প্রশ্নের মুখে ডেটা-ব্যাঙ্ক

শিল্পীর নাম তুলতে গড়িমসির অভিযোগ

সম্প্রতি বোলপুরে এসে মুখ্যমন্ত্রী লোকশিল্পীদের ডেটা-ব্যাঙ্ক তৈরির কথা জানিয়েছেন। সে প্রস্তাবকে আগেই সাধুবাদ জানিয়েছেন লোকশিল্পীরা।

Advertisement

মহেন্দ্র জেনা

বোলপুর শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:১৩
Share:

সম্প্রতি বোলপুরে এসে মুখ্যমন্ত্রী লোকশিল্পীদের ডেটা-ব্যাঙ্ক তৈরির কথা জানিয়েছেন। সে প্রস্তাবকে আগেই সাধুবাদ জানিয়েছেন লোকশিল্পীরা। কিন্তু, এই আবহেই তাঁদের একাংশ সচিত্র পরিচয় পত্র দেওয়া নিয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে গড়িমসির অভিযোগ তুললেন। তাঁদের প্রশ্ন, নিয়ম মেনে মহকুমা তথ্য সংস্কৃতি দফতরে আবেদন করার পরেও যদি পরিচয়পত্র না মেলে, তা হলে ডেটা-ব্যাঙ্কে নাম উঠবে কী করে? সেক্ষেত্রে তালিকাও অসম্পূর্ণ থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তাঁদের অভিমত!

Advertisement

সচিত্র পরিচয়পত্রের সঙ্গে ডেটা-ব্যাঙ্কের সম্পর্ক কোথায়? জেলার তথ্য সংস্কৃতি আধিকারিক তাপস ভাওয়েল জানাচ্ছেন, বীরভূমে নথিভুক্ত লোকশিল্পীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার। এঁদের সকলের নামই ডেটা-ব্যাঙ্কে উঠবে। তাঁর কথায়, ‘‘সেক্ষেত্রে কারও পরিচয় পত্র না থাকলে ডেটা-ব্যাঙ্কে নাম ওঠার কথা নয়।’’ তবে লোকশিল্পীদের একাংশের তোলা গড়িমসির অভিযোগ মানতে চাননি তিনি। তথ্য সংস্কৃতি দফতরের অন্য একটি সূত্রে অবশ্য জানাচ্ছে, জেলায় লোকশিল্পীর প্রকৃত সংখ্যাটা সাড়ে পাঁচ হাজারের থেকেও বেশি। কেননা, শিল্পীদের কেউ নিজেরাই গড়িমসি করে আবেদন করেননি। আবার আবেদন করার পরেও প্রশাসনের গড়িমসিতেই শিল্পীর পরিচয় পত্র দেওয়া হয়নি, তেমনটাও হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দফতরেরই এক কর্তা মানছেন, ‘‘বেশ কিছু আবেদনপত্র দফতরে জমা হয়েছে। নানা কাজে এত দিন সে সব নজর দেওয়া হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে অবশ্য সে কাজ শুরু হয়েছে।’’

লোকশিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এমন অনেকে রয়েছেন, যাঁরা বহু মাস আগেই পরিচয়পত্রের জন্যে আবেদন করেছেন। মহকুমা তথ্য সংস্কৃতি দফতরে গিয়ে আবেদন, নিবেদনও করেছেন। যেমন, বোলপুরের শুঁড়িপাড়ার বাসিন্দা ৭৮ বছরের বিশ্বনাথ দাস বাউল। তাঁর পরিচয়পত্র নেই। ফলে ভাতাও পান না। আবার নতুন ডেটা-ব্যাঙ্কেও তাঁর নাম থাকার কথা নয়। বীরভূমের লোকশিল্পীদের অন্যতম দেবদাস বাউল, বিশ্বনাথ দাস বাউলদের কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগ সাধুবাদের। কিন্তু তা রূপায়ণ করতে গেলে প্রশাসনের তরফে যতটা সক্রিয়তা থাকার কথা, ততটা দেখা যায় না। দরকার সদিচ্ছাও। তা না হলে, মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ শুধুমাত্র ঘোষণা হয়েই থেকে যাবে।’’ নিয়ম হল, সচিত্র পরিচয় পত্রে নাম তোলার জন্যে মহকুমা তথ্য সংস্কৃতি আধিকারিকের কাছে আবেদন করতে হয়। তারপরে পুরসভা কিংবা পঞ্চায়েতের মাধ্যমে যাচাই তবে শিল্পীর পরিচয়পত্র মেলে। সম্প্রতি জয়দেবে বাউল ও লোক উৎসবে বাউল অ্যাকাডেমির শিলান্যাস করে বাউল তো বটেই অন্য শিল্পীদেরও কিছুটা আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য দিতে মুখ্যমন্ত্রী ডেটা-ব্যাঙ্ক তৈরির কথা জানিয়েছিলেন। বিশেষ করে যাঁরা দুঃস্থ, সরকারি-বেসরকারি কোনও মঞ্চেই ডাক পান না, তাঁদের পাশে দাঁড়াতে ওই ভাবনা।

Advertisement

আবার ভাতার টাকা না মেলার অভিযোগও রয়েছে। যেমন, শুঁড়িপাড়ারই দেবদাস বাউল। নিজেই জানাচ্ছেন, জুলাই মাসের পর থেকে আর ভাতা পাননি। জেলার তথ্য সংস্কৃতি আধিকারিক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘অনেক সময় অ্যাকাউন্ট নম্বর ভুল থাকে তখন টাকা পেতে সমস্যা হয়। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে দেখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন