তদন্ত: রাইপুরের শ্যামসুন্দরপুরে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা। নিজস্ব চিত্র
গ্রামের একটি জায়গা নিয়ে পুরনো বিবাদের জের গড়াল দু’পক্ষের সংঘর্ষে। অভিযোগ উঠল গুলি চালানো ও বোমাবাজির। ভাঙচুর হয়েছে একটি গাড়ি। একটি পানের দোকানেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাইপুর ব্লকের বারিকুল থানার শ্যামসুন্দরপুর গ্রামের ঘটনা। জখম দু’জনের চিকিৎসা চলছে। এসডিপিও (খাতড়া) বিবেক বর্মা বলেন, ‘‘শ্যামসুন্দরপুর গ্রামের ঘটনায় দু’পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। সেগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ তিনি জানান, ঘটনায় দু’জনকে আটক করা হয়েছে। গ্রামে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই গ্রামের একটি জমির মালিকানা নিয়ে গ্রাম ষোলোআনার সঙ্গে একটি পরিবারের ঝামেলা রয়েছে। ওই পরিবারের সদস্য সাহেব সিংহের দাবি, তাঁর দাদু লক্ষ্ণণ সিংহ দানপত্র করে গ্রাম ষোলোআনাকে কিছু জমি দিয়েছিলেন। সাহেবের দাবি, ওই জমির গা-ঘেঁষে তাঁদের রায়তি জমি রয়েছে। গন্ডগোল সেই জমি নিয়েই। জমির মালিকানা নিয়ে আদালতে মোকদ্দমাও চলছে। সাহেব বলেন, ‘‘কিছু দিন আগে ওই জমিতে প্যান্ডেল করার জন্য বাঁশ ফেলা হচ্ছিল। কিন্তু জমিটা ষোলোআনার নয়। আমাদের নিজস্ব। তাই বাধা দিই। তার পরেই ঝামেলা বাড়ে।’’
গত ১৪ মে ওই পরিবারের তরুণ সিংহ স্বপন রায় নামে এক গ্রামবাসীকে রড দিয়ে মারধর করেন বলে অভিযোগ। গুরুতর জখম অবস্থায় স্বপন কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। স্বপনের স্ত্রী শিবানী রায়ের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে বারিকুল থানার পুলিশ গ্রেফতার করে তরুণকে। এখন তিনি বাঁকুড়ায় জেল হাজতে রয়েছেন।
গ্রামবাসীর একাংশের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার সিংহ পরিবার দুষ্কৃতীদের দিয়ে জমি ‘দখল’ করার চেষ্টা করছিল। রাত ৮টা নাগাদ একটি গাড়ি ও তিন চারটি মোটরবাইকে একদল দুষ্কৃতী গ্রামে ঢোকে। অভিযোগ, বাধা দিতে গেলে গ্রামবাসীকে লক্ষ করে গুলি, বোমা ছোড়ে তারা।
দুষ্কৃতীদের ছোড়া তরল কিছুতে বুবাই নারাদেও নামে এক যুবক ও জয়দীপ সিংহ নামে এক কিশোরের গা পুড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল রাইপুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। পরে বুবাইকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে রেফার করা হয়। তবে কী থেকে বুবাই দগ্ধ হয়েছেন সে ব্যাপারে কিছু বলতে পারেননি বিএমওএইচ (রাইপুর) কুণাল চক্রবর্তী। বুবাই বলেন, ‘‘সন্ধ্যায় চেঁচামেচি শুনে বাইরে বেরিয়ে এসেছিলাম। তার পরেই আমার উপরে আক্রমণ হয়।’’
এ দিকে, যে পরিবারের সঙ্গে ঝামেলা, সেটির সদস্য সাহেব তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলছেন, ‘‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমার এক কাকিমার ভাই গাড়ি নিয়ে তাঁকে দেখতে এসেছিলেন। সেই সময়ে গ্রামের কিছু লোকজন গাড়ির উপরে চড়াও হয়।’’ তাঁর অভিযোগ, সেই সময়েই বোমাবাজি হয়। চলে গুলি। সিংহ পরিবারের একটি একটি পানের দোকানে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সাহেবের বক্তব্য, ‘‘আতঙ্কে পুরুষরা সবাই বাড়ি ছেড়েছি। মিথ্যা নাটক করে আমাদের ঝামেলায় ফেলার চেষ্টা চলছে।’’
গ্রামবাসীর একাংশের পাল্টা দাবি, বাইরে থেকে আসা লোকজন সিংহদের বাড়িতে ঢুকে পড়লে বাইরে থেকে ঘিরে রেখে তাঁরাই পুলিশে খবর দিয়েছিলেন। রাতে বারিকুল থানা থেকে পুলিশ বাহিনী গিয়ে বাড়ির লোকজনকে উদ্ধার করে। দু’জনকে আটক করা হয়।
এসডিপিও বলেন, ‘‘গ্রামে বোমাবাজির যে অভিযোগ উঠেছে, সেটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’ গ্রামের পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন।