ফল খেয়ে বীজ পুঁতল খুদেরা

গাছ থেকে ফল। ফল থেকে বীজ। সেই বীজ থেকেই আবার গাছ... এই চক্রের কথা ওদের জানা ছিল। সেটাই হাতেকলমে করে দেখানোর সুযোগ এসে গেল বর্ষা, শিখা, সজল, অভিজিতদের কাছে। ‘ফল খাও, গাছ লাগাও’— কর্মসূচির মাধ্যমে। খয়রাশোলের পুতকা বিদ্যালয়ের এক ঝাঁক খুদে পড়ুয়া এখন মেতেছে তাতেই।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

খয়রাশোল শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৬ ০১:২৮
Share:

বীজ পোঁতার আগে। নিজস্ব চিত্র।

গাছ থেকে ফল। ফল থেকে বীজ। সেই বীজ থেকেই আবার গাছ...

Advertisement

এই চক্রের কথা ওদের জানা ছিল। সেটাই হাতেকলমে করে দেখানোর সুযোগ এসে গেল বর্ষা, শিখা, সজল, অভিজিতদের কাছে। ‘ফল খাও, গাছ লাগাও’— কর্মসূচির মাধ্যমে। খয়রাশোলের পুতকা বিদ্যালয়ের এক ঝাঁক খুদে পড়ুয়া এখন মেতেছে তাতেই। ছোটদের দিয়ে বৃক্ষরোপণের এমন উদ্যোগ লোককল্যাণ পরিষদের। সহযোগিতায় স্কুল শিক্ষক ও অভিভাবকেরা।

খয়রাশোলের লোকপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ওই প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। সাকুল্য ৪২ জন পড়ুয়া। মঙ্গলবার অন্য দিনের মতোই স্কুলে এসেছিল ওরা। আর পাঁচটা দিনের মতো প্রথমেই পঠনপাঠনে না গিয়ে একটু অন্য ভাবে শুরু এ দিনের স্কুল। আকাশি রঙের জামা ও নীল প্যান্ট বা স্কার্ট পরা স্কুল পড়ুয়াদের হাতে প্রথমেই শালপাতার বাটিতে নানা ফল ধরিয়ে দেওয়া হয়। মজা করে পাকা আম, কাঁঠাল, খেজুর খেয়ে তারপর কাজে লেগে পরা!

Advertisement

কী কাজ? নাহ্, ফলের মধ্যে থাকা বীজগুলিকে বের করা। তারপরে স্কুল চত্বরের এক খণ্ড ঘেরা জমিতে ছোট ছোট প্লাস্টিক প্যাকেটে রাখা মাটিতে সেই বীজ যত্ন করে পুঁতে দেওয়া। এরপর দিতে হল জল। একে একে সকলেই করল সেই কাজ।

কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশনের একটি যোজনা রূপায়নের দায়িত্বে রয়েছে লোককল্যাণ পরিষদ। সংস্থার সদস্যেরা জানালেন, বর্ষার সময়টুকু বাদ দিলে ঝাড়খণ্ড ঘেঁষা পুতকা গ্রামে যেতে গেলেই গাছপালাহীন ধূ ধূ প্রান্তর, শুষ্ক আনাবাদি জমি দেখে তাঁদের মন উদাস হয়ে যেত। সেই পরিবেশ বদলে দিতেই এমন ভাবনা। বছর পাঁচেক ধরে মহিলা স্বনির্ভর দলের সদস্যদের বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য এনে দেওয়ার কাজ করছে ওই সংস্থা।

সংস্থার কর্মী সুমনা মজুমদার জানালেন, গ্রামের তিনটি স্বনির্ভর দলের সঙ্গে কাজ করছে তাঁদের সংস্থা। কেঁচো সার তৈরি করে জৈব পদ্ধতিতে কী করে আরও ভাল ভাবে চাষ সম্ভব তা শিখেছেন স্বনির্ভর দলের মহিলা সদস্যরা। এ বার তাদের মনে হয় গাছ লাগানোর ব্যাপারে ছোটদের উৎসাহিত করতে পারলে পরিবেশ যেমন বাঁচবে, তেমনি ছোটদের মধ্যে দায়িত্ববোধও তৈরি করা যাবে। সেই ভাবনা থেকেই এমন উদ্যোগ।

ঠিক হয়েছে, স্কুল চত্বরে লাগানো বীজ থেকে তৈরি চারা একটু বড় হলে নিজেদের বাড়ির উঠানে নিয়ে গিয়ে তা লাগাবে শিশুরা। বাকি গাছগুলির একটা অংশ স্কুলেই থাকবে। ওরাই সেগুলির যত্ন করবে।

এমন ভাবনাকে স্বাগত জানিয়েছেন পুতকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুদীপ্ত সিংহ, সহ শিক্ষক নারায়ণচন্দ্র মণ্ডলেরা। তাঁরা বলছেন, ‘‘ছোটোরা খুব উৎসাহী। ওরা ভালবেসেই সব করেছে। নিজেদের হাতে সব করেছে বলে গাছেদের প্রতি ভালবাসা তৈরি হবে। বাড়বে দায়িত্ব।’’ এমন কাজে বাড়ির ছেলেমেয়েদের সামিল করা হয়েছে জেনে খুশি অভিভাবকরা হাবল মাল, অশোক বাউড়ি, গীতারানি মাল, সুমিত্রা মালেরাও।

কী বলছে খুদে পড়ুয়ারা? বর্ষা মাল, অভিজিত বাউড়ি, সজল মাল, প্রিয়া মালেদের কথায়, ‘‘আগে এমন করে কখনও গাছ লাগাইনি। এ বার প্রতিদিন স্কুলে এসে ওদের যত্ন করব। অপেক্ষা করব চারা বের হওয়ার।’’

এরপরেও একটা কিন্তু রয়েছে। সেটা হল, এই স্কুলের সীমা প্রাচীর নেই। নেই মূল গেটও। সেই সুযোগে ঢুকে পড়ে গরু-ছাগল। এই পরিস্থিতিতে গাছ রক্ষা করাটা রীতোমতো চ্যালেঞ্জের, জানাচ্ছেন শিক্ষক-অভিভাবকেরাই। তবুও কিছু একটা করে দেখানোর স্বপ্ন ওদের চোখেমুখে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন