছয়েক ধরে সেই নলকূপের জল পানের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। স্কুল চত্বরের বাইরের নলকূপ থেকে জল আনতে যেতে হয় পড়ুয়াদের। আশঙ্কায় থাকেন শিক্ষক, অভিভাবকেরা। কারণ ওই স্কুলের সামনেই লাভপুর-বোলপুর সড়ক৷ সেই রাস্তা দিয়ে সবসময় চলে বাস, ট্রাক।

স্কুলের শিক্ষকেরা জানান জানান, ব্যস্ত ওই রাস্তা পেরিয়েই পড়ুয়াদের জল আনতে যেতে হয়। আশঙ্কা থেকা তা-ই। সমস্যা হয় মিড-ডে মিল রান্নার জল নিয়েও। তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসনকে বারবার জানিয়েও লাভ হয়নি। তাঁরা আরও জানান, স্কুলের সামনেই রয়েছে নিকাশি নালা। নালাটি নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না বলে অভিযোগ। প্রায়ই নোংরা জলে উপচে রাস্তায় উঠে আসে। তা পেরিয়েই স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। দুর্গন্ধ টেকা যায় না। অভিযোগ, স্কুলে রয়েছে শৌচাগারের সমস্যাও।

Advertisement

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, পরিবেশমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী সহ ৭ সদস্যের শিশু সংসদ গঠিত হয়েছে সেখানে। নিয়ম অনুযায়ী, মিড-ডে মিল, পানীয় জল-সহ বিভিন্ন সমস্যার ব্যাপারে পড়ুয়াদের শিশু সংসদের দৃষ্টি আর্কষণ করতে হয়। শিশু সংসদের প্রতিনিধিরা ওই সমস্যা সমাধানের আবেদন জানায় শিক্ষকদের।

সম্প্রতি স্কুলের পড়ুয়ারা পানীয় জল, নিকাশি নালা সংস্কার, শৌচাগার-সহ বিভিন্ন সমস্যার কথা শিশু সংসদকে জানিয়েছিল। পরে শিশু সংসদের প্রতিনিধিদের মুখে সে সব কথা জেনে বিড়ম্বনায় পড়েন শিক্ষকেরা। তাঁরা জানান, প্রশাসনের দৃষ্টি আর্কষণ করেও সমাধান হয়নি। সে জন্য শিশু সংসদের প্রতিনিধিদের সরাসরি পঞ্চায়েতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।

শুক্রবার শিশু সংসদের প্রধানমন্ত্রী চতুর্থ শ্রেণির প্রীতম মণ্ডল, স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুস্মিতা ঘোষ, শিক্ষা ও পরিবেশমন্ত্রী তৃতীয় শ্রেণির কুশল মণ্ডল, খাদ্যমন্ত্রী বন্দনা দাসদের নিয়ে ইন্দাস পঞ্চায়েতে যান শিক্ষকেরা। পঞ্চায়েতের উপপ্রধান কৃষ্ণা চৌধুরীকে স্কুলের সমস্যার কথা জানায় শিশু সংসদের মন্ত্রীরা।

উপপ্রধানকে নিজেরাই স্কুলের সমস্যার কথা জানাতে পেরে উচ্ছ্বসিত মন্ত্রীরা। কেউ কেউ বলে, ‘‘প্রথমে একটু ভয়-ভয় করছিল। পরে তা কেটে যায়। উপপ্রধানের সঙ্গে কথা বলে ভাল লাগল। কাজ হলে আরও ভাল লাগবে।’’

খুদে মন্ত্রীদের মুখে সমস্যার কথা শুনে আপ্লুত কৃষ্ণাদেবী সকৌতুকে বলেন, ‘‘বাঘা বাঘা মন্ত্রীরা সব দাবি জানাতে এসেছেন। আর অবহেলা নয়। যত দ্রুত সম্ভব ওদের দাবি পূরণের চেষ্টা করব।’’

স্কুলের প্রধান শিক্ষক মিহির শীল বলেন, ‘‘আজকের পড়ুয়ারাই দেশের ভবিষ্যৎ। কী করে প্রশাসনের কাছে নিজেদের সমস্যার কথা তুলে ধরতে হয়, তা শেখাতেই ওই পদক্ষেপ করা হয়।’’ লাভপুর দক্ষিণ চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক সব্যসাচী ঘোষ বলেন, ‘‘ইতিবাচক পরিকল্পনা। এ ভাবে দাবি জানানোর মাধ্যমে পড়ুয়াদের আত্মবিশ্বাস অর্জনের পাশাপাশি নিজেকে উপস্থাপন করার অভ্যাস গড়ে উঠবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন