হাজার ভাঙাতে কমিশন পঞ্চাশ

বিশৃঙ্খলা এবং ধন্দের চরমে পৌঁছেছে কেনাবেচা। কোথাও মাছ বিক্রেতা ৫০০ টাকার নোট নিচ্ছেন, কোথাও ক্রেতা ১০০ টাকা দিতে না পারায় মাছ ওজন করেও থলিতে উঠছে না। সব্জি বিক্রেতারা অবশ্য কোথাও ৫০০ টাকা নিচ্ছেন না। বুধবার সকালে জেলার বিভিন্ন খুচরো, পাইকারি বাজার ঘুরে এমনই অভিজ্ঞতা হয়েছে আনন্দবাজারের প্রতিবেদকদের।স্ত্রী-র চিকিৎসার জন্য বাইরে যাবেন। বুধবার সকালে তাই দুবরাজপুর স্টেশনে এসে সংরক্ষিত টিকিট কাউন্টারে লাইন দিয়েছিলেন বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বর ঘেঁষা গোবিন্দপুরের বাসিন্দা দিলীপ চক্রবর্তী।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
Share:

৩) খুচরো নিয়ে হিসাব সাঁইথিয়ায়। —নিজস্ব চিত্র।

স্ত্রী-র চিকিৎসার জন্য বাইরে যাবেন। বুধবার সকালে তাই দুবরাজপুর স্টেশনে এসে সংরক্ষিত টিকিট কাউন্টারে লাইন দিয়েছিলেন বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বর ঘেঁষা গোবিন্দপুরের বাসিন্দা দিলীপ চক্রবর্তী। আধার কার্ড-সহ যেই টিকেটের জন্য প্রয়োজনীয় ৫০০, ১০০০-এর নোট বুকিং ক্লার্ককে দিয়েছেন, তখনই তিনি বলে উঠলেন, ‘‘এ ভাবে হবে না, আগে পরিচয় পত্রের জেরক্স কপি নিয়ে আসুন। তার উপর নিজের ফোন নম্বর, টাকার যাবতীয় তথ্য লিখে দিন। তাহলেই পাঁচশো হাজারের নোট নেব!’’

Advertisement

প্রায় আধ কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে আধার কার্ড জেরক্স করিয়ে এনে তবেই এ দিন টিকিট হাতে পান দিলিপবাবু।

এ কেবল একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়। বুধবার গড়পড়তা জেলাজুড়ে নাকালের ছবি ছিল এ রকমই। সব্জি বাজার, মাছ বাজার, শপিং মল, স্টেশন— সর্বত্র ছিল ৫০০ ও হাজার টাকার নোট নিয়ে সরগরম। কোথাও কোথাও চোখে পড়ে ৫০০, ১০০০-এর নোট ৫০ টাকা ছাড় দিয়ে ভাঙিয়ে নেওয়ার দৃশ্যও।

Advertisement

ঝোপ বুঝে

কালো টাকা নেই। নেই জাল টাকাও। কিন্তু সংবাদ মাধ্যমে ঘোষণাটি শোনার পরে আর রাতে ঘুমোতে পারেননি ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়ার অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক শিবপ্রসাদ ঘোষ। কর্মসূত্রে দুই ছেলেই বাইরে থাকেন। বাড়িতে অসুস্থ স্ত্রী। বৃহস্পতিবারই তাঁকে কান্দিতে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য নাম লেখানো আছে। টিভিতে ৫০০/১০০০ টাকা নোট বাতিলের ঘোষণা তার মাথায় কার্যত বিনা মেঘে বজ্রপাতের সামিল হয়েছে। ভোর ভোর পাড়ার মোড়ে নোটগুলি নিয়ে ‘একে-তাকে’ ধরে প্রতি হাজারে ৫০ টাকা কমিশন দিয়ে ১০০ টাকার নোট যোগাড় করেছেন। শিববাবুর দাবি, ‘‘কি করব, কমিশন দেওয়া ছাড়া উপায়ই বা কি! ডাক্তারের সঙ্গে ডেট হয়ে আছে। বিভিন্ন পরীক্ষাও করাতে হবে। এখন কোথায় পাবো টাকা। তাছাড়া এখন ব্যাঙ্কে জমা দিয়ে টাকা ফেরত পেতে প্রথম দিকে যে ঝামেলা পোহাতে হবে তাতে কমিশন দিয়ে টাকা জোগাড় করা অনেক ভালো।’’

সিউড়ির পাম্পে তেল নেবার হিড়িক।

পাম্পে লাইন

জেলার প্রতিটি শহরেই পাম্পে ভিড় ছিল এ দিন। কেন না সরকারি নির্দেশে পাম্পে এ দিন ৫০০, ১০০০ টাকার নোট নেওয়া হয়। কোথাও কোথাও ব্যতিক্রমও ছিল। সকালে সিউড়ির একটি পাম্পে পেট্রোল কিনতে গিয়েছিলেন কানন গড়াই নামে এক সরকারি কর্মী। নেবেন ২০০ টাকার তেল। দিয়েছিলেন ৫০০ টাকার নোট। মেলেনি তেল। কারণ খুচরো নেই! হেতমপুরের একটি পাম্প কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘‘পুরো টাকার তেল নিলে অসুবিধা নেই। কিন্তু এত খুচরো পাব কোথায়।’’ বিতর্ক এড়াতে কিছু পাম্প বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যেমন রামপুরহাটের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন পাম্পটি।

থলি ফাঁকাই

বাড়িতে রান্নার জন্য প্রয়োজন সব্জি বাজার। মুদিখানার জিনিস থেকে বিদ্যুতের বিল, বাসভাড়া দেওয়া সব ক্ষেত্রেই চূড়ান্ত দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে এ দিন সাধারণ মানুষকে। রামপুরহাটের বধূ সুমিত্রা অগ্রবাল দুটি পাঁচশো টাকার নোট নিয়ে বাজারে বেরিয়েছিলেন। মেলেনি খুচরো। তিনি বলছেন, ‘‘এভাবে সরকার রাতারাতি নোট বাতিল করে দিল। এখন কী যে করি।’’ সব্জি বা মাছের কেনা বেচা নিয়ে বিস্তর সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে ক্রেতা বিক্রেতা উভয়কেই।

মঙ্গলবার রাতে শান্তিনিকেতনে একটি এটিএমের সামনে দীর্ঘ লাইন।

বেড়াতে গিয়ে

বারগ্রামের শ্যামল ঘোষ, লোকপাড়ার বিকাশ দে, বটনগরের প্রহ্লাদ ঘোষরা বিপদে পড়েছেন এমন পরিস্থিতিতে। দিন দশেক ধরে চিকিৎসার জন্য বেঙ্গালুরুতে রয়েছেন তাঁরা। এ দিন রাতেই তাঁদের ফেরার ট্রেন। ফেরার টিকিট আগে থেকেই কাটা ছিল। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় হোটেলে বিল মেটাতে গিয়ে। ফোনে তাঁরা জানান, হোটেলের বিল মেটানোর জন্য মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এটিএম থেকে প্রয়োজন মতো টাকা তুলেছিলাম। সবই ৫০০ টাকার নোট। কিন্তু হোটেল মালিক সাফ জানিয়ে দেয় ৫০০/১০০০ টাকার নোট নেবে না!

থমকে লেনদেন

সামনে বিয়ের মরসুম। তবু কাপড়ের দোকান ফার্ণিচারের দোকানের মতো জিনিস পত্র দোকানে এ দিন ভিড় ছিল না বললেই হয়। ‘‘বড় টাকার লেন দেন হবে কীভাবে’’— বলছেন সাঁইথিয়ার বস্ত্র ব্যবসায়ী মাহবীর প্রসাদ পাটরিয়া। সমস্যায় পড়েছেন কৃষিকেরাও রবি শষ্য চাষের জন্য এখন প্রয়োজন বীজ ও সারের। কিন্তু কেউ তো ৫০০, ১০০০ নোট নিচ্ছেন না। হিমঘর থেকে আলু ছাড়াতে গিয়েও সমস্যায় পড়েছেন সাঁইথিয়া ময়ূরেশ্বরের অনেক চাষি। তেমনই একজন ময়ূরেশ্বরের বুঁইচা গ্রামের চাষি তরণী মণ্ডল। বিদ্যুৎ বিল জামা দিতে গিয়ে একই ফাঁপরে পড়তে হয়েছে গ্রাহকদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement