Coronavirus

কোয়রান্টিন কেন্দ্র তৈরির গতিতে ধাক্কা  

জেলা প্রশাসনে সূত্রে জানা গিয়েছে, কঠিন পরিস্থিতি যাতে এ ভাবে আরও কঠিন না হয়ে পড়ে তাই ভেবেচিন্তে পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২০ ০৪:৩৩
Share:

ফাইল চিত্র

জেলার বিভিন্ন এলাকায় কোয়রান্টিন সেন্টার গড়ার প্রক্রিয়া কি ধাক্কা খাবে? শনিবার রাতে পাড়ুইয়ের তালিবপুরে গ্রামেরই দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ ও খুনের ঘটনার পর প্রশ্ন উঠে গেল।

Advertisement

জেলা প্রশাসনে সূত্রে জানা গিয়েছে, কঠিন পরিস্থিতি যাতে এ ভাবে আরও কঠিন না হয়ে পড়ে তাই ভেবেচিন্তে পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইতিমধ্যেই বীরভূমের জেলাশাসক প্রতিটি ব্লকের বিডিওদের একটি নির্দেশ পাঠিয়েছেন। সেই নির্দেশে বলা হয়েছে, এলাকার কোনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা ছাত্রাবাসে কোয়রান্টিন সেন্টার গড়ার ভবনা এখন নেওয়া যাবে না, যতক্ষণ না রাজ্য থেকে পরবর্তী নির্দেশ আসছে।

দেশের একাধিক বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণ চূড়ান্ত আকার নেবে। তখন যে কোনও এলাকার করোনা আক্রান্তকে কোভিড হাসপাতালে সরানো হলেও তাঁর পরিবার ও তাঁর সংস্পর্শে থাকা লোকজনকে সরাতে প্রচুর কোয়রান্টিন সেন্টার প্রয়োজন। রাজ্য ও জেলা প্রশাসনের তরফে সেই প্রস্ততিও চলছিল জোর কদমে। সিউড়ি ২ ব্লকের এমন প্রস্তাবিত কোয়রান্টিন সেন্টারের সংখ্যা ছিল ৬টি। সেটির মধ্যে ছিল তালিবপুরও। শনিবারের ঘটনা কাজের সেই গতিতে ধাক্কা দিল বলেই প্রশাসনের কর্তাদের দাবি।

Advertisement

জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলছেন, ‘‘জেলায় এই মূহূর্তে ২৫টি কোয়রান্টিন সেন্টার চালু রয়েছে। সেগুলির ১৯টি ব্লকের বিভিন্ন এলাকা ও পুর এলাকা রয়েছে। পরবর্তী ধাপে আরও ২৫টি কোয়রান্টিন সেন্টার তৈরি করা হচ্ছে। ভবিষ্যতের কথা ভেবে ধাপে ধাপে মোট ২০০টির মতো কোয়রান্টিন সেন্টার গড়ার ভাবনা রয়েছে।’’ তবে জেলাশাসক জানান, এলাকার মানুষ না চাইলে এলাকায় কোয়রান্টিন সেন্টার গড়া থেকে পিছিয়ে এসেছে প্রশাসন। যেমন রাজনগরে একটি কেন্দ্রও গড়া যায়নি। দুবরাজপুরপুর শহরে আপত্তি থাকায় অন্যত্র করা হয়েছে। আপত্তি উঠেছিল ইলামবাজারেও। জেলাশাসকের কথায়, ‘‘সিউড়ি ২ ব্লকের ওই গ্রামে কোয়রান্টিন গড়তে যে আপত্তি ছিল গ্রামের মানুষের, এ কথা আমাদের জানানো হয় নি। বিডিও

বিষয়টি জানার পরই গ্রামবাসীদের কথা দিয়েছিলেন ওখানে গড়া হবে না। কিন্তু তারপরও এমন একটা ঘটনা ঘটল।’’

প্রশাসনের কর্তারা জানাচ্ছেন, এখনও রাজ্যে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়নি। বিদেশি নাগরিক, বিদেশ থেকে ফেরা ব্যক্তি ও ভিন‌্ রাজ্য থেকে ফেরা ব্যক্তিদের মাধ্যমেই রোগ বেশি ছড়াচ্ছে। ভৌগোলিক ভাবে যেখানেই এই ধরনের মানুষ বেশি রয়েছেন, সেখানে সংক্রমণ বেশি ছড়াতে পারে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। সংক্রমণ ছড়াতে পারে আশঙ্কা করেই দুটি জেলা হাসপাতাল ও একটি মহকুমা হাসপাতেল আইসোলেশন ইউনিট গড়ার পাশাপাশি বোলপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতাল হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একই ধরনের হাসপাতাল গড়ার কথা সিউড়ি ও রামপুরহাটে।

প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের আক্ষেপ, ‘‘গোষ্ঠী সংক্রমণ আটকাতে এলাকায় এলাকায় কোয়রান্টিন সেন্টারগুলির যে গুরুত্ব রয়েছে সেটাই তো মানুষকে বোঝানো যাচ্ছে না।’’ এ ভাবে বাধাপ্রাপ্ত হলে কীভাবে কাজ হবে তা নিয়ে ধন্দে প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ। তাঁদের কথায়, ‘‘মানুষকে বোঝানো যাচ্ছে না এলাকায় কেউ করোনা আক্রান্ত হলে তাঁকে না হয় হাসপাতালে রাখা যাবে। কিন্তু তাঁর পরিবার ও সংস্পর্শে থাকা লোকজনকে কোথায় সরানো হবে? সবাই যদি বলে আমাদের এলাকায় করতে দেব না তাহলে সত্যিই যদি সংক্রমণ ছড়ায় তাহলে তা আর রোখা যাবে না।’’

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কোথায় কোথায় কোয়রান্টিন কেন্দ্র গড়া হবে ব্লক ভিত্তিক সেই জায়গাগুলি চিহ্নিত করে রাজ্যকে পাঠানোর জন্য ইতিমধ্যেই জিও ট্যাগিং হয়ে গিয়েছিল। সিউড়ি ২ ব্লকের তালিবপুর স্কুলটিরও জিও ট্যাগিং সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শনিবার রাতের ঘটনা সেই প্রক্রিয়াকে বেশ খানিকটা পিছিয়ে দিল বলে মানছে প্রশাসনের কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন