Coronavirus

গণ্ডী কেটে ভিড়ে রাশ

২১ দিন টানা লকডাউনের ঘোষণা হতেই এ দিন সকাল থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহের জন্য  মুদিখানা, ওষুধ, আনাজের দোকানে লম্বা লাইন পড়ে যায়। লাইন ছিল ব্যাঙ্কেও।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২০ ০৯:০৮
Share:

নিয়ন্ত্রণ: গোলক এঁকে বাসিন্দাদের নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড় করাচ্ছেন পুলিশকর্মীরা। বুধবার বোলপুরে। নিজস্ব চিত্র

লকডাউন তো কী! যেন ছুটির মেজাজ!

Advertisement

প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহের নামে বাজারে ভিড়, চায়ের দোকান, পাড়ার মোড়, রক, নাটমন্দির, পার্কের পাঁচিলে ক্লাবের দাওয়ায় আড্ডা। অকারণ বাইকে চড়ে হাওয়া খাওয়ার হিড়িক। বেশ কিছু মানুষের মধ্যে সচেতনতার এমন দেখা গিয়েছিল মঙ্গলবার।

বাজার ও রাস্তায় ভিড়ের সেই বহর দেখে প্রমাদ গুনেছিল পুলিশ-প্রশাসন। ভিড় হটাতে লাঠ্যৌষধিও প্রয়োগ করেছিল। জেলাজুড়ে ‘বেহুঁশ’ জনতার হঁশ ফেরাতে সোমবার বিকেল থেকে মঙ্গলবার দিনভর তাড়া করে বেড়ানো সঙ্গেই ছিল লাঠিপেটা । তাতেই ছবিটা বদলেছে বুধবার সকাল থেকে। অনেকটাই শৃঙ্খলা ফিরেছে পথেঘাটে। লোকজন বেরিয়েছে ঠিকই, বাজারে-দোকানে ভিড়ও হয়েছে। তবে মঙ্গলবারের তুলনায় তা অনেক কম।

Advertisement

চাল, ডাল, আলু, তেল, আনাজ থেকে ওষুধ সংগ্রহের ব্যস্ততা এ দিনও ছিল জেলার প্রতিটি এলাকায়। ভিড় জমেছিল দোকানে দোকানে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ মেনে করোনা-সংক্রমণ থেকে বাসিন্দাদের দূরে রাখতে বিভিন্ন দোকানের সামনে এ দিন গণ্ডী কেটে দেন পুলিশকর্মী ও সিভিক ভলান্টিয়ারেরা। লক্ষ্মণরেখা অতিক্রম করে সীতাকে কী দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে হয়েছিল, সে কথাও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় ক্রেতাদের। সিউড়ি, দুবরাজপুর, কীর্ণাহার, বোলপুর, রামপুরহাট-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় এ দিন এই পন্থায় ভিড় সামলেছে পুলিশ। তার জন্য অবশ্য পুলিশকে সাধুবাদ দিচ্ছে আম জনতা।

২১ দিন টানা লকডাউনের ঘোষণা হতেই এ দিন সকাল থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহের জন্য মুদিখানা, ওষুধ, আনাজের দোকানে লম্বা লাইন পড়ে যায়। লাইন ছিল ব্যাঙ্কেও। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজনকে ন্যূনতম ১ মিটার দুরত্ব বজায় রাখার অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় দোকানের দরজা থেকে রাস্তা পর্যন্ত প্রায় আড়াই মিটার ব্যবধানে গোলাকার গণ্ডী কেটে দেওয়া হয়। ওই নিয়ম চালু হতেই শৃঙ্খলায় ফেরে বিক্রিবাটা।

লাভপুরের পূর্বসাহাপুরের শঙ্কর মণ্ডল, নানুরের ফেউগ্রামের রবীন্দ্রনাথ সাহারা বলছেন, “সবাই এক সঙ্গে হুড়োহুড়ি করায় জিনিসপত্র কিনতে অযথা দেরি হয়ে যাচ্ছিল। সংক্রমণের ভয়ও ছিল। গণ্ডীর লাইনে দাঁড়িয়ে সবদিক রক্ষা হচ্ছে।“ অন্য দিকে কীর্ণাহার বাজারের মুদি দোকানি আশিস দে, তুফান চন্দ্রের কথায়, “আমরা বারবার বলেও নিদ্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে ক্রেতাদের লাইনে দাঁড় করাতে পারিনি। ভিড়ের চাপে আমাদের সমস্যা হচ্ছিল। পুলিশ গণ্ডী কাটায় বিশৃঙ্খল অবস্থাটা ঘুচেছে।“ শান্তিনিকেতনের ওষুধ ব্যবসায়ী মহাবীর পাল বলেন, “আমরা জরুরি পরিষেবার আওতায়। তাই আমাদের দোকান খুলে রাখতে হচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হোক, সেটা আমরাও চাই। পুলিশের এ ধরনের উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি।’’

মহম্মদবাজার থানার পক্ষ থেকেও প্রতিটি মুদি, রেশন দোকান, আনাজ এমনকি ওষুধের দোকানের সামনে চুন দিয়ে দু’হাত অন্তর একটি করে গোলক এঁকে দেওয়া হয়। এলাকার মানুষ প্রয়োজনীয় দ্রব্য ওই গোলের মধ্যে দাঁড়িয়ে একে একে এগিয়েই কিনেছেন। শান্তিনিকেতন ও বোলপুর পুলিশের উদ্যোগেও চক দিয়ে জায়গা চিহ্নিত করে দেওয়া হয়। বোলপুর-শান্তিনিকেতন মিলিয়ে প্রায় ১২ থেকে ১৫টি অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দোকানে পুলিশের পক্ষ থেকে এই ধরনের ব্যবস্থা করা হয়।

করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় সোমবার বিকেল ৫টা থেকে রাজ্যের বিভিন্ন অংশের পাশাপাশি গোটা বীরভূম জেলাতেই ‘লক-ডাউন’ ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার রাত থেকে গোটা দেশ জুড়ে লকডাউনের ঘোষণা করেছেন ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। কিন্তু মারণ ভাইরাস কোভিড-১৯ রুখতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং নিজেদের গৃহবন্দি রাখা আবশ্যিক, সেটাই বোঝানো যাচ্ছিল না সাধারণ মানুষের বড় অংশকে। সেটা আটকাতেই মঙ্গলবার শক্তিপ্রয়োগের রাস্তায় হাঁটে পুলিশ।

সেই ওষুধে কাজও হয়েছে। আড্ডা বা অকারণ বাইক নিয়ে দাপিয়ে বেড়ানোর সাহস এ দিন তেমন ভাবে দেখাননি কেউ।

তবে, শুধু শক্তি প্রদর্শন নয়, সরকারি নির্দেশ মেনে চলার জন্য জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে একটি আবেদনও সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, এক বিপুল সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে মানবজাতি। সমস্যার কারণ মারণ করোনাভাইরাস। সংক্রমণ রুখতে যে সরকারি বিধিনিষেধ, সেটা অগ্রাহ্য করে রাস্তায় বেরোবেন না। নির্দেশ না মানলে সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে কঠোর পদক্ষেপ করবে জেলা পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন