অবরুদ্ধ বিষ্ণুপুরের রাস্তাও। ছবি: অভিজিৎ সিংহ, পৌলমী চক্রবর্তী ও শুভ্র মিত্র
হুল দিবসে সড়ক ও রেল অবরোধের হুঁশিয়ারী আগেই দিয়েছিল ‘ভারত জাকাত মাঝি মাড়ওয়া পারগানা মহল’। শুক্রবার তাদের জেলা জুড়ে ওই কর্মসূচিতে পরিবহণ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে গেল। সকাল থেকে অনেক জায়গাতে বিকেল ও কোথাও আবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অবরোধ গড়িয়েছে। বান্দোয়ানে মানবাজার মহকুমা স্তরের হুল দিবসের অনুষ্ঠান ছিল। মানবাজারের বিধায়ক তথা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু ওই অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ছিলেন। মানবাজার ও বোরোর কয়েকটি জায়গায় অবরোধ থাকায় মন্ত্রীকে পুলিশ ঘুরপথে বান্দোয়ানে নিয়ে যায়।
পুরুলিয়া জেলায় সাবধানী বাস মালিকেরা এ দিন অবশ্য রাস্তায় বাস নামাননি। কয়েকটি এলাকায় সরকারি বাস পথে নেমেছিল। কিন্তু তা আটকে দেওয়া হয়। মাঝি মাড়ওয়া পারগানা মহল জানিয়েছে, পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডির ছাতনি, কোটশিলা বাজার, রঘুনাথপুরের রাঙামাটি, নিতুড়িয়ার হরিডি, সাঁতুড়ির বেনাগড়িয়া, বরাবাজার, বান্দোয়ানের কুইলাপালে, বোরোর ডাঙরডি মোড়, মানবাজারের রাইসমিল মোড় ও হুড়া থানার লালপুর মোড়ে অবরোধ হয়। বাঁকুড়া শহরের কাঠজুড়িডাঙা মোড়, বেলিয়াতোড়, গঙ্গাজলঘাটি, খাতড়া, বাঁকাদহের বৈতল মোড়ে, সোনামুখী-বিষ্ণুপুর রাস্তায় শিবেরবাঁধে, কোতুলপুরে নেতাজি মোড়ে, পাত্রসায়রের কাঁকরডাঙা ও ইন্দাস-সহ জেলার প্রায় ৩৪টি জায়গায় যানবাহন আটকে দেওয়া হয় বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
সাইকেল বা মোটরবাইক নিয়ে হেঁটে অবরোধস্থান পার হতে বাধ্য করা হয়। তির, ধনুক, বর্শা, টাঙ্গি প্রভৃতি আদিবাসীদের চিরাচরিত অস্ত্র হাতে তাঁদের অবরোধে নেমেছিলেন।
ট্রেন আটকে দেওয়া হয় দুই জেলার বিভিন্ন জায়গায়। আদ্রা, জয়পুর থানার গড় ধ্রুবেশ্বরে, সাঁতুড়ির মধুকুণ্ডা, ছাতনা, পিয়ারডোবা, পাত্রসায়র স্টেশনে প্যাসেজ্ঞার ও দূরপাল্লার ট্রেন আটকে দেওয়া হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেনে আটকে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হন। সব জায়গাতেই আটকে পড়া লোকজনের প্রশ্ন, অবরোধস্থলে পুলিশ ও রেলপুলিশ থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে এতক্ষণ যাত্রীদের ভোগান্তির শিকার হতে হল?
আন্দোলনকারীরা জানাচ্ছেন, জল জমি ও জঙ্গলের অধিকার সুনিশ্চিত করতে, আদিবাসীদের উপর হেনস্থা ও অত্যাচারের প্রতিবাদে, সাঁওতালি মাধ্যমে অলচিকি লিপিতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিকাঠামো উন্নয়নের দাবিতে তাঁরা অবরোধ করেন। মাঝি মাড়ওয়া পারগানা মহলের পুরুলিয়া জেলার মুখপাত্র রতনলাল হাঁসদার দাবি, ‘‘যাত্রীরা দাবিগুলির মান্যতা দিয়েছেন। অ্যাম্বুল্যান্স ও জরুরি পরিষেবার গাড়ি ছাড়া হয়েছে।’’